বাতাসে কয়লার গুঁড়ো ভেসে বেড়াচ্ছে সব সময়েই। তার সঙ্গে যোগ হচ্ছে কেরোসিন চালিত যানবাহন, জেনারেটর, কল-কারখানা ইত্যাদির ধোঁয়া। আসানসোল খনি-শিল্পাঞ্চলে এর জেরে চোখ, চামড়া ও ফুসফুসের রোগ ক্রমেই বেড়ে চলেছে— জানাচ্ছেন চিকিৎসকেরা। উপযুক্ত প্রতিরোধের ব্যবস্থা না করলে তা এলাকার বাসিন্দাদের কাছে বড়সড় দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়াবে বলে তাঁদের আশঙ্কা।
সম্প্রতি এক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের আয়োজনে এ বিষয়ে একটি আলোচনাসভা হয় আসানসোলে। সেখানেই চিকিৎসকেরা জানান, দূষণের জেরে রোগাক্রান্তের সংখ্যা এই শিল্পাঞ্চলে দ্বিগুণ হয়েছে দশ বছরে। ধারাবাহিক চিকিৎসার পরেও অনেকে ঠিক মতো সুস্থ হচ্ছেন না। চিকিৎসকদের মতে, উন্নত পরিকাঠামোর মাধ্যমে দূষণ পরিমাপ ও তা নিয়ন্ত্রণে ধারাবাহিক ব্যবস্থাই এই সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে পারে।
ওই সভায় ডাক্তারেরা জানান, এলাকায় একাধিক খোলামুখ খনি থাকায় বাতাসে কয়লার গুঁড়ো ভেসে বেড়ায়। এ ছাড়া কয়লা সহায়ক এবং ছোট-বড় ইস্পাত শিল্পও থেকেও দূষণ ছড়ায়। ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের (আইএমএ) সদস্য সৈকত বসু জানান, সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, শুধু খনি বা কারখানা নয়, দূষণ ছড়াচ্ছে পরিবহণ আইন না মেনে পেট্রোল, ডিজেল ও কেরোসিনে চলা গাড়ি। এর জেরে বাতাসে নাইট্রিক অক্সাইড, নাইট্রিক ডাই-অক্সাইড, সালফার ডাই-অক্সাইড, কার্বন মনোক্সাইড-সহ নানা বিষাক্ত পদার্থের মাত্রা বাড়়ছে। তৈরি হচ্ছে অ্যালার্জির উপসর্গ। ক্রমাগত শ্বাসকষ্ট, সর্দি-কাশিতে ভুগছেন অনেকে। সমস্যা হচ্ছে চোখেরও।
শিল্পাঞ্চলে নানা অ্যালার্জিতে আক্রান্তের সংখ্যা বছর-বছর বাড়ছে বলে চিকিৎসকেরা জানান। সৈকতবাবু বলেন, ‘‘সাধারণ ওষুধে কাজ হচ্ছে না। গাড়ি-জেনারেটরের ধোঁয়ায় চামড়া ও চোখের রোগ ভয়াবহ আকার নিচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচারও করতে হচ্ছে।’’
চিকিৎসকেরা জানান, শহরে অতিরিক্ত দূষণের কারণে রোগাক্রান্তের সংখ্যা জুন থেকে সেপ্টেম্বরে বাড়ে। কারণ, তখন বর্ষার জন্য পরিবেশে জলীয় বাষ্প বেশি থাকে। ভারী বাতাসে বিষাক্ত পদার্থগুলি বায়ুস্তরে উঁচুতে যেতে পারে না। তাতে সমস্যা বেশি হয়। আবার এই সময় দূষণে তৈরি অ্যালার্জির জীবাণুগুলি বেশি সক্রিয় হয়। ডাক্তারদের পরামর্শ, দূষণ বন্ধে নিয়মিত প্রশাসনিক ব্যবস্থার পাশাপাশি বাসিন্দাদেরও সচেতনতা প্রয়োজন। নিজের এলাকায় নিয়মিত বৃক্ষরোপণ, প্রয়োজনে মাস্ক পরে বাইরে বেরোনোর মতো পদক্ষেপ করতে হবে তাঁদের।
আসানসোলের দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ দফতর জানায়, কারখানার দূষণ নিয়ন্ত্রণে ইতিমধ্যে অভিযান শুরু হয়েছে। দূষণ যাতে মাত্রা না ছাড়ায় তা খেয়াল রাখতে আধুনিক যন্ত্রও বসানো হচ্ছে শহরে।