ডাঁই করা শীতপোশাক নিয়ে বসে আছেন দুই বিক্রেতা। কাটোয়ায় তোলা নিজস্ব চিত্র।
হিমেল হাওয়া বইতে শুরু করলেই রঙবেরঙের সোয়েটার-শালের পসরা সাজিয়ে বসেন ওঁরা। বোঝা যায় মফস্সলে শীত এসেছে। বিয়ের কেনাকাটা থেকে ঘরের চাদর, স্কুলের সোয়েটার ওঁদের থেকেই কেনেন বহু লোক। কিন্তু এ বার সময় যেন কাটতেই চাইছে না ওই কাশ্মীরি শীতপোশাক বিক্রেতাদের। নোট বাতিলের পরিস্থিতিতে ব্যবসা মন্দা চলছে বলে জানাচ্ছেন তাঁরা।
প্রতি বছরই কাটোয়ায় শ্রীনগরের মুঘল গার্ডেনের ব্যবসা গুটিয়ে অক্টোবর নাগাদ থেকে কাটোয়ায় এসে দোকান পাতেন এই বিক্রেতারা। অনেকে সপরিবারেও আসেন। যেমন, বছর পঞ্চাশের হাজি নূর মহম্মদ। আট বছর ধরে এই সময় কাটোয়ায় আসেন তিনি। সঙ্গে আনেন কয়েক হাজার শাল, জ্যাকেট, সোয়েটার। ফাঁকা দোকানে বসে মালপত্র ঝাড়তে ঝাড়তে তিনি বলেন, ‘‘বত্রিশ বছর ধরে পশ্চিমবঙ্গে ব্যবসা করতে আসছি। প্রথমে চাকদা, রানাঘাটে যেতাম। ওখানে কারখানাও আছে। এখন কাটোয়ায় আসি।’’ তাঁর দাবি, ছ’মাসের ব্যবসায় মাসে লাখখানেক রোজগার হলেও এ বার মাসের বিক্রি পঁচিশ হাজারও ছোঁয়নি। তার উপর শীত জাঁকিয়ে না পড়ায় সোয়েটারের চাহিদাও তেমন নেই।
কাটোয়ার স্টেশন বাজার এলাকায় সাতটি দোকান ভাড়া নিয়েছেন নূর মহম্মদ। কোনওটাতে নিজে বসছেন, কোনওটায় বসেন তাঁর ছেলে বা বন্ধুরা। এ দিন তাঁর ছেলে সাজিদ নূর, সোহেল নূররা বলেন, ‘‘বেশ কয়েক হাজার শাল এনেছি। রেডিমেড সোয়েটার, জ্যাকেটও রয়েছে প্রচুর। অনেকে এসে পুরনো নোটও ধরাচ্ছেন। না নিলে বিক্রি কমছে।’’ পাশের দোকানের আদিল মনসুর, আব্দুল হামিদরা অবশ্য এখনও পুরনো নোট নিচ্ছেন। তাঁদের কথায়, ‘‘খদ্দের তো ফেরাতে পারছি না। অগত্যা পুরনো নোটই নিচ্ছি। তবে পুরনো নোটের ক্রেতাও বেশি নেই।’’ এতেও প্রায় পঁয়ত্রিশ শতাংশ বিক্রি কমেছে বলে তাঁদের মত। আবার বিক্রি কমেছে বলে মালপত্র কম এনেছেন স্টেশন বাজারের আর এক দোকানি শৌভিক সিংহ। তিনি জানান, আগের বছর ২০ বান্ডিল উল এনেছিলেন, এ বার সাত বান্ডিল।
ক্যাশলেস পেমেন্টের ব্যবস্থা রাখেননি? নূর মহম্মদের কথায়, ‘‘কাটোয়ায় এখনও কার্ডে পেমেন্ট করার মতো খদ্দের পাইনি।’’ তাঁর চিন্তা, ‘‘ছ’মাসের দোকানঘর ও থাকার ঘরের ভাড়া মেটাব কি করে জানি না! বাড়িতে টাকা পাঠানো তো দূর অস্ত!’’