প্রথম দুই ম্যাচের পরে ফল ছিল ১-১। তৃতীয় বার প্রতিদ্বন্দ্বিতার পরিস্থিতিও তৈরি হয়েছিল। কিন্তু সেই সম্ভাবনার আপাতত ইতি। দুর্গাপুর পশ্চিম বিধানসভা আসনে জোটের তরফে কংগ্রেস প্রার্থী দেওয়ার কথা ঘোষণা হয়েছে। ফলে, তৃণমূলের অপূর্ব মুখোপাধ্যায় এবং সিপিএমের বিপ্রেন্দু চক্রবর্তীকে এ বার আর হয়তো ভোটের মাঠে মুখোমুখি দেখা যাবে না।
সিপিএম প্রার্থী বিপ্রেন্দুবাবু তৃণমূলের অপূর্ববাবুর সঙ্গে প্রথম বার প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয় ২০০৬ সালে। সে বার দুর্গাপুর ২ নম্বর বিধানসভা কেন্দ্রে জয়ী হন বিপ্রেন্দুবাবু। এর পরে ২০১১ সালে অবশ্য তিনি হারেন অপূর্ববাবুর কাছে। আসন্ন বিধানসভা ভোটে দুর্গাপুর পশ্চিম কেন্দ্রের প্রার্থী হিসেবে সিপিএম বিপ্রেন্দুবাবুর নাম ঘোষণা করে দিয়েছিল। কিন্তু কংগ্রেসের সঙ্গে আসন সমঝোতায় শেষ পর্যন্ত এই কেন্দ্রটি হয়তো ছেড়ে দিতে চলেছে বামেরা।
রবিবার কংগ্রেস রাজ্যে আরও যে ১৬টি আসনে প্রার্থী দেওয়ার কথা জানিয়েছে, তার মধ্যে দুর্গাপুর পশ্চিমের নাম রয়েছে। এই সব আসনের কয়েকটিতে সিপিএম প্রার্থী ঘোষণা করে দিলেও তা সরাতে তারা রাজি হয়েছে বলে দাবি করেছে কংগ্রেস। তবে এই তালিকাও যে চূড়ান্ত নয়, তা-ও জানানো হয়েছে। দুর্গাপুরের সিপিএম নেতৃত্বের দাবি, দুর্গাপুর পশ্চিম কেন্দ্রে তাঁদেরই প্রার্থী দিতে দেওয়ার জন্য নেতৃত্বের কাছে আবেদন জানাবেন।
সিপিএমের একটি অংশের মতে, ২০০৬ সালে বিপ্রেন্দুবাবু যখন প্রার্থী হন তখন তিনি ছিলেন পুরসভার মেয়র পারিষদ। তবে প্রায় সব কাজেই জড়িত থাকতেন তিনি। ২০১১ সালে ভোটের সময়ে অবশ্য তাঁর সেই প্রভাব ছিল না। ২০১২ সালে সিপিএম তাঁকে পুরভোটে প্রার্থী করে। ২১ নম্বর ওয়ার্ডে প্রার্থী হয়ে হেরে যান তিনি। কিন্তু ২০১১ সালের বিধানসভা ভোটে যে ওয়ার্ডে সিপিএম প্রায় ৩৭ শতাংশ ভোট পেয়েছিল, পুরভোটে সেখানে পায় প্রায় ৪০ শতাংশ ভোট।
কিন্তু দলের ভোট বাড়লেও দলে বিতর্কের মুখে পড়েন বিপ্রেন্দুবাবু। সিপিএমের একাংশের অভিযোগ, পুরভোটে প্রচারে তেমন সক্রিয় ভাবে দেখা যায়নি বিপ্রেন্দুবাবুকে। ভোটের দিনে তৃণমূলের বিরুদ্ধে সিপিএম ভোটলুঠের অভিযোগ আনে। ২১ নম্বর ওয়ার্ডের সিপিএম কর্মীদের একাংশের দাবি, শহরের বিভিন্ন জায়গায় দল প্রতিরোধের রাস্তা নিলেও এই ওয়ার্ডে কার্যত আত্মসমর্পণ করে। বিপ্রেন্দুবাবুকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে দেখা যায়নি বলে ওই কর্মীদের আক্ষেপ। পরে বার্নপুরে দলের জেলা সম্মেলনেও বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা হয় বলে সিপিএম সূত্রের খবর। এর পরে আর দলের নানা কর্মসূচিতে বিপ্রেন্দুবাবুকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতেও দেখা যায়নি বলে আক্ষেপ দলীয় কর্মীদের।
তার পরেও বিপ্রেন্দুবাবুকে এ বার প্রার্থী করার কথা জানায় সিপিএম। সিপিএম সূত্রের খবর, দলের জেলা নেতৃত্বের একাংশের তরফে রাজ্য নেতৃত্বের কাছে এ নিয়ে আপত্তিও জানানো হয়। সে কারণেও আসন সমঝোতায় এই কেন্দ্র কংগ্রেসকে ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়ে থাকতে পারে বলে দলের অনেকের অনুমান। বিপ্রেন্দুবাবুর সমর্থনে দেওয়াল লিখন শুরু হয়ে গিয়েছিল শহরে কয়েক জায়গায়। আপাতত সে সব বন্ধ রাখা হয়েছে।
কংগ্রেস সূত্রে জানা গিয়েছে, এই কেন্দ্রে প্রার্থী পদের জন্য তিন জন আইএনটিইউসি নেতার নাম পাঠানো হয়েছে। এক জন ডিপিএল, এক জন দুর্গাপুর স্টিল প্ল্যান্ট এবং আর এক জন বাস কর্মী সংগঠনের নেতা। তবে এখনও কোনও নাম চূড়ান্ত হয়নি। দলের জেলা শিল্পাঞ্চল সভাপতি দেবেশ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘প্রদেশ নেতৃত্বের নির্দেশ মেনে প্রার্থীর নাম পাঠানো হয়েছে।’’
যদিও এখনই এই কেন্দ্রে প্রার্থী দেওয়ার ব্যাপারে হাল ছাড়তে নারাজ দুর্গাপুরের সিপিএম নেতৃত্ব। দলের দুর্গাপুর পূর্ব ২ জোনাল সম্পাদক পঙ্কজ রায় সরকার বলেন, ‘‘এখনও চূড়ান্ত কিছু বলার সময় আসেনি।’’ তাঁর দাবি, এই কেন্দ্র কংগ্রেসকে ছেড়ে দেওয়ার ব্যাপারে কোনও নির্দেশ সোমবার রাত পর্যন্ত দলীয় নেতৃত্বের কাছ থেকে তাঁরা পাননি। তা ছাড়া এই শিল্পাঞ্চলে শ্রমিক স্বার্থে সিটুর ধারাবাহিক আন্দোলনের ঐতিহ্য রয়েছে। তাঁর আরও দাবি, জেলা কমিটির বৈঠকে বন্ধুত্বপূর্ণ লড়াই হওয়া আসনগুলির মধ্যে দুর্গাপুর পশ্চিম থাকলে আপত্তি নেই বলেও দাবি উঠেছে। বিপ্রেন্দুবাবু অবশ্য এ সব নিয়ে কোনও কথা বলতে চাননি। তিনি জানান, দল যেমন নির্দেশ দেবে, সে ভাবেই এগোবেন তিনি।