বেহাল লেনিন সরণি। দুর্গাপুরে। নিজস্ব চিত্র
কোথাও পিচ উঠে চলে গিয়েছে। কোথাও হাঁটু জল। রাস্তা বলে চেনাই দায়! এমন রাস্তায় যাতায়াতের জন্য টোল কেন নেওয়া হবে, তা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন ট্রাক মালিকেরা। বিষয়টি নিয়ে বেধেছে রাজনৈতিক তরজাও। দুর্গাপুরের লেনিন সরণি নিয়েইএই সমস্যা।
রাস্তাটি পুরসভার ২৩, ২৪ ও ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের ভিতর দিয়ে গিয়েছে। দুর্গাপুর প্রজেক্টস লিমিটেডের (ডিপিএল) উল্টো দিকে বিসি রায় রোড থেকে বেরিয়ে তিনটি ওয়ার্ড হয়ে রাস্তাটি দুর্গাপুর সরকারি কলেজের কাছে জওহরলাল নেহরু রোড়ে মিশেছে। রাস্তার পাশে রয়েছে লেনিন সরণি শিল্পতালুক। সেখানে বহু বেসরকারি ইস্পাত ও ইস্পাত অনুসারী কারখানা-সহ অন্য কারখানা রয়েছে। ওই রাস্তার ধারেই রয়েছে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত তেল সংস্থার রান্নার গ্যাসের বটলিং প্ল্যান্ট। প্রতিদিন ওই প্ল্যান্ট থেকে দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় গ্যাস সিলিন্ডার সরবরাহ করা হয়। এই রাস্তা দিয়েই শহরের বিস্তীর্ণ এলাকার বাসিন্দারা মামরা বাজারে কেনাকাটা করতে যান। দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতাল, ইএসআই হাসপাতাল, বিধাননগরের বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে যাতায়াতের জন্যও এই রাস্তাটি ব্যবহার করেন অনেকে। আবার এমএএমসি টাউনশিপ, ফুলঝোড়, বিধাননগরের বিভিন্ন বেসরকারি ইংরেজিমাধ্যম স্কুলের পুলকারগুলি যাতায়াত করে এই রাস্তা দিয়ে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সরকারি কলেজ থেকে ১৯ নম্বর জাতীয় সড়কের আন্ডারপাস পর্যন্ত অংশটি প্রায় আট মাস আগে সংস্কার করে পুরসভা। কিন্তু বাকি রাস্তা দিন দিন আরও বেহাল। সম্প্রতি রাস্তার পাশ দিয়ে যাওয়া জলের পাইপ ফেটে সেই জল গিয়ে জমেছে রাস্তার খন্দে। ফলে, কোথাও হাঁটু জল। কোথাও কাদা হয়ে থাকছে। তার উপর দিয়েই বিপজ্জনক ভাবে যাতায়াত করছে ভারী ট্রাক-সহ অন্য যানবাদন।
বরাবরের মতোই পুরসভার দায়িত্বপ্রাপ্ত একটি বেসরকারি সংস্থা টোল আদায় করে চলেছে। এ নিয়েই ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন ট্রাক চালকেরা। তাঁরা জানান, দু’শো টাকা করে টোল নেওয়া হয়। অথচ, রাস্তা সংস্কারের কোনও উদ্যোগ গত কয়েক বছরে দেখা যায়নি। শিল্পতালুকে যাতায়াতের পথে ট্রাক চালক মহম্মদ ইউনুস বলেন, “প্রাণের ঝুঁকি মাথায় নিয়ে ট্রাক চালাতে হয় এই রাস্তায়। টোল দেব না বললে যেতে দেবে না বলেন কর্মীরা। সংস্কারের কথা বললে কোনও সাড়া দেন না।” নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অন্য এক ট্রাক চালকের প্রতিক্রিয়া, “দুর্গাপুর পুরসভা বছরের পর বছর টোল নেয়। আমূল সংস্কার তো দূরের কথা, সামান্য মেরামতিও করে না।”
বিষয়টি নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজাও। সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য পঙ্কজ রায় সরকার বলেন, “দুর্গাপুর এখন টোলনগরীতে পরিণত হয়েছে। বীরভূমের মতো প্রকৃত তথ্য উঠে এলে বোঝা যাবে টোল আদায়ের নেপথ্যে আসল উদ্দেশ্য কী!” দুর্গাপুর পশ্চিমের বিজেপি বিধায়ক লক্ষ্মণ ঘোড়ুই বলেন, “ওই রাস্তা যাতায়াতের অযোগ্য। এক সপ্তাহ সময় দিচ্ছি। তার মধ্যে সংস্কারের ব্যবস্থা না নিলে টোল আমরা গিয়ে তুলে দেব।” যদিও, এ সব কথাবার্তায় আমল দেননি তৃণমূল নেতা তথা পুরসভার প্রশাসক বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান অমিতাভ বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, “রাস্তাটির সংস্কার করবে আসানসোল-দুর্গাপুর উন্নয়ন পর্ষদ (এডিডিএ)।” এ দিকে, এডিডিএ সূত্রে জানা গিয়েছে, লেনিন সরণি সংস্কারের জন্য প্রায় ২৩ কোটি টাকা বরাদ্দ করে দরপত্র ডাকা হয়েছিল কয়েক মাস আগে। কিন্তু সরকারি নিয়ম মতো নির্দিষ্ট সংখ্যক ঠিকাদার দরপত্রে যোগ না দেওয়ায় তখন প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণ হয়নি। বিষয়টি রাজ্য পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে।