চলেছে সরকারি বাস। আসানসোলে। নিজস্ব চিত্র
আন্তঃরাজ্য ও আন্তঃজেলা যাত্রীবাহী বাস চলাচলের অনুমতি দিয়েছে রাজ্য সরকার। সেই মতো পশ্চিম বর্ধমানের দুই মহকুমা আসানসোল ও দুর্গাপুর থেকে দূরপাল্লার বাস পরিষেবা চালু করল দক্ষিণবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগম (এসবিএসটিসি)। বুধবার সকাল থেকে শুরু হয়েছ এই পরিষেবা। পরিবহণ দফতর সূত্রের খবর, আজ, বৃহস্পতিবার থেকে আন্তঃশহর বাস পরিষেবাও শুরু করার পরিকল্পনা রয়েছে এসবিএসটিসি কর্তৃপক্ষের। এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছে ‘আইএনটিটিইউসি’ প্রভাবিত পরিবহণ কর্মী সংগঠন। তবে এর সঙ্গে শীঘ্রই বেসরকারি বাস পরিষেবা চালু করারও দাবি জানিয়েছেন সংগঠনের নেতা-কর্মীরা।
১ জুন থেকে যাত্রীবাহী বাস চলাচলের সরকরি নির্দেশ জারি করা হয়েছে। কিন্তু ‘ভাড়া’ নিয়ে জট না কাটায় এ বিষয়ে বেসরকারি বাস ও মিনিবাস মালিকেরা এখনও কোনও সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারেননি বলে জানা গিয়েছে। তবে এ দিন সকালে আসানসোল থেকে দূরপাল্লার সরকারি বাস পরিষেবা চালু হওয়ায় খুশি যাত্রীরা। এসবিএসটিসি-র আসানসোল ডিপো সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন সকালে কলকাতা-করুণাময়ী, পুরুলিয়া, বীরভূম, দুর্গাপুরের উদ্দেশে আটটি বাস রওনা দিয়েছে আসানসোল থেকে। অপরিবর্তিত ভাড়ায় ন্যূনতম ২০ জন করে যাত্রী নিয়ে যাত্রা শুরু করেছে বাসগুলি। আসানসোল ডিপোর আধিকারিক বিভাস সরকার বলেন, ‘‘প্রত্যেকটি বাস নির্বিঘ্নে নির্দিষ্ট গন্তব্যে রওনা দিয়েছে।’’
এসবিএসটিসি সূত্রে জানা গিয়েছে, পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত প্রতিদিন বুকিং কাউন্টার থেকেই টিকিট কেটে যাত্রীরা বাসে চাপবেন। পরে সুযোগমতো ‘অনলাইন বুকিং’ও চালু করা হবে। এ দিন সকালে আসানসোল সিটি বাসস্ট্যান্ডের বুকিং কাউন্টার থেকে টিকিট কেটে বাসে ওঠেন করুণাময়ীর যাত্রী দিব্যেন্দু দাম। পুরনো ভাড়াতেই সরকারি বাসে চেপে গন্তব্যে পৌঁছতে পেরে খুশি তিনি।
আন্তঃশহর বাস পরিষেবা প্রসঙ্গে নিগম কর্তৃপক্ষ জানান, আজ, বৃহস্পতিবার থেকেই প্রাথমিক ভাবে আসানসোল স্টেশন থেকে বার্নপুর, কুলটি, বরাকর, রানিগঞ্জ ও চিত্তরঞ্জন রুটে চলতে পারে সরকারি বাস। আইএনটিটিইউসি প্রভাবিত ‘মোটর ট্রান্সপোর্ট ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন’-এর দাবি, অবিলম্বে বেসরকারি বাস পরিষেবা চালু করে শহরের জনজীবন স্বাভাবিক করা হোক। বেসরকারি পরিবহণ শ্রমিকদের আয়ের পথ সুগম করা হোক।
সংগঠনের নেতা রাজু অহলুওয়ালিয়া বলেন, ‘‘১ জুন থেকে বেসরকারি বাস পরিষেবা চালু না হলে, আমরা আন্দোলনে নামব।’’ এ প্রসঙ্গে অতিরিক্ত জেলাশাসক (পরিবহণ) প্রশান্ত মণ্ডল বলেন, ‘‘বেসরকারি মালিকদের ভাড়া না বাড়িয়ে অর্ধেক সংখ্যক যাত্রী নিয়ে বাস চালানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। তাঁদের সঙ্গে ফের আলোচনা করা হবে।’’
অন্য দিকে, দুর্গাপুরের সিটি সেন্টার বাসস্ট্যান্ড থেকে কলকাতার উদ্দেশে প্রথম বাসটি (এসবিএসটিসি) রওনা হয় এ দিন সকাল ৭টা নাগাদ। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, দুর্গাপুর ডিপো থেকে ৬টা ৫০ মিনিট নাগাদ করুণাময়ীগামী বাসটি আসে সিটি সেন্টার বাসস্ট্যান্ডে। হাতেগোনা কয়েকজন যাত্রী ওঠেন বাসে। যাত্রীদের ‘গ্লাভস’ ও ‘মাস্ক’ পরে বাসে উঠতে হয়। বাসের কন্ডাক্টার গৌতম ঘোষ জানান, চালক ও কন্ডাক্টারদের সুরক্ষার জন্য সংস্থার তরফ থেকে ‘পিপিই কিট’ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া, ‘গ্লাভস’, ‘মাস্ক’ ও হাতশুদ্ধি আছেই।
এসবিএসটিসি সূত্রে জানা গিয়েছে, সরকার নির্দেশিত দূরত্ববিধি মেনে তিন আসন বিশিষ্ট সিটে দু’জন ও দুই আসন বিশিষ্ট সিটে এক জন যাত্রীকে বসানো হচ্ছে। ২০ জন যাত্রী অথবা মোট আসনের ৫০ শতাংশ, যে সংখ্যাটা বেশি, ততজন যাত্রী নিয়ে বাস চলার অনুমতি মিলেছে। বাস, ডিপোতে নিয়মিত জীবাণুনাশক ছড়ানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। বাস গন্তব্যে পৌঁছনোর পরে এক বার ও ডিপোয় ফেরার পরে ফের জীবাণুনাশক ছড়ানো হবে বাসে। বাসে ওঠার আগে যাত্রীদের তাপমাত্রা মাপা হবে। নির্দিষ্ট স্বাস্থ্যবিধি মেনে যাত্রা করতে হবে সব যাত্রীকে।
এ দিন রাজ্যের বিভিন্ন ডিপো মিলিয়ে ‘এসবিএসটিসি’র মোট ১৬৩টি বাস রাস্তায় নামে। তার মধ্যে দুর্গাপুর ডিপো থেকে এ দিন ১৯টি বাস বিভিন্ন রুটে চলাচলের জন্য রাস্তায় নেমেছিল। করুণাময়ী ছাড়া, বাসগুলি ওমরপুর, বহরমপুর, বোলপুর, বাঁকুড়া, বলরামপুর, পুরুলিয়া, কালনা, আসানসোল ও দুর্গাপুর সিটি সার্ভিস রুটে চলাচল করেছে। কর্মীদের সুরক্ষার জন্য বিশেষ নজরদারির ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে জানিয়েছে এসবিএসটিসি। সে জন্য নজরদারি কমিটি গঠন করা হয়েছে। সেই কমিটি বাস, ডিপো, বাসস্ট্যান্ড প্রভৃতি জায়গায় যথাযথ জীবাণুমুক্ত করার ব্যবস্থা হচ্ছে কি না তা খতিয়ে দেখবে। এসবিএসটিসি’র ম্যানেজিং ডিরেক্টর গোদালা কিরণকুমার বলেন, ‘‘বাসে যাত্রী পরিবহণের জন্য যাবতীয় সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’’