চলছে টিভি, ঘরে পড়ে রক্তাক্ত বৃদ্ধ

ঘরের কাগজপত্র তছনছ। টিভি-তে চলছে অনুষ্ঠান। আর তার মাঝেই ড্রয়িং রুমে পড়ে সত্তর বছরের এক বৃদ্ধের রক্তাক্ত দেহ।— বৃহস্পতিবার রাতে দুর্গাপুরের সিটি সেন্টারের অবনীন্দ্র বীথিতে নিজের বাড়িতে খুন হলেন সত্যরঞ্জন খাঁড়া।

Advertisement

সুব্রত সীট

দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ১৮ নভেম্বর ২০১৭ ০২:০২
Share:

ঘটনাস্থল: এই বাড়িতেই পড়ে ছিল বৃদ্ধের দেহ। ছবি: বিকাশ মশান

ঘরের কাগজপত্র তছনছ। টিভি-তে চলছে অনুষ্ঠান। আর তার মাঝেই ড্রয়িং রুমে পড়ে সত্তর বছরের এক বৃদ্ধের রক্তাক্ত দেহ।— বৃহস্পতিবার রাতে দুর্গাপুরের সিটি সেন্টারের অবনীন্দ্র বীথিতে নিজের বাড়িতে খুন হলেন সত্যরঞ্জন খাঁড়া। পুলিশের দাবি, এই খুনের নেপথ্যে তাঁর ছেলের ব্যবসাগত কোনও গোলমালের ঘটনা থাকতে পারে।

Advertisement

পুলিশ জানায়, সিটি সেন্টার বাসস্ট্যান্ড থেকে কবিগুরুগামী সোজা রাস্তার ধারেই রয়েছে মৌলানা আজাদ মোড়। তারই লাগোয়া এলাকায় তিনতলা বাড়ি রয়েছে বিমা সংস্থার অবসরপ্রাপ্ত কর্মী সত্যরঞ্জনবাবুর। স্ত্রী বছরখানেক আগে মারা যান। পড়শিদের দাবি, ছেলে সুমিত ওরফে বাপি মাঝেসাঝেই বাড়ি থেকে উধাও হয়ে যান। ফলে অধিকাংশ সময় বাড়িতে একাই থাকতেন সত্যরঞ্জনবাবু। পাড়ায় কারও সঙ্গে তেমন মিশতেন না ওই বৃদ্ধ। বাড়ির বাইরে বেরোতেনও না সে ভাবে। বাড়ির সামনে ঘন গাছে ঘেরা বাগান থাকায় রাস্তা থেকে অন্দরমহল খুব একটা দেখাও যায় না। এক মহিলা রাঁধুনি রান্না করা খাবার দিয়ে যেতেন। রাতে এক যুবক ওই বৃদ্ধের কাছে শুতে আসতেন। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ ওই যুবকই বৃদ্ধের দেহ দেখতে পান। এর পরেই পড়শিদের কাছ থেকে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসে পুলিশ।

তদন্তকারীরা জানান, ড্রয়িং রুমে টেবিলের পাশে বৃদ্ধের দেহটি রক্তাক্ত অবস্থায় পড়েছিল। ঘটনাস্থলে খুনের অস্ত্র মেলেনি। তবে আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের ডিসি (পূর্ব) অভিষেক মোদীর অনুমান, ‘‘ভারী কোনও অস্ত্র দিয়ে বৃদ্ধের মাথায় আঘাত করা হয়েছে। দেহটি ময়নাতদন্তের জন্য দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। রিপোর্ট পেলে প্রকৃত কারণ জানা যাবে।’’

Advertisement

যে যুবক প্রথমে দেহটি দেখেন, তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করেও খুব একটা কিছু তথ্য মেলেনি বলে দাবি পুলিশের। তবে পাশের বাড়িতে থাকা দু’টি সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করার চেষ্টা চলছে বলে পুলিশ জানায়।

কেন এই খুন? তদন্তকারীরা জানান, ড্রইং রুমে কাগজপত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল। পাশের ঘরে আলমারিতেও হাত পড়েনি। এ সব দেখেই তদন্তকারীদের অনুমান, দুষ্কৃতীরা সম্ভবত মূল্যবান সামগ্রীর লোভে আসেনি। কোনও বিশেষ কাগজপত্রের খোঁজে এসেছিল। সত্যরঞ্জনবাবু বাধা দিলে তাঁকে খুন করা হয়। শুধু তাই নয়, পুলিশের দাবি, ওই বৃদ্ধকে হয়তো খুনের উদ্দেশ্যও ছিল না দুষ্কৃতীদের।

কেন এমনটা মনে করছেন তদন্তকারীরা? পুলিশ জানায়, ওই বৃদ্ধের ছেলে সুমিত ওরফে বাপি পুরনো গাড়ি কেনাবেচার ব্যবসায় জড়িত। সম্প্রতি ভিন্-রাজ্য থেকে চুরি করে আনা গাড়ি ও ট্রাক বিক্রির অভিযোগে সি-জোন এলাকা থেকে মহম্মদ সেলিম নামে এক জনকে গ্রেফতার করে দুর্গাপুর থানার পুলিশ। পুলিশের দাবি, আন্তঃরাজ্য গাড়ি চুরি চক্রের চাঁই ওই ব্যক্তি। যদিও ওই অভিযুক্ত জেরায় ‘বাপি’ নামে এক জন তাঁকে ফাঁসিয়েছেন বলে দাবি করেন বলে তদন্তকারীরা জানান। প্রাথমিক ভাবে পুলিশের অনুমান, সেলিমের বলা ‘বাপি’ আসলে সত্যরঞ্জনবাবুর ছেলে। সেলিম ধরা পড়ার পরে থেকে বাপিও এলাকাছাড়া বলে জানা গিয়েছে। আবার উল্টো দিকও রয়েছে। তদন্তকারীরা জানান, হয়তো নজর অন্য দিকে ঘোরাতেই দেহের চার পাশে গাড়ি সংক্রান্ত নানা কাগজ ছড়িয়েছে দুষ্কৃতীরা।

ডিসি (পূর্ব) অভিষেকবাবু বলেন, ‘‘সব দিকই খতিয়ে দেখা হচ্ছে। দ্রুত দুষ্কৃতীদের পাকড়াও করা হবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement