Coronavirus

সাইকেলে ঘরে ফিরল ছেলে, ম্যারাপ বাঁধলেন বাবা

আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেট এবং পশ্চিম বর্ধমান জেলা স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছে, স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়েছে বান্টির।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৩ মে ২০২০ ০৬:১২
Share:

মধ্যপ্রদেশ থেকে ফিরে বাড়িতে বিশ্রামে। নিজস্ব চিত্র

মেসে খাবারের টান। খবর রাখেননি কারখানা কর্তৃপক্ষ। সহকর্মীরা বাড়ি ফিরতে শুরু করেছিলেন। এই পরিস্থিতিতে আর ফাঁকা ঘরে থাকার সাহস করেননি পশ্চিম বর্ধমানের বার্নপুরের বান্টি বাউড়ি। তাই, মধ্যপ্রদেশের সাতনা থেকে টানা প্রায় পাঁচ দিন সাইকেল চালিয়ে প্রায় ৭৭৫ কিলোমিটার পথ উজিয়ে বাড়ি ফিরলেন বেসরকারি সংস্থার কর্মী বান্টি। পুলিশ ও স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছে, বছর ২৮-এর ওই যুবক সুস্থ রয়েছেন। করোনা-সতর্কতায় ছেলের থাকার জন্য বাড়ির বাইরে ম্যারাপ বেঁধে দিয়েছেন বাবা অভিমন্যুবাবু।

Advertisement

আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেট এবং পশ্চিম বর্ধমান জেলা স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছে, স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়েছে বান্টির। তিনি সুস্থ রয়েছেন, এই শংসাপত্র দেওয়া হয়েছে। তবে তাঁকে ১৪ দিন গৃহ পর্যবেক্ষণে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে করোনা-সতর্কতায় প্রশাসনের নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করা হচ্ছে বলে জানান বান্টির বাবা অভিমন্যুবাবু। তিনি বলেন, ‘‘বাড়ির বাইরে ম্যারাপ বেঁধে দিয়েছি। সেখানেই আপাতত থাকছে ছেলে। ছেলের ফেরার খবর পুলিশকেও জানিয়েছি। করোনার সঙ্গে লড়াইয়ে এটুকু করতেই হবে।’’

বার্নপুরের আমবাগান লাগোয়া ঠাকুরপুকুরের বাসিন্দা বান্টি জানান, মাস ছয়েক আগে সাতনায় প্রসাধন প্রস্তুতকারক একটি সংস্থার বিপণন দফতরের কর্মী হিসেবে যোগ দেন তিনি। সেখানে সংস্থার মেসে অন্যদের সঙ্গে থাকতেন। দেওয়া হত দু’বেলা খাবারও। কিন্তু, ‘লকডাউন’-এর জেরে কর্মজীবনে ছন্দ কাটে।

Advertisement

বান্টির দাবি, সংস্থা উৎপাদন বন্ধ রেখেছে। এই পরিস্থিতিতে কর্মীদের মাইনে না দেওয়ার কথা জানান কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি, খাবারের জোগানও প্রায় বন্ধ করে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। নিজের টাকায় ক’দিন খাওয়াদাওয়া করলেও, দীর্ঘমেয়াদি ভিত্তিতে তা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব ছিল না, জানান বাণ্টি। এই পরিস্থিতিতে সহকর্মীরা একে-একে বাড়ি ফিরতে শুরু করেন। মেস ফাঁকা হয়ে যায়। শেষমেশ গত ২৬ এপ্রিল, ভোর ৩টে নাগাদ সঙ্গের সাইকেল নিয়ে পথে বেরিয়ে পড়েন তিনি।

যুবক জানান, জাতীয় সড়ক ধরে দিনে সাইকেল চালিয়েছেন তিনি। রাতে বিভিন্ন রাজ্যের নানা বাজার এলাকায় কোনও দোকানের বারান্দায় আশ্রয় নিতেন। পথে, স্থানীয় প্রশাসন এবং স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের দেওয়া খাবার খেয়েছেন। কখনও বা পকেটের কিছু টাকা দিয়েও খাবার কিনে খেতে হয়েছে।

বান্টি বলেন, ‘‘মধ্যপ্রদেশ, উত্তরপ্রদেশ, বিহার, ঝাড়খণ্ড-সহ পথে পড়া সব রাজ্যের সীমানায় স্বাস্থ্য পরীক্ষা হয়েছে। ৩০ এপ্রিল রাত ১২টা নাগাদ বরাকরের বেগুনিয়া চেকপোস্ট দিয়ে রাজ্যে ঢুকেছি।’’ শনিবার ঠাকুরপুকুরে গিয়ে দেখা গেল, ম্যারাপের তলায় বিছানায় শুয়ে বিশ্রাম নিচ্ছেন তিনি। সঙ্গে রয়েছে পথের সঙ্গী সাইকেলটিও। তিনি বলেন, ‘‘শরীরে-মনে আর কোনও কষ্ট নেই। কিন্তু অতটা সাইকেল চালিয়েছি বলে পায়ে খুব ব্যথা। আশা করি, বাড়িতে থেকে সেটাও কেটে যাবে।’’

(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেনআপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement