সাত দিনের মধ্যে মাটি তোলার নির্দেশ, পুকুর ভরাটে নাম জড়াল বিধায়কের

পুকুরে মাটি ফেলা নিয়ে আগেই বর্তমান বিধায়কের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছিলেন প্রাক্তন। এ বার জেলা প্রশাসনও কড়া পদক্ষেপ করতে চলেছে পূর্বস্থলী উত্তর কেন্দ্রের ওই সিপিএম বিধায়ক প্রদীপ সাহা ও তাঁর ভাইয়ের বিরুদ্ধে।

Advertisement

কেদারনাথ ভট্টাচার্য

পূর্বস্থলী শেষ আপডেট: ২৪ জুন ২০১৬ ০৭:৪৩
Share:

বাঁ দিকে, এই পুকুর নিয়েই বিতর্ক। ডান দিকে, ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিককে অতিরিক্ত জেলাশাসকের পাঠানো চিঠি। নিজস্ব চিত্র।

পুকুরে মাটি ফেলা নিয়ে আগেই বর্তমান বিধায়কের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছিলেন প্রাক্তন। এ বার জেলা প্রশাসনও কড়া পদক্ষেপ করতে চলেছে পূর্বস্থলী উত্তর কেন্দ্রের ওই সিপিএম বিধায়ক প্রদীপ সাহা ও তাঁর ভাইয়ের বিরুদ্ধে। জানা গিয়েছে, অতিরিক্ত জেলাশাসক (ভূমি ও ভূমি সংস্কার) এ ব্যাপারে চিঠি পাঠিয়েছেন পূর্বস্থলী ২ ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিককে। তাতে বিষয়টিকে অবৈধ আখ্যা দিয়ে সাত দিনের মধ্যে মাটি তুলে নিয়ে পুকুর পুরনো অবস্থায় ফেরাতে বলা হয়েছে। বিধায়ক অবশ্য বিষয়টিকে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র বলেই দাবি করেছেন।

Advertisement

প্রদীপবাবুর বক্তব্য, ‘‘রাজনৈতিক ভাবে চক্রান্ত করেই আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা চলছে। পুকুরের পাড়ে কিছু মাটি ফেলা হয়েছিল। এটা অন্যায় নয়। সে মাটি তুলে নিতে হলে ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর তুলে নিক।’’

এ বারের বিধানসভা ভোটে জেলার গ্রামীণ এলাকায় যে দুটি আসনে সিপিএম জয় পেয়েছে তার একটি পূর্বস্থলী উত্তর। গতবারের তৃণমূল বিধায়ক তপন চট্টোপাধ্যায়কে হারিয়ে জিতেছেন পেশায় শিক্ষক প্রদীপ সাহা। ৫ জুন বিধায়ক ও তাঁর ভাই গোপাল সাহার বিরুদ্ধে পুকুর ভরাটের অভিযোগ হয়। পারুলিয়ার বাসিন্দা সমীর সাহা ভূমি এবং ভূমি সংস্কার আধিকারিককে লিখিত অভিযোগে জানান, এলাকার ১০৮২ দাগে থাকা পুকুরটিতে মাটি ফেলে বেআইনি ভাবে ভরাট করছেন প্রদীপবাবু এবং তাঁর ভাই। বিষয়টি নিয়ে সরব হন তপনবাবুও। ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের প্রতিমন্ত্রী-সহ জেলা প্রশাসনের বিভিন্ন কর্তাদের চিঠি পাঠান তিনি। বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দেন প্রতিমন্ত্রী স্বপনবাবু।

Advertisement

জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, প্রাথমিক পর্যায়ে তদন্ত করেন পূর্বস্থলী ২ ব্লক ভূমি এবং ভূমি সংস্কার আধিকারিক উৎপল সাহা। তিনি রিপোর্টে জানান, জলে নয়, মাটি ফেলা হয়েছে পুকুরের পাড়ে। প্রদীপবাবুও দাবি করেন, তিনি গাছ লাগানোর জন্য পুকুর পাড় মাটি ফেলেছেন। তবে তাতে থেমে থাকেননি তপনবাবু। তিনি দাবি করেন, সপ্তাহ খানেক ধরে পুকুর ভরাট চলছে। ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক রিপোর্টে অনেক কম মাটি ফেলা হয়েছে দেখিয়েছেন বলেও অভিযোগ করেন তিনি। ১৩ জুন মন্ত্রীকে লেখা চিঠিতে তপনবাবু দাবি, পুকুরটি ভরাটের উদ্দেশ্যে প্রায় আড়াই লক্ষ সিএফটি মাটি ফেলা হয়েছে। দুর্ভাগ্যবশত এলাকার ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের আধিকারিক বিধায়কের আত্মীয় বলে এমনটা করা হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি। পাশাপাশি ওই দফরের এক কর্মীর বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগ আনেন। শুধু মন্ত্রীর কাছেই নয়, ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিকের বিরুদ্ধে ১৪ জুন জেলাশাসক ও ভিজিল্যান্স দফতরে চিঠি পাঠান প্রাক্তন বিধায়ক। অভিযোগ পত্রে বেশ কিছু ঘটনা এবং তারিখ তুলে ধরে তিনি দাবি করেন, পুলিশ দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলেও ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক অপরাধীকে বাঁচিয়ে দিয়েছেন। ঘটনাগুলির পুর্নতদন্তেরও দাবি করেন তপনবাবু।

চিঠিতে নড়ে বসে প্রশাসন। ১৬ জুন পূর্বস্থলী ২ ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের আধিকারিককে চিঠি পাঠান অতিরিক্ত জেলাশাসক (ভূমি ও ভূমি সংস্কার) অশোক সাহা। ১৯৫৫ সালের একটি আইনের কথা তুলে ধরে ওই আধিকারিককে তিনি জানান, সাত দিনের মধ্যে মাটি তুলে পুকুরটির আগের অবস্থায় ফিরিয়ে দিতে হবে। নাহলে পুকুরের দুই মালিকের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করারও নির্দেশ দেন তিনি। অতিরিক্ত জেলাশাসক জানান, খোঁজ নিয়ে জানা গিয়েছে বাইরে থেকে প্রচুর মাটি ফেলা হয়েছে পুকুরে। তাই ওই চিঠি পাঠানো হয়েছে। আর প্রাক্তন বিধায়কের ভিজিল্যান্সে চিঠি পাঠানো নিয়ে তাঁর জবাব, ‘‘এটা ওই দফতরের বিষয়। তারাই তদন্ত করে যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার নেবেন।’’

চিঠি পাওয়ার পরে বৃহস্পতিবার বিকেলে পূর্বস্থলী ২ ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক বলেন, ‘‘অতিরিক্ত জেলাশাসকের চিঠি পেয়েছি। বিধায়ককে খুব শীঘ্রই নোটিস পাঠানো হচ্ছে।’’ চিঠির কথা স্বীকার করেছেন তপনবাবুও। তিনি বলেন, ‘‘এখনও বলছি, আগেও বলেছি বেআইনি ভাবে প্রদীপবাবু পুকুর বুজিয়েছেন। এলাকার ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর বেআইনি কাজকে সমর্থন করেছে। ২৫ কাঠা এলাকা জুড়ে মাটি ফেলা হয়েছে। অথচ রিপোর্টে রয়েছে মাত্র ৩০ হাজার সিএফটি মাটি ফেলা হয়েছে।’’ যদিও অভিযোগটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবি বিধায়কের।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement