প্রতীকী চিত্র
তৃণমূল বিধায়কের খারাপ মন্তব্যের পরেই কড়া নিন্দা করেছিলেন বিধানসভার স্পিকার। পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ও নিন্দা করে জানান, নীতি, মতাদর্শের পার্থক্য থাকতে পারে। কিন্তু তাঁদের কোনও বিধায়ক অন্য কোনও বিধায়কের প্রতি অপমানজনক শব্দ উচ্চারণ করবেন, এটা তৃণমূল অনুমোদন করে না। জামুড়িয়ার সিপিএম বিধায়ক জাহানারা খানের প্রতি অশালীন মন্তব্য করায় দলীয় নেতৃত্বের নির্দেশে ক্ষমা চেয়ে নেন মেমারির বিধায়ক নার্গিস বেগমও। তবে বিষয়টি নিয়ে আন্দোলনের রাস্তা থেকে সরতে নারাজ সিপিএম।
শনিবার বিধানসভায় ওই ঘটনার পরেই পশ্চিম বর্ধমানের নানা প্রান্তে প্রতিবাদ মিছিল করে সিপিএম। রবিবারও জামুড়িয়ায় প্রতিবাদসভা করে সিপিএম। এ দিন জাহানারা বলেন, ‘‘অসম্মান কিছুতেই ভুলতে পারছি না।” পূর্ব বর্ধমানের মঙ্গলকোটের প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক তথা মহিলা সমিতির রাজ্য কমিটির সদস্য সাধনা মল্লিকের বক্তব্য, ‘‘শুধু বিধানসভা কেন, কোনও জায়গাতেই কারও কাছে এমন মন্তব্য আশা করা যায় না। আমাদের জেলার এক মহিলা বিধায়কের এমন মন্তব্যে গোটা জেলার সম্মানহানি ঘটল বলে মনে করছি। রাজ্য জুড়ে মুখে কালো কাপড় বেঁধে মহিলারা প্রতিবাদ মিছিলে শামিল হয়েছেন।’’
নার্গিসের মন্তব্যের প্রতিবাদ করেছে অন্য নানা দলও। সর্বভারতীয় মহিলা কংগ্রেসের সম্পাদক ইন্দ্রাণী মিশ্রের অভিযোগ, “এর আগেও প্রকাশ্যে কুকথা বলেছেন তৃণমূলের নেতারা। দলীয় নেতৃত্বের প্রশ্রয় ছাড়া বারবার এমনটা ঘটতে পারে না।’’ বিজেপির মহিলা মোর্চার পশ্চিম বর্ধমানের পর্যবেক্ষক কৃষ্ণা ভট্টাচার্যও দাবি করেন, “তৃণমূলের কাছে ভাল কিছু আশা করা ভুল।’’ পূর্ব বর্ধমানের বিজেপি মহিলা মোর্চার নেত্রী কেকা সরকারের আবার অভিযোগ, ‘‘মেমারির বিধায়ক এলাকার মানুষের সঙ্গে কেমন আচরণ করেন, আমরা জানি। বিধানসভায় সেটাই বেরিয়ে পড়ল।’’
ঘটনার নিন্দা করে মেমারির শিক্ষিকা সুতপা সিংহরায়ের বক্তব্য, ‘‘আমরা কাদের প্রতিনিধি করে পাঠাচ্ছি, সেটাই এখন ভাবার বিষয়!’’ বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় টিচার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বুটা) সভানেত্রী অনিন্দিতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এক জন মহিলা হিসেবে খুবই কষ্ট পেয়েছি ঘটনাটিতে। এ রকম মন্তব্যে সমাজে কী বার্তা যাচ্ছে, ভেবে দেখা উচিত।’’
এমন মন্তব্য সমর্থনযোগ্য নয়, জানিয়েছেন তৃণমূলের মহিলা কর্মীদের অনেকেও। তবে দল যে ভাবে দ্রুত বিষয়টি নিয়ে কড়া পদক্ষেপ করেছে, তাতে তাঁরা খুশি বলেও দাবি করেন। তৃণমূলের পশ্চিম বর্ধমান জেলা যুব সভাপতি ববিতা দাসের কথায়, “এমন মন্তব্য মেনে নেওয়া যায় না। তবে আমাদের দলে কেউ কোনও কটূ মন্তব্য করলে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁকে শুধরে নিতে বাধ্য করেন।’’
নার্গিস নানা সময়ে বিভিন্ন বিতর্কে জড়িয়েছেন। কয়েক বছর আগে মেমারির বিজুর ২ পঞ্চায়েতে দলের এক নেতাকে জুতো হাতে তাড়া করার অভিযোগ উঠেছিল তাঁর বিরুদ্ধে। গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে হামলার অভিযোগে এক বার রাতভর থানায় ধর্না দেন। পরে দলীয় নেতৃত্বের নির্দেশে তা প্রত্যাহার করেন। তাঁর মন্তব্যে বিতর্ক তৈরি হওয়া নিয়ে অবশ্য রবিবার কিছু বলতে চাননি নার্গিস। তিনি শুধু বলেন, ‘‘দল যা বলার, কালই বলে দিয়েছে। আমার নতুন করে কিছু বলার নেই।’’