বাইরে বৃষ্টি। ছাউনির তলায় এগোচ্ছে প্রতিমা গড়ার কাজ। বর্ধমানে। ছবি: উদিত সিংহ।
অবিরাম বৃষ্টি। মাঝেমধ্যে দমকা হাওয়া। এমন দুর্যোগের আবহাওয়ায় পুজোর মুখে সমস্যায় পড়েছেন পূর্ব বর্ধমানের মৃৎশিল্পী, মণ্ডপ তৈরির কারিগর, তাঁতশিল্পী-সহ নানা পেশার মানুষ। বৃষ্টির ফলে আনাজ চাষও ক্ষতির মুখে পড়েছে বলে কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে।
বুধবার কালনা শহর ও আশপাশের প্রতিমা তৈরির জায়গাগুলিতে গিয়ে দেখা যায়, ত্রিপলের আচ্ছাদন দিয়ে ঘিরে, আলো জ্বালিয়ে কাজ চলছে। শিল্পীদের কপালে চিন্তার ভাঁজ। মৃৎশিল্পী পাঁচু দাস বলেন, ‘‘মেরেকেটে হাতে রয়েছে দিন দশেক। অথচ, অনেক কাজ এখনও বাকি। রোদের দেখা না মেলায় অনেক প্রতিমার গা কাঁচা রয়েছে। জলকাদায় দাঁড়িয়ে ঘণ্টার পরে ঘণ্টা কাজ করতে গিয়ে অনেকে অসুস্থও হয়ে পড়ছে।’’
নানা মণ্ডপের বাঁশ পোঁতার কাজ হয়ে গেলেও, কাপড় বাঁধা এখনও শুরু করতে পারেননি বলে জানান পুজো উদ্যোক্তারা। তাঁদের দাবি, বারবার বৃষ্টি বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। পূর্বস্থলীর মধ্য শ্রীরামপুরের এক পুজো উদ্যোক্তা অক্ষয় সাহা বলেন, ‘‘মণ্ডপ নিয়ে বেশ কিছু ভাবনা রয়েছে এ বার। তবে বৃষ্টি চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। বৃষ্টির জন্য কাজে আসতে পারছেন না মণ্ডপ তৈরির শিল্পীরা।’’
সাধারণত পুজোর সপ্তাহ দু’য়েক আগে থেকে শাড়ির চাহিদা বাড়ে। তাঁতিরাও নাওয়া-খাওয়া ভুলে শাড়ি বোনেন। কিন্তু তাতেও সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে বৃষ্টি ও ভিজে আবহাওয়া। তাঁতিরা জানান, রোদের দেখা না মেলায় শাড়ি শুকনো যাচ্ছে না। তাঁত বুনতেও সমস্যা হচ্ছে। পূর্বস্থলী ১ ব্লকের তাঁতশিল্পী হুমায়ুন শেখের কথায়, ‘‘স্যাঁতস্যাঁতে আবহাওয়াতে তাঁত-যন্ত্রে সুতো আটকে যায়। মঙ্গলবার কিছুটা কাজ করা গেলেও, বুধবার খারাপ আবহাওয়ার জন্য শাড়ি বুনতেই পারিনি।’’ টানা বৃষ্টির জেরে পুজোর বাজারও প্রায় ফাঁকা। জামাকাপড়ের দোকান খোলা থাকলেও, ক্রেতা বিশেষ চোখে পড়েনি। কালনার এক কাপড় দোকানের মালিক মুক্তি মজুমদার বলেন, ‘‘বৃষ্টি বন্ধই হচ্ছে না। কেউ বাড়ির বাইরে বেরোতে পারছেন না। ব্যবসা জমবে কী ভাবে!’’
টানা বৃষ্টিতে বেশ কিছু এলাকায় আনাজের জমিতে জল জমেছে বলে জানান চাষিরা। কৃষি দফতর জানায়, বৃষ্টির ফলে আমন চাষ ভাল হলেও, ক্ষতি হবে আনাজের। কালনা মহকুমা কৃষি আধিকারিক পার্থ ঘোষের কথায়, ‘‘লাগাতার বৃষ্টির কারণে এ বার শীতকালীন জলদি জাতের আনাজের চারা তৈরি করতে পারেননি চাষিরা। গত দু’দিনের বৃষ্টিতে আরও ক্ষতি
হবে। চারা তৈরি করে শীতকালীন আনাজ ফলাতে চাষিদের বেশ কিছুটা দেরি হবে।’’
বৃষ্টির জেরে ফুঁসতে শুরু করেছে ভাগীরথীও। কালনা খেয়াঘাটের ইজারাদারদের তরফে জয়গোপাল ভট্টাচার্য জানান, মঙ্গলবার রাতে দমকা হাওয়ার সঙ্গে ভীষণ ঢেউ দেখা যায়। বিপজ্জনক পরিস্থিতি দেখে রাত ১১টা থেকে প্রায় আড়াই ঘণ্টা লঞ্চ, ভেসেল যাতায়াত বন্ধ রাখা হয়। বুধবার লঞ্চ চলাচল করলেও, খুব বেশি যাত্রী ছিলেন না বলে জানা গিয়েছে।