বর্ধমানের বিসি রোডে একটি মদের দোকানের সামনে লাইন। মঙ্গলবার দুপুরে। ছবি: উদিত সিংহ
এই হার বজায় থাকলে ছাপিয়ে যাবে দফতরের রাজস্ব আদায়ের রেকর্ড, মদের দোকান খোলার পরে দু’দিনের বিক্রি দেখে এমনটাই মনে করছেন পূর্ব বর্ধমানের আবগারি আধিকারিকদের অনেকে।
‘লকডাউন’-এ প্রায় দেড় মাস মদের দোকান বন্ধ ছিল। সোমবার বিকেল থেকে শর্তসাপেক্ষে তা খুলেছে। জেলা আবগারি দফতর জানায়, দুপুর ১২টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত মদের দোকান খোলা রাখা যাবে। সোমবার এই নির্দেশিকা পেয়ে দোকান খোলার পর থেকেই পড়ছে লম্বা লাইন। ৩০ শতাংশ বেশি দাম দিয়েও মদ কেনার জন্য এমন লাইন দেখে হাসি ফুটেছে জেলার আবগারি দফতরের।
আবগারি দফতর সূত্রে জানা যায়, সোমবার বিকেলে তিন ঘণ্টায় জেলায় ৯২টি দোকান খুলেছিল। মদ বিক্রি হয়েছে প্রায় ৫,৮০০ লিটার। মঙ্গলবার সাত ঘণ্টায় জেলার ১৭২টি দোকান থেকে প্রায় ১৭,৪০০ লিটার মদ বিক্রি হয়েছে। জেলা আবগারি দফতরের এক কর্তার হিসাবে, প্রথম দু’দিনে ১০ ঘণ্টায় প্রায় এক কোটি ৭০ লক্ষ ৫২ হাজার টাকার মদ বিক্রি হয়েছে। জেলা আবগারি দফতরের সুপারিন্টেন্ডেন্ট তপনকুমার মাইতি বলেন, ‘‘মদের দোকানের সামনে লম্বা লাইন থেকেই বোঝা যাচ্ছে, কী রকম চাহিদা রয়েছে।’’
মদের দোকান খোলা নিয়ে সুরাপ্রেমীদের মধ্যে চর্চা চলছিল বেশ কিছু ধরেই। মাঝে মদের ‘হোম ডেলিভারি’র গুজবও তৈরি হয়েছিল। তবে কার্যক্ষেত্রে তা হয়নি। শেষমেশ মদের দোকান খুলতেই জমছে ভিড়। এ দিন দুপুর ১২টার সময়ে দোকান খোলার কথা থাকলেও, নানা জায়গায় সকাল থেকেই লম্বা লাইন পড়ে। অনেকে ব্যাগ, হেলমেট বা ইট রেখেও লাইন দেন। অনেক জায়গাতেই স্বাস্থ্যবিধি মেনে পারস্পরিক দূরত্ব রাখা হয়নি বলে অভিযোগ। ক্রেতাদের কেউ কেউ এসেছিলেন মুখে ‘মাস্ক’ ছাড়াই। তবে অনেক দোকানের সামনেই ‘মাস্ক’ ছাড়া মদ দেওয়া হবে না বলে নোটিস দেওয়া হয়েছিল।
তবে কোনও ক্রেতাকেই দু’টির বেশি বোতল দেওয়া হয়নি। আবগারি দফতর মদ ব্যবসায়ীদের তেমনই নির্দেশ দিয়েছে। তা সত্ত্বেও দু’দিনে দেড় কোটি টাকার বেশি দামের মদ বিক্রি হওয়ায় জেলার আবগারি কর্তারা মনে করছেন, এত রকম বিধিনিষেধ, ‘অন শপ’ বন্ধ থাকার পরেও, ‘লকডাউন’-এর মধ্যে যে মদের চাহিদা তুঙ্গে রয়েছে, তা বোঝা যাচ্ছে। জেলার পুলিশ-প্রশাসন গত বেশ কিছু দিন ধরে অভিযান চালিয়ে প্রচুর চোলাই উদ্ধার করেছে। গ্রেফতার করা হয়েছে বেশ কয়েকজনকে। প্রশাসনের কর্তারা মনে করছেন, মদ বিক্রি বাড়লে চোলাই বিক্রি কমবে। রাজস্ব আদায়ের পাশাপাশি, সেটাও ভাল লক্ষণ।
গত বছর পূর্ব বর্ধমানে আবগারি দফতরের রাজস্ব আদায় দেড়শো কোটিতে পৌঁছে গিয়েছিল পুজোর মরসুমেই। আবগারি দফতর সূত্রে জানা যায়, গত বছর গরমের সময়ে বিয়ারের বিক্রি ৫৫ শতাংশ বেড়েছিল। এ বার সে রেকর্ড ছাপিয়ে যাবে কি না, সেটাই প্রশ্ন দফতরের কর্তাদের কাছে।