আউশগ্রামের গঙ্গারামপুরে ঘিরে দেওয়া হচ্ছে আক্রান্তের এলাকা। রবিবার। ছবি: প্রদীপ মুখোপাধ্যায়
জেলায় এর আগে করোনা-আক্রান্তদের সকলের সঙ্গেই মিলেছিল কলকাতা-যোগ। কিন্তু এ বার তেমন কোনও যোগ নেই, এমন করোনা আক্রান্তের হদিস মিলল পূর্ব বর্ধমানে। আউশগ্রামের উক্তা পঞ্চায়েতের গঙ্গারামপুরের এক যুবকের করোনা-পরীক্ষার রিপোর্ট ‘পজ়িটিভ’ এসেছে শনিবার রাতে। বীরভূমের বোলপুর মহকুমা হাসপাতালে ডায়ালিসিস করাতে গেলে সেখানেই তাঁর নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষায় পাঠানো হয়েছিল। পূর্ব বর্ধমানের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক (সিএমওএইচ) প্রণব রায় রবিবার বলেন, ‘‘জেলায় এর আগে ছ’জন আক্রান্তের সঙ্গে সরাসরি কলকাতার যোগ ছিল। কিন্তু আউশগ্রামের যুবকের করোনার ‘পজ়িটিভ’ রিপোর্ট আমাদের চিন্তায় ফেলে দিয়েছে।’’
জেলা স্বাস্থ্য দফতর ও প্রশাসনের তরফে জানা যায়, আউশগ্রামের গঙ্গারামপুরের বছর উনিশের ওই যুবক বেশ কয়েক বছর ধরে কিডনি-সংক্রান্ত সমস্যায় ভুগছেন। প্রায় তিন বছর ধরে বোলপুর মহকুমা হাসপাতালে তাঁর ডায়ালিসিস চলছিল। চলতি মে মাসে প্রথম ১৫ দিনেই পাঁচ বার ডায়ালিসিস হয়েছে সেখানে। ১২ মে সেখানেই তাঁর লালারসের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। শনিবার রাতে ‘নাইসেড’ জানায়, ওই যুবকের শরীরে করোনার প্রমাণ মিলেছে।
এর আগে মুম্বই থেকে চিকিৎসা করে ফেরার পথে আউশগ্রামের এড়াল এলাকার এক মহিলা ও তাঁর ছেলের শরীরে করোনার প্রমাণ মিলেছিল। তাঁরা কাঁকসার বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের দাবি, আউশগ্রামের ওই এলাকায় তার প্রভাব পড়েনি। গঙ্গারামপুরের যুবকের পরিজনদের দাবি, জ্বর, সর্দি, গলাব্যথার মতো কোনও উপসর্গ লক্ষ্য করা যায়নি তাঁর শরীরে। ওই যুবক কি উপসর্গহীন করোনা-আক্রান্ত? জেলার স্বাস্থ্যকর্তাদের কাছে এর জবাব মেলেনি।
রবিবার সকালে ২বি জাতীয় সড়কের (বর্ধমান-সিউড়ি) ধারে গঙ্গারামপুর এলাকায় পুলিশের বড় বাহিনী যায়। ওই যুবককে প্রথমে কাঁকসার মল্লারপুরে ‘কোভিড-১৯’ (তৃতীয় ও চতুর্থ স্তর) হিসাবে গড়ে তোলা বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেয় জেলা স্বাস্থ্য দফতর। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ প্রশাসনকে জানান, তাঁদের কাছে ডায়ালিসিস করার কোনও ব্যবস্থা নেই। সে জন্য তাঁরা ওই যুবককে ভর্তি করাতে পারবেন না। জেলাশাসক (পূর্ব বর্ধমান) বিজয় ভারতী বলেন, “ওই যুবককে কলকাতার হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।’’ প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, কলকাতায় বাইপাসের ধারে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে তাঁকে। তাঁর প্রত্যক্ষ সংস্পর্শে আসায় পরিবারের ১০ জন-সহ মোট ৪২ জনকে বর্ধমানের গাংপুরে ‘প্রি-কোভিড’ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ওই যুবক গত কয়েক দিন ধরে গ্রামের বিভিন্ন জায়গায় গিয়েছেন। দোকান-বাজারেও তাঁকে দেখা গিয়েছে। পুলিশ জানায়, পরোক্ষ সংস্পর্শে কারা এসেছিলেন, তার তালিকা তৈরি করা হয়েছে। এ দিন স্থানীয় হামিরপুর বাসস্টপের দোকানপাট বন্ধ করে দেওয়া হয়। গ্রামে ঢোকার চার দিকে বাঁশের ব্যারিকেড করে ঘিরে দেওয়া হয়েছে। সব জায়গায় সিভিক ভলেন্টিয়ারেরা পাহারায় রয়েছেন। বিডিও (আউশগ্রাম ১) চিত্তজিৎ বসু বলেন, ‘‘এলাকায় জীবাণুনাশক স্প্রে করা হয়েছে। ‘সিল’ করা এলাকায় বাসিন্দারা যাতে কোনও অসুবিধায় না পড়েন, প্রশাসন ও পুলিশ খেয়াল রাখছে।’’
বোলপুর মহকুমা হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, ডায়ালিসিস করতে আসা রোগীর শরীরে করোনা ধরা পড়ায় আপাতত ইউনিটটি বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ওই রোগীর সংস্পর্শে আসা ডায়ালিসিস ইউনিটের চার জন কর্মীকে ‘হোম কোয়রান্টিন’-এ পাঠানো হয়েছে। আর কেউ তাঁর সংস্পর্শে এসেছিলেন কি না, তা খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।