প্রতীকী ছবি
সরকারি নির্দেশ অনুযায়ী, লাইসেন্স ছাড়া, অক্সিজেন সিলিন্ডার মজুত করা যায় না। তাই মেডিক্যাল অক্সিজেন সিলিন্ডার নয়, ছোট ‘পোর্টেবল অক্সিজেন ক্যান’ কেনার হিড়িক পড়েছে দুর্গাপুরে, জানাচ্ছেন শহরের চিকিৎসা সামগ্রী বিক্রেতাদের একাংশ। অথচ, অক্সিজেন বাড়িতে কিনে রাখার যৌক্তিকতা নিয়েই প্রশ্ন রয়েছে ডাক্তারদের মধ্যে। তাঁদের মতে, রোগীর শরীরে কতটা অক্সিজেনের দরকার, সেই পরিমাপ মতো অক্সিজেন সরবরাহ করতে হয়।
করোনা-আক্রান্ত হলে শ্বাসকষ্ট হয় অনেক ক্ষেত্রেই। তখন অক্সিজেনের দরকার পড়ে। এই ধারণা থেকে বড় মেডিক্যাল অক্সিজেন সিলিন্ডার কিনে বাড়িতে নিয়ে গিয়ে রাখার প্রবণতা শুরু হয়েছিল দেশ জুড়ে। তা রুখতে কিছু দিন আগে কেন্দ্রীয় পেট্রলিয়াম মন্ত্রক জানায়, অনুমতি ছাড়া, মেডিক্যাল অক্সিজেন সিলিন্ডার কেনা বেআইনি। ধরা পড়লে আইনি পদক্ষেপ করা হবে। এর পরেই এই ক্যান কেনার প্রবণতা বেড়েছে বলে জানা গিয়েছে। সিটি সেন্টার, বিধাননগর-সহ শহরের নানা প্রান্তের কয়েকজন চিকিৎসা সরঞ্জাম বিক্রেতা জানান, চাহিদা অনুযায়ী জোগান কম থাকছে অনেক সময়েই। সে সব ক্ষেত্রে বেশি দাম দিয়েও ক্রেতারা অক্সিজেন ক্যান কিনে বাড়ি নিয়ে যাচ্ছেন। এই চাহিদা কেমন, সে খোঁজ মিলেছে দুর্গাপুরের বিভিন্ন দোকানগুলিতে খোঁজখবর করেও। বেনাচিতির এক বিক্রেতা জানান, সাধারণ সময়ে তাঁর কাছে পাঁচ-দশটি ক্যান থাকত। এখন, সেটাই প্রায় প্রায় ৩০-এ ঠেকেছে।
দোকানে খোঁজ নিয়ে জানা গেল, ‘রুম ফ্রেশনার’-এর আকারের বোতলে ৫০০ মিলিলিটারের তরল অক্সিজেন ভরা থাকে। মুখে থাকা যন্ত্রে চাপ দিলে অক্সিজেন গ্যাস বেরিয়ে আসে। এই ক্যানগুলির বাজারচলতি দাম, প্রায় ৭৫০ টাকা। কিন্তু ‘সুযোগ’ বুঝে অনেক দোকানই ১,৩০০-১,৪০০ টাকা পর্যন্ত দাম নিচ্ছে বলে ক্রেতাদের অভিযোগ। ওষুধ ব্যবসায়ীদের সূত্রে জানা গেল, ওষুধের ক্ষেত্রে বেশি দামে বিক্রি সম্ভব নয়। কিন্তু চিকিৎসা সামগ্রীর ক্ষেত্রে দাম বেশি নেওয়ার প্রবণতা দেখা যায় অনেকের মধ্যে। তবে ওষুধ ব্যবসায়ীদের সংগঠন ‘বেঙ্গল কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট অ্যাসোসিয়েশন’-এর দুর্গাপুর জোনের সভাপতি জয়দেব কুণ্ডুর দাবি, ‘‘সে ভাবে বেশি দাম কেউই নেন না। যা এমআরপি থাকে, সেই অনুযায়ী দাম নেওয়া হয়।’’
জেলায় করোনা মোট আক্রান্ত ২,৮১৮ অ্যাক্টিভ রোগী: ৮৬৮ এখনও পর্যন্ত সুস্থ: ১,৯২৬ মৃত: ২৪ **শনিবার রাতে প্রকাশিত বুলেটিনে। হিসেব ২১ অগস্ট পর্যন্ত (সূত্র: রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর)
কেন কেনা হচ্ছে এ সব ক্যান? মামরাবাজারের বাসিন্দা এক ক্রেতা বলেন, ‘‘বলা তো যায় না, করোনা-পরিস্থিতিতে যদি কাজে লাগে।’’ একই কথা স্টিল টাউনশিপের এক ক্রেতারও। কিন্তু এই ‘উদ্বেগ’ বা ‘আশঙ্কা’ সম্পূর্ণ অমূলক বলে জানাচ্ছেন ডাক্তারেরা। তাঁরা জানান, এ ভাবে বাড়িতে অক্সিজেন মজুত করাটা অবৈজ্ঞানিক। কারণ, কারও অক্সিজেন দরকার হলে তাঁর প্রয়োজন অনুযায়ী অক্সিজেন সরবরাহ করতে হবে। তা না হলে হিতে বিপরীত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। শুধু অক্সিজেনের অভাবেই যে শ্বাসকষ্ট হয়, এমনটাও নয়। তাই, তাঁদের পরামর্শ, কারও শ্বাসকষ্ট হলে তিনি যেন পরিচিত ডাক্তার অথবা নিকটবর্তী স্বাস্থ্যকেন্দ্র বা হাসপাতালের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালের সুপার ইন্দ্রজিৎ মাজি বলেন, ‘‘এ ভাবে অক্সিজেন ক্যান কেউ কিনবেন না। এর ফলে, তেমন পরিস্থিতি তৈরি হলে রোগীর স্বাস্থ্যের অবনতিও ঘটতে পারে।’’
(জরুরি ঘোষণা: কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য কয়েকটি বিশেষ হেল্পলাইন চালু করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই হেল্পলাইন নম্বরগুলিতে ফোন করলে অ্যাম্বুল্যান্স বা টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত পরিষেবা নিয়ে সহায়তা মিলবে। পাশাপাশি থাকছে একটি সার্বিক হেল্পলাইন নম্বরও।
• সার্বিক হেল্পলাইন নম্বর: ১৮০০ ৩১৩ ৪৪৪ ২২২
• টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-২৩৫৭৬০০১
• কোভিড-১৯ আক্রান্তদের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-৪০৯০২৯২৯)