রাজ্যে ফেরার পরে। নিজস্ব চিত্র
খাদ্য-সঙ্কট, ছাত্রাবাস বন্ধ হয়ে যাওয়া-সহ নানা কারণে ‘লকডাউন’-এ অনিশ্চয়তায় দিন কাটছিল ওঁদের। শেষমেশ রাজ্য সরকারের তদ্বিরের ফলে, বাড়ি ফিরতে পেরে খুশি রাজস্থানের কোটায় প্রশিক্ষণ নিতে যাওয়া জেলা-সহ রাজ্যের পড়ুয়ারা। বাড়ি ফিরে কোটায় কেমন সমস্যার মধ্যে দিন কাটছিল, তা বলছেন তাঁরা।
কোটায় প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন পশ্চিম বর্ধমানের পাণ্ডবেশ্বর নামোপাড়ার রাখি চট্টোপাধ্যায়। তিনি জানান, তাঁদের হস্টেলে ৫৫ জন থাকতেন। ‘লকডাউন’-এর পরে, তাঁরা মাত্র পাঁচ জন হস্টেলে ছিলেন। মিলছিল না জলখাবার। একই ভাবে একশো জনের হস্টেলে তাঁরা মাত্র বারো জন ছিলেন বলে জানান আসানসোলের আত্রেয়ী মুখোপাধ্যায়। দু’জনেই বলেন, ‘‘খুবই সমস্যার মধ্যে ছিলাম। খাওয়াদাওয়া, স্বাস্থ্য, চিকিৎসা পরিষেবা, সব কিছু নিয়েই আতঙ্কে ছিলাম। পরিবারের সঙ্গে ভিডিয়ো কলিংয়ে যোগাযোগ রাখতাম সব সময়। বাড়ি ফিরে খুবই ভাল লাগছে।’’ দু’জনের অভিভাবক যথাক্রমে শুভেন্দুবাবু এবং ঊর্মিদেবীরা জানান, খুবই চিন্তায় ছিলেন। শেষমেশ, সমস্যার সমাধান হওয়ায় তাঁরা পশ্চিমবঙ্গ ও রাজস্থান, দুই রাজ্য সরকারকেই ধন্যবাদ জানিয়েছেন। শুক্রবার বাস পশ্চিমবঙ্গ-ঝাড়খণ্ড সীমানায় পশ্চিম বর্ধমানের ডুবুরডিহিতে পৌঁছনো মাত্র ‘অদ্ভুত নিশ্চিন্ত লাগছিল’, বলেন কোটায় প্রশিক্ষণ নিতে যাওয়া বার্নপুরের অম্বালিকা দাসও।
কিন্তু বাড়ি ফিরেও কোটার দিনগুলিকে ভুলতে পারছেন না চিত্তরঞ্জনের বাসিন্দা মেঘনা নন্দী। তিনি বলেন, ‘‘খাদ্য-সঙ্কট শুরু হয়েছিল। যা খাবার পাচ্ছিলাম, আকাশছোঁয়া দাম।’’ কোটায় প্রশিক্ষণ নিতে যাওয়া নাতনির সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন বাঁকুড়ার সিমলাপালের সুষমা দেবী। তিনি জানান, ‘লকডাউন’-এর জেরে আটকে পড়ায় অথৈ জলে পড়েছিলেন। সমস্যা পড়ার কথা জানান উত্তর ২৪ পরগনার রুদ্রনীল বিশ্বাস নামে এক পড়ুয়াও।
শুক্রবার কুলটি ও কাঁকসার চারটি জায়গায় রাজ্যের পড়ুয়াদের নিয়ে বাসগুলি ফেরে। সেখান থেকে তাঁরা যে জেলার বাসিন্দা, সেখানে পাঠানো হয়। জেলা স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছে, পশ্চিম বর্ধমানের ২৫৯ জন পড়ুয়ার স্বাস্থ্যপরীক্ষা করানো হয়। তবে কারও লালারসের নমুনা সংগ্রহ করা হয়নি। প্রত্যেকের নাম, পরিচয়, যোগাযোগের নম্বর রাখা হয়েছে। প্রয়োজনে যোগাযোগ করা হবে।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, শুক্রবার পড়ুয়াদের স্বাগত জানিয়েছেন রাজ্যের শ্রম ও আইনমন্ত্রী মলয় ঘটক, আসানসোল পুরসভার মেয়র জিতেন্দ্র তিওয়ারি, দুর্গাপুর পুরসভার মেয়র দিলীপ অগস্তি প্রমুখ। বৃহস্পতিবার রাত থেকেই গোটা ব্যবস্থার তদারক করেন জেলাশাসক (পশ্চিম বর্ধমান) পূর্ণেন্দু মাজি, আসানসোল-দুর্গাপুরের পুলিশ কমিশনার সুকেশকুমার জৈন। কমিশনার বলেন, ‘‘জেলা থেকে পুলিশকর্মী ও আধিকারিকদের উপস্থিতিতে অত্যন্ত সুবন্দোবস্ত-সহ পড়ুয়াদের বাড়ি পাঠানো হয়েছে।’’