Coronavirus

রাস্তায় বেড়া দিয়ে করোনা আটকানোর চেষ্টা দুই গ্রামে

‘লকডাউন’ চলাকালীন বাইরের কাউকে গ্রামে ঢুকতে দেওয়া হবে না বলে তাঁদের দাবি। ২বি জাতীয় সড়কের পাশে এই গ্রামটিতে ঢোকার মূল রাস্তায় বুধবার সকাল থেকে পালা করে পাহারা দিচ্ছেন এলাকার যুবকেরা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

আউশগ্রাম ও গলসি শেষ আপডেট: ২৬ মার্চ ২০২০ ০৮:১১
Share:

হামিরপুর গ্রাম। নিজস্ব চিত্র

মানুষজন যাতে বাড়ি থেকে না বেরোন, নানা এলাকায় তা নজরে রাখতে হিমসিম হচ্ছে পুলিশ-প্রশাসন। পূর্ব বর্ধমানের দুই এলাকায় দেখা গেল ভিন্ন ছবি। ‘লকডাউন’ চলাকালীন গ্রামের মানুষ যাতে বাইরে না যেতে পারেন এবং বাইরের এলাকা থেকেও যাতে কেউ না ঢুকতে পারেন, সে জন্য রাস্তায় বেড়া দিয়ে পাহারা দিচ্ছেন আউশগ্রাম ও গলসির দু’টি গ্রামের বাসিন্দারা। যদিও রাস্তা আটকে রাখা উচিত নয় বলে জানিয়েছে প্রশাসন।

Advertisement

আউশগ্রাম ১ ব্লকের উক্তা পঞ্চায়েতের হামিরপুর গ্রামের বাসিন্দাদের একাংশ করোনা মোকাবিলায় গ্রামে ঢোকা-বেরনোয় রাশ টেনেছেন। ‘লকডাউন’ চলাকালীন বাইরের কাউকে গ্রামে ঢুকতে দেওয়া হবে না বলে তাঁদের দাবি। ২বি জাতীয় সড়কের পাশে এই গ্রামটিতে ঢোকার মূল রাস্তায় বুধবার সকাল থেকে পালা করে পাহারা দিচ্ছেন এলাকার যুবকেরা। বাঁশের ব্যারিকেডও করেছেন তাঁরা। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, প্রায় ছ’শো জনসংখ্যার এই গ্রামের জনা পনেরো অন্যত্র কাজ করেন। তাঁদের কেউ ফিরলে গ্রামে ঢুকতে দেওয়া হবে বলে জানান ওই যুবকেরা।

গ্রামের বাসিন্দা নির্মল ঘোষ, শান্তনু ঘোষ, সুব্রত মুখোপাধ্যায়, মহাদেব বাগেরা জানান, এর মধ্যে এলাকায় যে ক’টি সামাজিক অনুষ্ঠান হওয়ার কথা ছিল, তা বন্ধ রাখা হয়েছে। কোনও প্রয়োজনে বাইরে যাওয়ার দরকার হলে, পরিবারের এক জনকে যেতে অনুরোধ করা হয়েছে। ফিরে এসে সাবান দিয়ে পরিষ্কার হওয়ার আর্জিও জানানো হয়েছে। এর মধ্যে কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার বিকল্প রাস্তার ব্যবস্থাও রয়েছে বলে তাঁদের দাবি। উক্তা পঞ্চায়েতের প্রধান মোজাফর শেখ বলেন, ‘‘সরকার সকলকেই বাড়ি থেকে বেরোতে নিষেধ করেছে। সে দিক দিয়ে দেখলে এটি ভাল উদ্যোগ। তবে স্বাস্থ্যকর্মী ও পুলিশ-প্রশাসনের লোকজন যাতে গ্রামে বিনা বাধায় ঢূকতে পারেন, তা খেয়াল রাখা উচিত।’’

Advertisement

গলসি ২ ব্লকের জয়কৃষ্ণপুর গ্রামে ঢোকার প্রধান রাস্তাতেও আড়াআড়ি ভাবে বাঁশ রেখে বেড়া দেওয়া হয়েছে। গ্রামের যুবক স্বরূপ ঘোষ, শ্রীমন্ত দত্ত, সজল মণ্ডল, নিমাই মালেরা দাবি করেন, লকডাউন যত দিন চলবে তত দিন বাইরের কেউ যাতে অকারণে গ্রামে ঢুকে না পড়েন, সে জন্য এই উদ্যোগ। তাঁরা আরও জানান, শুধু পথ আটকানো নয়, এত দিন যাঁরা কাজের সূত্রে ভিন্‌ রাজ্যে থাকতেন, গ্রামে ফেরার পরে তাঁদের বলা হয়েছে, ১৪ দিন যেন বাড়ির বাইরে না বেরোন।

ওই যুবকেরা বলেন, ‘‘গ্রামের মানুষ কেউ যাতে বাইরে না যান, সেটাও আমরা দেখব। কেউ যদি বাইরে না যান বা বহিরাগত কেউ না আসেন, সংক্রমণের ভয় থাকবে না।’’ তবে প্রশাসনের কেউ বা স্বাস্থ্যকর্মীরা এলে বেড়া সরিয়ে ঢুকতে দেওয়া হবে বলে জানান তাঁরা। এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন স্থানীয় কুরকুবা পঞ্চায়েতের প্রধান রূপা বাগদি। তাঁর মতে, ‘‘প্রত্যেক গ্রাম যদি এ ভাবে উদ্যোগী হত, আমার মনে হয় করোনাভাইরাস অনেকটাই

এড়ানো যেত।’’

যদিও আউশগ্রাম ১ বিডিও চিত্তজিৎ বসু বলেন, ‘‘যদি কেউ বাইরে থেকে এখন গ্রামে আসেন, বিষয়টি প্রশাসনকে জানালে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ভাবে রাস্তা আটকে রাখা বেআইনি।’’ গলসি ২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি বাসুদেব চৌধুরীও বলেন, ‘‘গ্রামের মানুষ নজর রাখছেন, সেটা ভাল। তবে সে জন্য ওখানে যাতে জমায়েত না হয়, তা খেয়াল রাখতে হবে। রাস্তাও আটকে রাখা উচিত নয়।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement