স্বয়ম্ভর: আলোচনা দুর্গাপুরে। নিজস্ব চিত্র
স্যানিটারি ন্যাপকিন বানিয়ে বাজারের থেকে কম দামে বিক্রি করেও লাভ করা যায়।
প্রাইভেট টিউশন তো সবাই করেন। কিন্তু, পড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে হাতেকলমে শেখানোর ব্যবস্থা করা গেলে ছাত্রছাত্রীদের পোয়া বারো। সে টিউশনির মারও নেই।
উৎপাদনের তুলনায় শস্যবীজের চাহিদা এ রাজ্যে বহুগুণ বেশি। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে জমি কিনে শস্যবীজ চাষ করেও ভাল রোজগার করা যায়।
এগুলো স্রেফ কথার কথা নয়। একটু অন্য রকম ভাবনার সফল বাস্তবায়ন ঘটিয়ে আর্থিক ভাবে স্বয়ম্ভর হয়েছেন অনেক মহিলা। আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে বুধবার দুর্গাপুর শহরের সিটি সেন্টারের এক হোটেলে আয়োজিত এক কর্মশালায় এসে নিজেদের অভিজ্ঞতা জানালেন এমনই কিছু স্বনির্ভর মহিলাই। যাঁরা এক অর্থে উদ্যোগপতিও।
ব্যবসায় সাফল্য পেতে গেলে কোন কোন দিকে জোর দেওয়া দরকার, তা শেখানোর জন্য তিন দিনের এই কর্মশালার আয়োজন করেছে আমেরিকার এক বেসরকারি সংস্থা। সহযোগিতায় ভারতে মার্কিন দূতাবাস ও কনসুলেটের অধীন ‘ইউএস মিশন ইন্ডিয়া’ এবং এ দেশের একটি বেসরকারি সংস্থা। উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, পূর্ব ভারতে একমাত্র দুর্গাপুরেই এমন কর্মশালার আয়োজন। এ ছাড়া কোয়ম্বত্তুর, ওয়ারাঙ্গাল, জয়পুর ও নাগপুরে হয়েছে।
কর্মশালায় যোগ দিয়েছিলেন দুর্গাপুর ও আশপাশের ২৫ জন মহিলা। সেখানে বর্ধমানের রুমা তা জানালেন, অনেকে মিলে তাঁরা স্যানিটারি ন্যাপকিন বানাচ্ছেন। প্রথম দিকে ক্রেতাদের মনে সংশয় ছিল। এখন চাহিদা বেড়েছে। ৫ শতাংশ লাভ রেখে বিক্রি করেন। তা-ও, বাজারে চলতি ন্যাপকিনের তুলনায় কয়েকগুণ কম দামে। দুর্গাপুরের শিবানী বসুসেন এক জন ব্যাগ প্রস্তুতকারক। ব্যাগে বাংলার হস্তশিল্প ব্যবহার করাই তাঁর ব্যবসার ‘ইউএসপি’। তিনি বলেন, ‘‘আমি ১৭ বছর চাকরি করেছি। পরে এই ব্যবসা শুরু করি। আমার ব্যাগের কদর রয়েছে।’’
ক্ষুদ্রশিল্পে ঋণ পেতে বেশ সমস্যা হয়। এমন অভিযোগ তোলেন অনেকেই। অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে রাজ্যের এমএসএমই দফতরের অন্যতম আধিকারিক মৌ সেন অভিযোগ উড়িয়ে বলেন, ‘‘দু’একটি ক্ষেত্রে সামান্য সমস্যা থাকতে পারে। তবে বড় কিছু নয়।’’
দুর্গাপুরের বিধাননগরের বাসিন্দা তুহিনা রায় জানালেন, প্রথম বার আবেদনে ত্রুটি থাকায় ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ পাননি। পরের বছর আড়াই লক্ষ টাকা ঋণ নিয়ে বুটিক খোলেন। এখন তাঁর উৎপাদিত সামগ্রী রাজ্য ছাড়িয়ে মহারাষ্ট্রের বিভিন্ন শহরে যাচ্ছে।
আয়োজকদের পক্ষে আমেরিকা থেকে আসা অ্যান সি বেনেট্টিস, চন্দ্রদীপ মিত্ররা বলেন, ‘‘মহিলাদের পাশে দাঁড়িয়ে তাঁদের ব্যবসার আরও উন্নতি ঘটানোই আমাদের এই কর্মশালা আয়োজনের লক্ষ্য।’’