সেই লিফলেট। —নিজস্ব চিত্র।
ভোটের দিন প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে, দাওয়াই দিয়েছিলেন উচ্চ নেতৃত্ব। কিন্তু রিগিং, ছাপ্পার অভিযোগে সরব হলেও পুরভোটে প্রতিরোধের রাস্তায় হাঁটতে দেখা যায়নি দুর্গাপুরের সিপিএম নেতা-কর্মীদের। ভোটে ভরাডুবির পরে এখন ‘গণতন্ত্র রক্ষা’র জন্য একজোট হওয়ার ডাক দিয়ে বাড়ি-বাড়ি লিফলেট বিলি শুরু হয়েছে দলের তরফে। কিন্তু এমন উদ্যোগ নিয়ে প্রশ্ন উঠছে দলের অন্দরেই। নেতা-কর্মীদের একাংশই বলছেন, ‘‘এ যেন চোর পালালে বুদ্ধি বাড়ে।’’
ভোটের আগে বছর দেড়েক ধরে তৃণমূলের পুরবোর্ডের বিরুদ্ধে বেহাল পরিষেবার অভিযোগে লাগাতার আন্দোলন করেছে সিপিএম। বিভিন্ন কর্মসূচিতে ভিড় হয়েছে ভালই। ভোটের প্রচারে এসে দলের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র বুথরক্ষার ডাক দিয়ে যান। সাংসদ মহম্মদ সেলিম হুঁশিয়ারি দেন, বাইরে থেকে দুষ্কৃতীরা এসে সন্ত্রাস তৈরি করলে সিপিএমের কর্মীরা তাদের ফিরতে দেবেন না।
কিন্তু দলেরই একাংশের দাবি, ভোটের দিন প্রতিবাদ কর্মসূচি প্রায় কিছুই নেওয়া হয়নি। তা নিতে পারলে সাধারণ মানুষের আস্থা অর্জন করা যেত। সে দিন শহরের নানা এলাকায় গোলমাল বাধে। বহিরাগতদের এনে দৌরাত্ম্যের অভিযোগ ওঠে শাসকদলের লোকজনের বিরুদ্ধে। প্রতিবাদে বিজেপিকে রাস্তায় নামতে দেখা যায়। পুলিশকর্মী আক্রান্ত, তৃণমূল কর্মী গুলিবিদ্ধ বা ইভিএম ভাঙচুরের মতো ঘটনায় নামও জড়ায় বিজেপি-র। ভোটের ফলে দেখা যায়, ১৪ শতাংশের বেশি ভোট পেয়ে বামেদের সরিয়ে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে তারাই।
সিপিএম সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৩ অগস্ট পুরভোটের দিনটিকে ‘কালো দিন’ আখ্যা দিয়ে একটি লিফলেট তৈরি করা হয়েছে। বহিরাগত ১৫-২০ হাজার দুষ্কৃতী দিয়ে ভোট লুঠ করে গণতন্ত্রকে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ। এর জবাব দিতে ঝান্ডার রং ভুলে শহরবাসীকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার ডাক দেওয়া হয়েছে ওই লিফলেটে। দলের জেলা কমিটির সদস্য পঙ্কজ রায় সরকার বলেন, ‘‘শহর রক্ষায় দুর্গাপুরের মানুষ একজোট হয়েছিলেন। তাই পেশিশক্তি দিয়ে গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে তৃণমূল। যথাসময়ে গণতান্ত্রিক পথেই শহরের মানুষ এর জবাব দেবেন।’’ তিনি আরও জানান, ৩৫ হাজার বাড়িতে এই লিফলেট পৌঁছে দেওয়ার পাশাপাশি সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির কাছে গণস্বাক্ষর করা আবেদন পাঠানো হবে।
কিন্তু এ সব করে আখেরে ফল কিছু মিলবে কি না, সে নিয়ে সংশয়ে দলেরই অনেকে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক নেতা বলেন, ‘‘মঙ্গলবার রাজ্য কমিটির বৈঠকে দলের রাজ্য সম্পাদক নির্বাচন কমিশনের ভরসায় বসে না থেকে ফের বুথ আগলানোর ডাক দিয়েছেন। কিন্তু বাস্তবায়িত হবে কী ভাবে!’’ পঙ্কজবাবু অবশ্য দাবি করেন, ‘‘পুরভোটের আগে বুথ ধরে-ধরে ‘বুথ সংগ্রাম কমিটি’ গড়া হয়েছিল। কিন্তু দুর্গাপুরে যে ভাবে ভোট হল তা গণতন্ত্রের জন্য অশনিসঙ্কেত। আমরা পরিস্থিতির উপরে নজর রাখছি।’’
তৃণমূলের দুর্গাপুর জেলা সভাপতি উত্তম মুখোপাধ্যায়ের কটাক্ষ, ‘‘মাটির সঙ্গে সিপিএমের যে আর কোনও যোগ নেই, পুরভোটের ফলে তা পরিষ্কার। শহরের মানুষ সিপিএমকে পুরোপুরি প্রত্যাখ্যান করেছেন। তাই এই লিফলেটের নাটকে ফল হবে না।’’