মাঠে নষ্ট ফুলকপি। কালনায়। নিজস্ব চিত্র
গত চার দিন ধরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ঘোরাফেরা করছে ২২ ডিগ্রির আশেপাশে। সোমবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১০ ডিগ্রি। তার সঙ্গে কুয়াশা, রোদের তেজও হালকা। সবমিলিয়ে কাঁপুনি ধরিয়ে দিচ্ছে পৌষের শেষ দিন। ঠান্ডায় ক্ষতি হচ্ছে চাষেও।
বৃষ্টির জন্য এমনিতেই এ বছর দু’বার আলুর চাষ করতে হয়েছে। গত বছরের চেয়ে আলু চাষের এলাকাও কমেছে। তার উপরে কয়েক দিন ধরে ঘন কুয়াশায় নাবিধসা রোগ দেখা যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন চাষিরা। আবার ঠান্ডার জন্য ধানের বীজতলায় সংক্রমণেরও সম্ভাবনা রয়েছে বলে কৃষি দফতর মনে করছে। বেশ কয়েকটি জায়গায় বোরোর বীজতলায় ‘কোল্ড ইনজুরি’ দেখা গিয়েছে। আলু ও বোরোর বীজতলা বাঁচাতে প্রচার শুরু করেছে কৃষি দফতর।
গত বছর জেলায় ৬৭ হাজার হেক্টরের মতো জমিতে আলু চাষ হয়েছিল। প্রতি হেক্টরে ৩০ টন করে ফলন পেয়েছিলেন চাষিরা। এ বার আলু চাষের শুরুতেই নিম্নচাপের জন্য চাষযোগ্য জমি নষ্ট হয়ে যায়। প্রায় ৩৫ হাজার হেক্টর জমিতে দু’বার চাষ করতে হয় চাষিদের। শেষ পর্যন্ত জেলায় গত বারের চেয়ে আলুর এলাকা কমে ৫ হাজার হেক্টর। কয়েক দিন ধরে অত্যধিক কুয়াশায় কালনা, জামালপুর ও মঙ্গলকোটের কিছু জায়গা থেকে নাবিধসা রোগের উপদ্রবের কথা শোনা যাচ্ছে। কৃষি কর্তারা জানিয়েছেন, ঘন কুয়াশায় আলু গাছ বাঁচাতে হলে ঠিকমতো ওষুধ ও কীটনাশক স্প্রে করতে হবে। কারণ একবার নাবিধসা রোগ ছড়িয়ে পড়লে আলু গাছ বাঁচিয়ে রাখা খুবই কঠিন।
চাষিদের দাবি, দু’বার করে চাষ করার ফলে খরচ অনেকটাই বেশি হয়ে গিয়েছে। ফলনে টান পড়তে পারে জেনেও দু’বার করে চাষ করা হয়েছে। এখন কুয়াশায় গাছ বাঁচানো আর একটা লড়াই। যদিও শেষ পর্যন্ত ফলনে প্রভাব না পড়লেও আলুর গুণমান নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাবে মনে করছেন কৃষি কর্তারা।
ধানের গুণমান নিয়েও প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। গত বছর জেলায় ৩ লক্ষ ৭৭ হাজার হেক্টরের মতো জমিতে ধান চাষ হয়। গড়ে প্রতি হেক্টরে ৫.৪ টন ধান উৎপাদন হয়। জেলায় মোট ধান উৎপাদন হয় ১৯ লক্ষ ৩৫ হাজার ৮০০ টন। এ বছর নিম্নচাপের আগেই ৩ লক্ষ ২০ হাজার হেক্টর জমিতে ‘ক্রপ কাটিং’ করে দেখা গিয়েছিল গড় উৎপাদন হয়েছে প্রতি হেক্টরে ৫.৫ টন। আর নিম্নচাপের পরে পড়ে থাকা ধানের গড় উৎপাদন মেলে প্রতি হেক্টরে ৪.৮ টন। এ ছাড়াও সুগন্ধী বা গোবিন্দভোগ ধানে প্রতি হেক্টরে গড় উৎপাদন হয়েছে ৩.৫ টন। সব মিলিয়ে জেলায় নিম্নচাপের পরেও উৎপাদন বেড়ে হয়েছে ১৯ লক্ষ ৯৮ হাজার টনের মতো।
চাষিদের দাবি, খাতায়-কলমে উৎপাদন বাড়লেও ধান ভিজে থাকায় মান খুবই খারাপ। রোদে শুকোনোর মুখে ফের কুয়াশা পড়ায় ধান চিটে হয়ে যাচ্ছে। বিক্রি করতে মুশকিল হচ্ছে। কালনার চাষি অনুকূল সিংহ বলেন, ‘‘বোরোর বীজতলা এক আঙুল লম্বা হয়েছে। কিন্তু তিন ধরে দেখা যাচ্ছে জমিতে ধানের চারা হলুদ হয়ে ঝিমিয়ে পড়েছে। বীজতলা বাঁচবে কি না, সেটাই চিন্তার।’’ চিন্তা বাড়িয়েছে বুধ ও বৃহস্পতিবার হাওড়া, হুগলি, নদিয়া-সহ একাধিক জেলায় বৃষ্টির পূর্বাভাস। কৃষি কর্তারাও মানছেন, স্বর্ণ ধানের উৎপাদনের পাঁচ থেকে সাত শতাংশের মান বেশ খারাপ। আবার গোবিন্দভোগের মোট উৎপাদনের ২২ শতাংশ ধানের মান ভাল নয়। চাষিদের দাবি, গোবিন্দভোগের মান খারাপ হলে তা বিক্রি করা অসম্ভব।
কৃষি দফতরের দাবি, রায়না ১, ২, খণ্ডঘোষ ও গলসি ২ ব্লকে ধানের মান নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। এর মধ্যে কুয়াশার জন্য বীজতলায় ‘কোল্ড ইনজুরি’ দেখা দিয়েছে গঙ্গা তীরবর্তী কয়েকটি ব্লকে।জেলার এক সহ কৃষি অধিকর্তা পার্থ ঘোষ বলেন, ‘‘আলু, পেঁয়াজের মতো বেশ কিছু রবি ফসলের জন্য ভাল শীত প্রয়োজন। বর্তমান পরিস্থিতিতে ধানের বীজতলা নিয়ে চাষিদের সতর্ক থাকতে হবে।’’