Maharani Konar Death

আর ব্রিগেড যাওয়া হল না মহারানি কোঙারের

রবিবার ব্রিগেড সমাবেশ। তার আগে মহারানির দেখা ‘দিন বদলের স্বপ্নের’ কথা মনে করছেন দলের নেতা-কর্মীরা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মেমারি শেষ আপডেট: ০৬ জানুয়ারি ২০২৪ ০৯:২৭
Share:

মেমারির মহারানি কোঙার। ফাইল চিত্র।

“যতবার ব্রিগেড হবে, ততবারই আমি যাব। সেই ১৪ বছর বয়স থেকে ব্রিগেড যাচ্ছি”— কয়েক বছর আগেই মেমারির ‘লালবাড়িতে’ বসে এ কথা বলেছিলেন তিনি। মাস দেড়েক আগে ৯০ বছর বয়সেও ডিওয়াইএফের ‘ইনসাফ যাত্রায়’ পা মেলাতে দেখা গিয়েছিল তাঁকে। শুক্রবার দুপুর ১টা ৫২ মিনিটে বার্ধক্যজনিত কারণে ওই বাড়িতেই প্রয়াত হলেন সিপিএম নেত্রী, তিন বারের বিধায়ক মহারানি কোঙার।

Advertisement

রবিবার ব্রিগেড সমাবেশ। তার আগে মহারানির দেখা ‘দিন বদলের স্বপ্নের’ কথা মনে করছেন দলের নেতা-কর্মীরা। ২০১৪ সালে মহারানিদেবীর স্বামী, সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বিনয় কোঙারের মৃত্যুর পরে মেমারিতে দলের লড়াইয়ের অন্যতম মুখ ছিলেন তিনি। জীবনের শেষ দিনেও সিপিএমের সদস্য ছিলেন। তাঁর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আভাস রায়চৌধুরী, অঞ্জু কর, রাজ্য কমিটির সদস্য অমল হালদার, অচিন্ত্য মল্লিক, দলের জেলা কমিটির সম্পাদক সৈয়দ হোসেনরা। সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের কথায়, “বর্ধমানে বাম আন্দোলনে হরেকৃষ্ণ কোঙার, তাঁর ভাই বিনয় ও তাঁর স্ত্রী মহারানির অবদানের শেষ নেই।’’

মহারানীদেবীর বড় ছেলে সুকান্ত কোনার বলেন, “শেষ সময় পর্যন্ত মা দলের সদস্য ছিলেন। যখনই সময় পেয়েছেন, সভা-সমিতি-মিছিলে পা মিলিয়েছেন। বিভিন্ন ভোটে প্রচার করেছেন।” ছোট ছেলে অভিজিত জানান, নভেম্বরে ইনসাফ যাত্রায় রাস্তায় নেমেছিলেন মহারানি। ব্রিগেড যাওয়ারও ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। প্রায় দিন ছেলেদের সঙ্গে রাজনৈতিক আলোচনাও করতেন। গত ১৫ ডিসেম্বর তাঁর পেসমেকার বদলানো হয়। তারপর থেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। সেই ধাক্কা আর সামলে উঠতে পারলেন না। তাঁর দুই মেয়ের একজন দীপা লাহা মেমারিতেই থাকেন। আর একজন শ্বেতা হালদার মুম্বইয়ে থাকেন। সিপিএম সূত্রে জানা গিয়েছে, আজ, শনিবার সকালে লালবাড়ি থেকে দেহ মেমারির কালীতলার এরিয়া কমিটির অফিসে নিয়ে যাওয়া হবে। সেখান থেকে চেকপোস্ট পর্যন্ত শোক মিছিল হবে। তারপরে বর্ধমানের পার্কাস রোডে জেলা অফিসে দেহ নিয়ে যাওয়া হবে। তারপরে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে দেহ দান করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

Advertisement

১৯৩৩ সালের ২৩ নভেম্বর হুগলির আরামবাগের কাছে মলয়পুরে জন্মেছিলেন মহারানিদেবী। ১৪ বছর বয়সে বিবাহসূত্রে কোঙার পরিবারের আসেন। জড়িয়ে যান কমিউনিস্ট আন্দোলনে। ১৯৫৮ সালে দলের সদস্য পদ পান। বিনয় কোঙারের ছেড়ে যাওয়া আসনেই ১৯৮২ থেকে ১৯৯৬ পর্যন্ত টানা তিন বার মেমারির বিধায়ক হন। তাঁর সময়েই মেমারি পুরসভা হয়, বাসস্ট্যান্ড গড়ার কাজ শুরু হয়। সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য সনৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, “সত্তর দশকে আধা ফ্যাসিবাদী শক্তির সামনে দাঁড়িয়ে দলের কর্মী-সমর্থকদের রক্ষা করেছিলেন তিনি। শ্রমিক, কৃষক, মহিলাদের মধ্যে সংগঠন গড়ে তুলেছিলেন।” আর এক নেতার কথায়, ‘‘মেমারির লালবাড়ি থেকে আমাদের আন্দোলনের পরিকল্পনা নেওয়া হত। মহারানিদেবী এই বয়সেও দিন বদলের স্বপ্ন দেখতেন। এই বয়সেও পথে নেমে কর্মীদের পাশে দাঁড়াতেন।’’

বর্ধমান ২ ব্লকের আউশা গ্রামের সিপিএমের এক কর্মী জানান, ৮৭ বছর বয়সে নেত্রীর পা ভেঙে গিয়েছিল। সেই সময় ব্রিগেড হয়েছিল। নাছোড়বান্দা নেত্রীকে গাড়ি করে ব্রিগেড নিয়ে যেতে হয়েছিল সে বার। এ বার আর যাওয়া হল না তাঁর।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement