গুসকরায় শিবিরে গিয়ে রেশন নেওয়া। মাস্ক নেই অনেকের। নিজস্ব চিত্র।
টোটোয় খাদ্যসামগ্রী নিয়ে রাস্তা দিয়ে চলেছেন বর্ধমান শহরের উদয়পল্লি এলাকার রেশন ডিলার। কিছুটা গিয়েই একটি বাড়ির দুয়ারে কড়া নাড়লেন তিনি। দরজা খুলতেই হাতে তুলে দিলেন রেশন।
ভাতারের এড়োয়া গ্রামেও খাদ্যসামগ্রী বিলি করা হল। তবে বাড়ি-বাড়ি নয়, বরং আমারুন বাজারের একটি জায়গায় দাঁড়িয়ে উপভোক্তাদের হাতে রেশন সামগ্রী তুলে দেন ডিলার। অভিযোগ, মানা হয়নি কোভিড-বিধিও।
‘দুয়ারে রেশন’ চালু হওয়ার দিনে দু’রকম ছবিই দেখা গেল পূর্ব বর্ধমানে। জেলায় ১,৩৫৬টি রেশন দোকান থাকলেও ডিলার রয়েছেন ১,১৭০ জন। জেলা খাদ্য দফতর সূত্রে জানা যায়, এ দিন ১,০৫১ জন ডিলার পাড়ায় পৌঁছে খাদ্যসামগ্রী বিলি করেছেন। খাদ্যমন্ত্রী রথীন ঘোষ বলেন, ‘‘বুধবার থেকে চালু হওয়া প্রকল্পটি খুব ভাল ভাবে চলছে। প্রশাসনের সকলেই নজরে রেখেছিলেন। মুখ্যমন্ত্রীর কথামতো ডিলারেরা রেশন
বিলি করেছেন।’’
কিন্তু একশো শতাংশ ডিলার পথে নামলেন না কেন? জেলাশাসক (পূর্ব বর্ধমান) প্রিয়ঙ্কা সিংলা বলেন, ‘‘সুষ্ঠু ভাবে, নির্বিঘ্নে প্রকল্প শুরু হয়েছে। আমরা জানি, সব ডিলারই দোকান ছেড়ে রাস্তায় নেমে প্রকল্পে যোগ দিয়েছেন।’’ স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বর্ধমান ২ ব্লকের বড়শুল গ্রামের রেশন ডিলার সৌমিত্র দত্ত এ দিন খাদ্যসামগ্রী বিলি করেননি। তাঁর দাবি, ‘‘২ নভেম্বরেই দুয়ারে রেশন প্রকল্পে বাড়ি-বাড়ি গিয়ে খাদ্যসামগ্রী বিলি করেছি। তাই বুধবার দূরে ছিলাম। সামনের মাস থেকে নির্দিষ্ট দিনেই রেশনের খাদ্যসামগ্রী বিলি করা হবে।’’
খাদ্য দফতর সূত্রে জানা যায়, মন্তেশ্বর ও কালনা ২ ব্লকের সব ডিলার এই প্রকল্পে যোগ দিলেও কালনা মহকুমার বাকি তিন ব্লকে সব ডিলার যোগ দেননি। দেখা যায়, ডিলারেরা ছোট ভ্যান, টোটোয় খাদ্যসামগ্রী নিয়ে গ্রামে পৌঁছচ্ছেন। তাঁদের বেশির ভাগই গ্রামের একটি জায়গায় দাঁড়িয়ে খাদ্যসামগ্রী উপভোক্তাদের হাতে তুলে দেন।
‘ওয়েস্টবেঙ্গল এম আর ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশনের’ কালনার সভাপতি সুশীল ঘোষ বলেন, ‘‘৫০টি বাড়ি রয়েছে, এ রকম জায়গা বেছে নিয়েই ডিলারেরা খাদ্যসামগ্রী উপভোক্তাদের হাতে তুলে দিয়েছেন।’’ কাটোয়া মহকুমার ২৯০ জন ডিলারই পুরোদমে কাজ করেছেন। তাঁদের দাবি, করোনা-বিধি মেনে পাড়ায় পাড়ায় রেশন সামগ্রীর গাড়ি নিয়ে পৌঁছে যান তাঁরা। বাসিন্দারা নিজেরাই কার্ড হাতে এসে রেশনের জিনিস সংগ্রহ করেন। অনেককেই অবশ্য মাস্ক ছাড়া, দেখা যায়। কিছু জায়গায় ডিলারেরা মাস্কও বিলি করেন। কাটোয়া মহকুমা রেশন ডিলার সংগঠনের সম্পাদক আমজাদ আলি খান বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী, পাইলট প্রজেক্টের সব ডিলারই কাজ করেছিলেন। এ দিনও তাই অসুবিধা হয়নি।’’ জেলার খাদ্য নিয়ামক আবির বালি বলেন, ‘মিশ্র ব্যবস্থায় রেশন বিলি হয়েছে। সব ডিলার কেন নামেননি, তা খতিয়ে দেখতে হবে।’’
গুসকরা শহরের বিবেকানন্দ পল্লির বাসিন্দা, ৭৫ বছরের ভগবতী ঘোষ অনেকটা হেঁটে রেশন আনতে গিয়েছিলেন। তাঁর ক্ষোভ, ‘‘স্বামী মারা গিয়েছেন। ছেলের হার্টে অপারেশন হয়েছে। আমাকেই আসতে হল। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, বাড়িতে রেশন পৌঁছে যাবে। কিন্তু তা হল কই? হেঁটে এসে লাইন দিয়ে দাঁড়িয়েই নিতে হচ্ছে।’’ বিভিন্ন জায়গার উপভোক্তাদের একাংশেরও দাবি, ভিড়েই পড়তে হচ্ছে। ‘ইপিওস’ যন্ত্রে লিঙ্ক থাকছে না বলেও দেরি হচ্ছে। ডিলারদের সংগঠনের এক কর্তা রামমোহন কোনার বলেন, ‘‘পরিকাঠামোগত সমস্যা রয়েছে। উপর মহলে জানানো হয়েছে।’’ বেলকাশের আমতলায় আবার রেশন কার্ডে আধার নম্বর যোগ করার জন্যও ভিড় হয়।
ভাতারের বড়ডাঙা আদিবাসী পাড়ার হোপনা মুর্মু, মঙ্গলা মাড্ডিরা অবশ্য উপকার পেয়েছেন। তাঁদের কথায়, ‘‘চার কিলোমিটার দূরে রেশন নিতে যেতে হত। বুধবার বাড়ির দরজায় রেশন পেলাম। সময় বাঁচল।’’ বর্ধমান শহরের দিলীপ মিস্ত্রিও বলেন, ‘‘সকাল থেকে রাত পর্যন্ত পরিশ্রম করতে হয়। রেশন আনতে গিয়ে কয়েক ঘণ্টা দাঁড়ানো অপচয় মনে হত। এই পদ্ধতি চললে উপকারই হবে।’’