পুজোর প্রস্তুতিতে দেবযানী। দুর্গাপুরে। নিজস্ব চিত্র।
আরজি কর হাসপাতালের ঘটনার প্রতিবাদে শহরে আন্দোলনে তিনি রয়েছেন সামনের সারিতে। পারিবারিক দুর্গাপুজোর আয়োজনেও তার ছাপ পড়েছে। দুর্গাপুরেরবাসিন্দা দেবযানী বসু জানাচ্ছেন, জাঁকজমক ছেড়ে শুধু নিয়মরক্ষার পুজো হচ্ছে এ বার।
দুর্গাপুরের ডিএসপি টাউনশিপের এ-জ়োনের স্কুল রোডের একটি বেসরকারি স্কুলের অধ্যক্ষদেবযানী। তিনি জানান, তাঁদের এই পুজো শুরু ১৮ বছর আগে।তখন তাঁরা থাকতেন ডিএসপি কোয়ার্টার্সে। সেখানে জায়গা কম। তাই নিজেদের প্রতিষ্ঠিত স্কুলবাড়িতে পুজো চালু করা হয়। পরে তাঁদের নিজস্ব বাড়ি হয়। তবু রেওয়াজ মেনে এখনও পুজো হয় সেই স্কুলেই। শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীরা সপরিবার আসেন। এলাকার অনেকেও যোগ দেন। সবাইকে ভোগ খাওয়ানো হয়।
দেবযানী জানান, এ বার আর জি কর হাসপাতালের ঘটনার আবহে পরিস্থিতি অন্য রকম। তাই ভোগ খাওয়ানো বন্ধ থাকছে। যাঁরা আসবেন, তাঁদের হাতে শুধু পুজোর প্রসাদ দেওয়া হবে। অন্য বার সুদৃশ্য মণ্ডপ তৈরি করা হয়। এ বার মণ্ডপ করা হয়নি। স্কুলের একটি ঘরে পুজো করাহচ্ছে। কৃষ্ণনগরের ডাকের সাজের মূর্তিও এ বার হচ্ছে না। স্থানীয় কুমোরপাড়া থেকে মূর্তি আনা হয়েছে। অন্য বার ৬-৭ জন ঢাকি থাকেন। এ বার মাত্র এক জন ঢাকি রয়েছেন। নতুন জামাকাপড় কেনা হয়নি। আত্মীয়স্বজনেরা প্রতি বছর দুর্গাপুজোয় আসেন। এ বার কেউ আসবেন না। সব মিলিয়ে, একেবারে অনাড়ম্বর ভাবে পুজোর আয়োজন করা হচ্ছে বলে জানান দেবযানী।
দেবযানী জানান, তাঁর দিদি মারা গিয়েছেন দুরারোগ্য ব্যাধিতে। পুজো এলে তাঁর মা বড় মেয়ের জন্য কাঁদেন। তিনি বলেন, “আর জি কর হাসপাতালের নিহত তরুণী চিকিৎসকের বাবা-মায়ের ব্যথা আমরা বুঝি। আমরা সমব্যথী। তাই আড়ম্বরহীন পুজোর আয়োজন করেছি এ বার।” একই সঙ্গে তিনি জানান, দেবী দুর্গা দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালন করেন। শুধু আর জি কর হাসপাতাল নয়, দেশ জুড়ে নারী নিগ্রহ, নির্যাতন, খুনের ঘটনা ঘটছে। বহু ক্ষেত্রেই দোষীদের শাস্তি হচ্ছে না। তাঁর কথায়, “দেবীর কাছে প্রার্থনা করব, যাতে এই ধরনের ঘটনা আর না ঘটে, মানুষের শুভবুদ্ধির উদয় হয়, দোষীদের শাস্তি হয়। মা দুর্গা যেমন সন্তানসন্ততিদের নিয়ে নিশ্চিন্তে মর্ত্যে নেমে আসেন, সে ভাবেই যেন সমাজে সব মেয়েরা স্বাধীন ভাবে বাঁচতে পারে।”