কৃষ্ণদাসের পাণ্ডুলিপি, খড়ম দেখভালের আবেদন

আনুমানিক পাঁচশো বছর আগে নৈহাটি লাগোয়া ঝামটপুর গ্রামে জন্ম কবি কৃষ্ণদাসের। কথিত রয়েছে, মাত্র পনেরো বছর বয়সে নিত্যানন্দের স্বপ্নাদেশে বৃন্দাবনে যান তিনি। বিরাশি বছর বয়সে সেখানে বাংলা ভাষায় চৈতন্য চরিতামৃত রচনা শুরু করেন। বছর দশেকের চেষ্টায় তা শেষ করেন।

Advertisement

সুচন্দ্রা দে

কাটোয়া শেষ আপডেট: ০৪ অক্টোবর ২০১৭ ০১:৪১
Share:

চিন্তায়: কৃষ্ণদাস কবিরাজের সেই খড়ম হাতে গিরিধারীবাবু। নিজস্ব চিত্র

কোথাও চার দিকে প্রয়োজনীয় পাড় না রেখে বিনা অনুমতিতে পুকুর খনন হয়েছে। কোথাও মন্দিরের জায়গা দখল করে বাড়ি তৈরি হয়েছে। ভেঙে গিয়েছে ৫৮ বছরের পুরোনো মন্দির লাগোয়া গ্রন্থাগারের ছাদ, দেওয়াল। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে এ ভাবেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে কেতুগ্রামের ঝামটপুরে ‘চৈতন্য চরিতামৃত’ রচয়িতা কৃষ্ণদাস কবিরাজের ভিটে, অভিযোগ তাঁর বর্তমান উত্তরাধিকারী গিরিধারী দাস মহন্তের। তাঁর দাবি, বারবার প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েও ফল হয়নি।

Advertisement

আনুমানিক পাঁচশো বছর আগে নৈহাটি লাগোয়া ঝামটপুর গ্রামে জন্ম কবি কৃষ্ণদাসের। কথিত রয়েছে, মাত্র পনেরো বছর বয়সে নিত্যানন্দের স্বপ্নাদেশে বৃন্দাবনে যান তিনি। বিরাশি বছর বয়সে সেখানে বাংলা ভাষায় চৈতন্য চরিতামৃত রচনা শুরু করেন। বছর দশেকের চেষ্টায় তা শেষ করেন।

কৃষ্ণদাসের ১৪তম পুরুষ তথা মন্দিরের সেবাইত গিরিধারীবাবুর কথায়, ‘‘বৃন্দাবন থেকে কৃষ্ণদাসের পুজো করা গোপাল, তাঁর ব্যবহৃত একটি খড়ম ও চরিতামৃতের পাণ্ডুলিপি উদ্ধার করে আনেন শিষ্য মুকুন্দ দাস। বাবা ত্রিভঙ্গদাস মহন্তের মৃত্যুর পর ওই খড়ম, পাণ্ডুলিপি ও গোপালের রক্ষণাবেক্ষণ আমিই করি।’’ কিন্তু রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে পাণ্ডুলিপি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে বলে তাঁর অভিযোগ। ভেঙে পড়েছে বাড়ির পূর্ব দিকে গ্রন্থাগারও। গিরিধারীবাবু জানান, সেখানে এক সময়ে চৈতন্য সাহিত্যের অসংখ্য গ্রন্থ ছিল। বছর দশক আগের ঝড়ে তা ভেঙে যায়। তাঁর প্রশ্ন, ‘‘আমার তিন মেয়ে। তাদের বিয়ের পরে এ সব পাণ্ডুলিপি, খড়ম কে রক্ষা করবে?’’

Advertisement

গিরিধারীবাবু আরও অভিযোগ করেন, গ্রন্থাগার লাগোয়া পুকুরে পর্যাপ্ত পাড় না রেখে খনন করেছেন এক প্রতিবেশী। তাঁর দাবি, পঞ্চয়েত প্রধান, ভূমি সংস্কার আধিকারিক ও মহকুমাশাসকের কাছে আবেদন জানিয়েও লাভ হয়নি। ঐতিহ্যের এই স্থান যাতে বেদখল না হয়, সে জন্যই এই চেষ্টা। তাঁর স্ত্রী উজ্জ্বলা দাস মহান্তের কথায়, ‘‘স্বামী ভিক্ষে করে ও দেবোত্তর সম্পত্তির আয়ে মন্দির সংরক্ষণের চেষ্টা করছেন। কিন্তু কিছু পড়শি অনেক সময়েই অবৈধ নির্মাণ করেছে। বাধা দিতে গেলে গালিগালাজ করে। এই সম্পত্তি রক্ষার দায়িত্ব তো প্রশাসনেরও। কিন্তু তারা নীরব।’’

আশ্বিনের শুক্লা দ্বাদশী তিথিতে কৃষ্ণদাসের জন্মতিথি হিসেবে চার দিন ধরে হরিনাম সংকীর্তন চলে। এ বছরও তার আয়োজন হয়েছে। শ্রীনিবাস আচার্য প্রবর্তিত মনোহরশাহি ঘরানার কীর্তন শুনতে ভিড় জমিয়েছেন হাজারখানেক ভক্ত। বসেছে মেলা। তবে এ সবের মাঝেও মন ভার গিরিধারীবাবুর।

‘ইনস্টিটিউট অফ গোপীনাথ গোবিন্দ রিসার্চ সেন্টার’-এর অধ্যক্ষ তথা চৈতন্য সাহিত্যের গবেষক মহেশ্বরপ্রসাদ লাহিড়ির কথায়, ‘‘বৃন্দাবনে চরিতামৃতের আসল পাণ্ডুলিপি রয়েছে। আর ঝামটপুরে যা রয়েছে তা তার অনুলিপি বলেই জানা যায়। যদিও এই নিয়ে দ্বিমত রয়েছে।’’ যে পাণ্ডুলিপি এখানে রয়েছে তার রক্ষণাবেক্ষণ প্রয়োজন বলে মত তাঁরও। মহকুমাশাসক (কাটোয়া) সৌমেন পাল বলেন, ‘‘বিষয়টি জানা নেই। আবেদন করলে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেব।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement