দুর্গাপুরে শিল্পীরা। নিজস্ব চিত্র।
প্রতিমার সাজ তৈরি করেই হয় রোজগারের সংস্থান। গত বছর করোনার জেরে কাজ অনেকটাই কমে গিয়েছিল। তবে এ বার কিছুটা হলেও আশার আলো দেখছেন ডাকের সাজ তৈরির সঙ্গে যুক্ত দুর্গাপুর মহকুমার কয়েকজন শিল্পী। তবে তাঁরা জানিয়েছেন, পুজোয় কাজের ব্যস্ততা থাকলেও, কাঁচামালের দামবৃদ্ধির কারণে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে।
গত বছর করোনা-পরিস্থিতির জেরে স্থানীয় পুজোগুলিতে প্রভাব পড়েছিল। ভিন্-জেলা ও অন্য রাজ্য থেকে ডাক এলেও, করোনা-পরিস্থিতির কারণে তাঁরা সেখানে যেতে পারেননি বলে জানান শিল্পীরা। তবে এ বার ছবিটা কিছুটা বদলেছে।
কাঁকসার অযোধ্যা গ্রামের কর্মকারপাড়ার কবিতা কর্মকার প্রায় দু’দশক ধরে এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত। তিনি জানান, কাজের প্রতি ভালবাসা এবং পারিবারিক ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রাখতেই এই পেশায় রয়েছেন। তাঁর স্বামী দেবনাথ এই কাজে সহযোগিতা করেন। কবিতা জানান, গত বছর ছ’টি পুজো থেকে প্রতিমা সাজানোর বরাত পেয়েছিলেন। এ বার সেই সংখ্যাটি আটটি। নিজের গ্রাম ছাড়া, মানকর, আউশগ্রাম, শিবপুর-সহ নানা জায়গা থেকে এসেছে বরাত। দুর্গাপুরের শিল্পী হারু মালাকারও জানান, গত বছর আটটি পুজোর বরাত পেয়েছিলেন। এ বার সেই সংখ্যাটা ১২টি। সব ক’টিই পারিবারিক পুজো।
এক-একটি প্রতিমা সাজিয়ে তিন থেকে ছ’হাজার টাকা পর্যন্ত পান শিল্পীরা। তবে শিল্পীরা জানান, শোলা, চুমকি, জরি, রঙিন কাগজ, বাঁশের কাঠি-সহ নানা কিছু বাজার থেকে কিনতে হয়। সেগুলির দাম এ বার বেশ চড়া। গত বছর এক প্যাকেট চুমকির ৪০ টাকা দর থাকলেও এ বার তা হয়েছে, ৬৫ টাকা। এক ‘পিস’ জরির দাম পড়ত ছ’টাকা। এখন তা আট টাকা। একই ভাবে, রঙিন কাগজের দাম দু’টাকা থেকে বেড়ে তিন টাকা, প্রতিমার চুলের দর ২৫০ টাকা থেকে বেড়ে ২৮০ টাকা হয়েছে। কবিতা, হারুরা বলেন, “আমরা পারিশ্রমিক হঠাৎ করে বাড়াতে পারি না। তাই কাঁচামালের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে হাতে কতটা কী থাকবে, জানি না।” তবে এর পরেও দু’টি কারণে তাঁরা তাঁদের পেশা আঁকড়ে রয়েছেন। প্রথমত, এ বছর কাজ কিছুটা বেশি হওয়ায় পুষিয়ে যাচ্ছে। দ্বিতীয়ত, কবিতা বলেন, “এই সময়টা এলেই মনে হয়, মা-কে সাজাতে হবে। মা-কে সাজানোর ইচ্ছেটাই বড় কথা। সে জন্য অনেক কিছুই আমরা ভুলে থাকতে পারি।”