ব্লাড ব্যাঙ্কে রক্তের টান। প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
তাপমাত্রা সহনসীমার মধ্যে। বড় কোনও নির্বাচনও সম্প্রতি ছিল না। তবু চলতি মাসে রক্তের আকাল দেখা দিয়েছে আসানসোল জেলা হাসপাতালের ব্লাডব্যাঙ্কে। রক্তদান শিবিরের সংখ্যা কমে যাওয়ার নির্দিষ্ট কোনও কারণও খুঁজে পাওয়া যায়নি। এই পরিস্থিতিতে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলিকে চাঙ্গা করে বেশি সংখ্যক রক্তদান শিবির করানোর
চেষ্টা চলছে।
সোমবার হাসপাতালের ব্লাডব্যাঙ্কে এ পজ়িটিভ গ্রুপের রক্ত মজুত ছিল ১০ ইউনিট। তেমনই, বি পজ়িটিভ ৫ ইউনিট, এবি পজ়িটিভ ৭ ইউনিট, ও পজ়িটিভ ২০ ইউনিট, ও নেগেটিভ ২ ইউনিট এবং বি নেগেটিভ ২ ইউনিট রক্ত ছিল হাসপাতালে। এই হাসপাতালের ব্লাডব্যাঙ্ক থেকে বেসরকারি হাসপাতালেও রক্ত যায়। দৈনিক গড়ে ৬০ ইউনিট রক্ত প্রয়োজন হয় বলে ব্লাড ব্যাঙ্ক সূত্রে খবর।
খবর নিয়ে জানা গিয়েছে, গত বছরের তুলনায় এ বার নভেম্বরে রক্তদান শিবিরের সংখ্যা কমেছে। আবার শিবির হলেও সংগৃহীত রক্তের পরিমাণও কমেছে। সাধারণত একটি শিবিরে ন্যূনতম ৩০ জন রক্তদান করেন। দিনে একাধিক শিবির হয় বিভিন্ন জায়গায়। হাসপাতাল সূত্রের খবর, চলতি মাসে এখনও পর্যন্ত বেশির ভাগ দিনই একটি করে শিবির হয়েছে। রবিবার রূপনারায়ণপুরে একটি শিবিরে মাত্র পাঁচ জন ও সোমবার উখড়ায় একটি শিবিরে ২৪ জন রক্ত দিয়েছেন। রক্তদান শিবির করে মূলত বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন, ক্লাব ও রাজনৈতিক দলগুলি। রক্তসঙ্কট মেটাতে তাদের সক্রিয় হওয়ার আর্জি জানাচ্ছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
এক স্বাস্থ্য আধিকারিক বলেন, ‘‘রক্তদান শিবির কম হয় মূলত গরমের কারণে গ্রীষ্মকালে এবং নির্বাচনের সময়ে।এখন নির্বাচন বা দাবদাহ, কিছুই নেই। তবু রক্তদান শিবির কম হচ্ছে। মনে হচ্ছে উৎসবের রেশ কাটিয়ে উঠতে পারেননি মানুষ। সে কারণে রক্তদান শিবিরের সংখ্যা কমেছে।’’
ব্লাডব্যাঙ্কের এক স্বাস্থ্যকর্মী জানান, গরমের কারণে প্রত্যেক বছর এপ্রিল-জুনে রক্তদান শিবির এমনিতেই কম হয়। এই সময়ে আয়োজক সংস্থাগুলোকে সরকারের পক্ষ থেকে বিনা খরচে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত প্রেক্ষাগৃহ ব্যবহারের অনুমতি দিলে রক্তদান শিবিরের সংখ্যা বাড়বে বলে মনে হয়। এ বছর অক্টোবরেই রক্তের সঙ্কট দেখা দিয়েছে। নভেম্বরে তা আরও বেড়েছে। ২০২৩-র নভেম্বরে ৪২টি শিবিরে ১১২০ জন রক্তদান করেছিলেন। সংগৃহীত রক্তের পরিমাণ ছিল ১১২০ ইউনিট। কিন্তু সে বার ওই মাসে প্রয়োজন হয়েছিল ১৪৭৯ ইউনিট রক্তের। ৩৫৯ ইউনিট রক্তের জোগান দিয়েছিলেন রোগীর পরিজনেরা। চলতি মাসে সোমবার পর্যন্ত ২৩টি শিবিরে মাত্র ৫৬১ জন রক্তদান করেছেন। হাসপাতালে এসে রক্ত দিয়েছেন ২৬০ জন।
হাসপাতালের ব্লাডব্যাঙ্কের ইনচার্জ সঞ্জিত চট্টোপাধ্যায় জানান, হাসপাতালে ক্যানসার থেকে শুরু করে ডায়ালাইসিস— বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা হয়। সে কারণে প্রচুর রক্ত প্রয়োজন হয়। এ ছাড়াও, বেসরকারি হাসপাতালেও রক্তের চাহিদা বাড়ছে। রক্তাল্পতা ওষুধের মাধ্যমে ঠিক হতে পারে। কিন্তু রক্তের জোগান দিয়ে সুস্থ করা হচ্ছে রক্তাল্পতায় ভোগা রোগীদের। ফলে অকারণে রক্তের চাহিদা বেড়ে যাচ্ছে।
২০২৩ সালে নভেম্বর পর্যন্ত ৪৯৮টি শিবির থেকে ১৫,০৫৭ ইউনিট সংগ্রহ করা হয়েছিল। যদিও ওই সময়কালে প্রয়োজন হয়েছিল ১৫৩২৩ ইউনিট রক্তের। ২৬৬ রক্তদাতা সরাসরি হাসপাতালে এসে রক্তদান করেছিলেন। তাতে সমস্যা মিটেছিল। চলতি বছরে এখনও পর্যন্ত ৪৫৪টি শিবিরে থেকে ১৪২৪৩ ইউনিট রক্ত সংগ্রহ করা গিয়েছে। এই সময়কালে প্রয়োজন ছিল ১৭৮৯২ ইউনিট রক্তের। এই পরিস্থিতিতে ব্লাডব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ সকলের কাছে রক্তদানের আর্জি জানিয়েছেন। রক্তদান আন্দোলনের নেতা প্রবীর ধড় জানান, রক্তসঙ্কটের বিষয়টি নিয়ে সংগঠকদের মধ্যে প্রচার চলছে। তাঁরাই সঙ্কট মেটানোর চেষ্টা করছেন।