রবিবার আসানসোলের একটি বাজারে। নিজস্ব চিত্র
‘লকডাউন’ বাড়ছে, এই ঘোষণার পরে রবিবার জেলার গুরুত্বপূর্ণ বাজারগুলিতে উপচে পড়ল ক্রেতার ভিড়। করোনা-সতর্কতায় সামাজিক দূরত্ব রক্ষার বিধিকে কার্যত বুড়ো আঙুল দেখিয়েই চলল কেনাকাটা।
প্রশাসনের নিষেধ উড়িয়ে এ দিন সকাল থেকে আসানসোলের গোপালপুরে জিটি রোডের দু’পাশে আনাজ ও মাছ, মাংসের পসরা সাজিয়ে বসেছিলেন বিক্রেতারা। কাতারে কাতারে ক্রেতার ভিড় দেখা গিয়েছে আসানসোলের কোর্ট বাজারেও। ভিড়ের মধ্যে বাজার করতে থাকা হিলভিউয়ের বাসিন্দা অন্তিম বিশ্বাস বলেন, “লকডাউন বেড়েছে। তাই নিত্য প্রয়োজনীয় সবকিছু মজুত করে রাখতেই হবে।”
শহরবাসীর আপত্তিতে গত সপ্তাহে আসানসোলের মূল বাজার এলাকা থেকে আনাজ ও মাছ বাজারটি ইস্টার্ন রেল স্কুলের মাঠে সরানো হয়েছে। এখানেও কয়েক হাজার ক্রেতার ভিড় জমে এ দিন। তবে গত কয়েক দিন ভিড় দেখা গেলেও নিয়ামতপুরের বাজারে এ দিন পরিস্থিতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে ছিল।
পাশাপাশি, দুর্গাপুরের বেনাচিতি বাজারেও ভিড় জমে এ দিন। ভিড় নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে প্রথমে অনুনয়, পরে বাজারের একাংশ স্থানান্তর, পরে ছবি এঁকে সচেতনতার বার্তা দেওয়া হয়েছে এখানে। কিন্তু তার পরেও টনক নড়েনি।
তবে বাজারের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এ দিন সকাল থেকেই সক্রিয় ভূমিকায় দেখা যায় পুলিশকে। বেনাচিতি বাজারে ভিড় হঠাতে লাঠি হাতে তাড়া করতে দেখা যায় পুলিশকে। ভবিষ্যতে এমন ঘটনা ঘটলে আইনি পদক্ষেপ করার হুঁশিয়ারি দিয়েছে পুলিশ। পাশাপাশি, দোকানের সামনে ক্রেতারা নিরাপদ দূরত্ব না রাখলেও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না করা কিছু ব্যবসায়ীকে সতর্ক করে পুলিশ। নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস ছাড়া অন্য সামগ্রীর বিকিকিনি করা কয়েকজন দোকানদারদের তাঁদের ‘বন্ধ’ দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। ক্রেতা এলে দোকান থেকে জিনিস দিচ্ছেন তাঁরা। এমন দোকানদারদেও সতর্ক করে পুলিশ। টোটো ও অটো চালকদের পুলিশ জানায়, ফের ঘোরাঘুরি করলে কড়া পদক্ষেপ করা হবে। আসানসোলের বিভিন্ন বাজারেও ভিড় নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করতে দেখা যায় পুলিশকে।
আসানসোল-দুর্গাপুরের পুলিশ কমিশনার সুকেশকুমার জৈন জেলার বাসিন্দাদের লকডাউনের শর্ত মেনে চলা, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার অনুরোধ করেছেন। অতিরিক্ত জেলাশাসক খুরশিদ আলি কাদরির আশ্বাস, “নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের জোগান নিয়ে সমস্যা নেই। জনসাধারণের কাছে অনুরোধ, অযথা আতঙ্কিত হবেন না।”
পাশাপাশি, পুলিশের তৎপরতাকে স্বাগত জানিয়েছে বিভিন্ন বণিকসভাও। দুর্গাপুর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ়ের সভাপতি কবি দত্ত বলেন, “সমস্ত ব্যবসায়ীর কাছে আমাদের আর্জি, প্রশাসনের জারি করা সমস্ত নিয়ম মেনে চলুন। আমরা সব সময় প্রশাসনের পাশে আছি।” সেই সঙ্গে করোনা মোকাবিলায় সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা কতটা জরুরি, সে কথা ফের মনে করিয়ে দিয়েছেন দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালের সুপার দেবব্রত দাস।