চিকিৎসায় ‘গাফিলতি’, প্রসূতির মৃত্যু

দুর্গাপুরের সগড়ভাঙার বাসিন্দা সুব্রত আচার্য আইএমএ-কে চিঠি দিয়ে আর্জি জানান, তাঁর স্ত্রী মৃন্ময়ী চক্রবর্তী আচার্যের (৩১) ভুল চিকিৎসার জন্য চিকিৎসক কৌস্তভ চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করা হোক। একই সঙ্গে চিঠিতে বিধাননগরের অলড্রিন পথের একটি নার্সিংহোমের বিরুদ্ধেও গাফিলতির অভিযোগ তুলেছেন তিনি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ২৫ নভেম্বর ২০১৮ ০০:২৮
Share:

—প্রতীকী ছবি।

চিকিৎসায় গাফিলতিতে প্রসূতির মৃত্যুর অভিযোগ উঠল বিধাননগরের একটি নার্সিংহোম ও সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের বিরুদ্ধে। ঘটনার তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থার আর্জি জানিয়ে ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (আইএমএ)-কে চিঠি দিয়েছেন মৃতার স্বামী।

Advertisement

দুর্গাপুরের সগড়ভাঙার বাসিন্দা সুব্রত আচার্য আইএমএ-কে চিঠি দিয়ে আর্জি জানান, তাঁর স্ত্রী মৃন্ময়ী চক্রবর্তী আচার্যের (৩১) ভুল চিকিৎসার জন্য চিকিৎসক কৌস্তভ চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করা হোক। একই সঙ্গে চিঠিতে বিধাননগরের অলড্রিন পথের একটি নার্সিংহোমের বিরুদ্ধেও গাফিলতির অভিযোগ তুলেছেন তিনি।

কী ঘটনা? সুব্রতবাবু জানান, গত ১ অক্টোবর তাঁর অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী’কে পরীক্ষা করে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক নার্সিংহোমে ভর্তি করানোর কথা বলেন। খালি পেটে ১১ অক্টোবর সকাল ৮ টা নাগাদ মৃন্ময়ীদেবীকে ওই নার্সিংহোমে ভর্তি করানো হয়। ওই দিনই দুপুর ১২টা ১৪ মিনিট ও ১২টা ১৬ মিনিটে ‘সিজারিয়ান ডেলিভারি’র মাধ্যমে মৃন্ময়ীদেবী দু’টি কন্যাসন্তানের জন্ম দেন। সুব্রতবাবু বলেন, ‘‘অস্ত্রোপচারের জন্য চিকিৎসক কৌস্তভবাবু ১২ হাজার টাকা নিয়ে চলে যান।’’

Advertisement

তিনি জানান, দুপুর আড়াইটা থেকে মৃন্ময়ীদেবীর শরীর খারাপ হতে থাকে। রক্তপাত শুরু হয়। রোগীকে রক্ত দেওয়ার জন্য বি-পজিটিভ রক্ত জোগাড় করে নার্সিংহোমকে দেন সুব্রতবাবু। কিন্তু তাঁর অভিযোগ, চিকিৎসকের খোঁজ করলে তাঁকে জানানো হয়, বিকেল সাড়ে ৫টায় আসবেন কৌস্তভবাবু। চিকিৎসক আসার পরে রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত ওই বধূর চিকিৎসা চললেও তাঁর শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হয় বলে অভিযোগ। তাঁকে রাত ১১ টা নাগাদ বিধাননগরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। ওই হাসপাতালের তরফে জানানো হয়েছে, অচেতন অবস্থায় রোগীকে আনা হয়। ‘পাল্‌স’ খুঁজে পাওয়া যায়নি। ধরা যায়নি রক্তচাপও। ‘ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে’ রেখে চিকিৎসা চলে। ওই দিনই রাত ১১টা ৫১ মিনিটে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় মৃন্ময়ীদেবীর।

সুব্রতবাবু এর পরেই আইএমএ-র কাছে নার্সিংহোমের বিরুদ্ধে চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ করেন। চিকিৎসক কৌস্তভবাবু অবশ্য বলেন, ‘‘গাফিলতির অভিযোগ ভিত্তিহীন। প্রসূতির আগে থেকেই রক্তচাপের সমস্যা ছিল। গোটা সময়পর্বে, এমনকি হাসপাতালে স্থানান্তরিত করার সময়েও প্রসূতির সঙ্গেই আমি ছিলাম।’’ নার্সিংহোমের ম্যানেজার প্রশান্ত মণ্ডলের দাবি, মৃন্ময়ীদেবীর রক্তচাপজনিত সমস্যা আগে থেকেই ছিল। অস্ত্রোপচারের পরে রক্তপাত শুরু হলে তাঁকে রক্ত দেওয়ার ব্যবস্থাও করা হয়। সমস্যা বাড়লে চিকিৎসক কৌস্তভবাবুকে খবর দেওয়া হয়। তিনি এসে প্রয়োজনীয় চিকিৎসার পরে সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে ‘রেফার’ করেন। সুব্রতবাবু যদিও বলেন, ‘‘বারবার বলেও সময়ে ‘রেফার’ করা হয়নি। তাই পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যায়।’’

এই ধরনের অভিযোগের সুরাহা করার জন্য গঠিত স্বাস্থ্য দফতরের কমিটির (দুর্গাপুর মহকুমা) চেয়ারম্যান তথা দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালের সুপার দেবব্রত দাস বলেন, ‘‘এমন অভিযোগের ক্ষেত্রে দু’পক্ষকেই মুখোমুখি বসিয়ে বক্তব্য শুনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়। যদি অভিযোগ আসে, তবে অবশ্যই তা খতিয়ে দেখা হবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement