অভিযোগ জানাতে ব্যস্ত কর্মীরা। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে। নিজস্ব চিত্র।
কয়েক দিন পরেই অবসর। তার আগে কর্মসমিতির বৈঠকে কর্মচারীদের একাংশের ক্ষোভের মুখে পড়লেন বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য স্মৃতিকুমার সরকার।
বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজবাটির প্রশাসনিক ভবনে তৃণমূল প্রভাবিত কর্মচারী সংগঠনের হাতে প্রায় দু’ঘণ্টা ঘেরাও হন উপাচার্য। নিয়োগ, পদোন্নতি থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা দুর্নীতি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন ওই কর্মচারীরা। ছাত্রদের একাংশের সঙ্গেও কর্মচারীদের গোলমাল বাধে। বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে পৌঁছয় পুলিশবাহিনি। শেষমেশ, বৈঠক বাতিল করে দেন উপাচার্য। আটকে যায়, কর্মরত অবস্থায় মৃতের পোষ্যদের চাকরি কিংবা পরীক্ষা পদ্ধতি নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, এ দিন কর্মসমিতিতে স্মারকলিপি দেওয়ার জন্য আগে থেকেই সময় নিয়েছিলেন তৃণমূল প্রভাবিত দুই সংগঠন। বেলা ১২টা নাগাদ বৈঠক শুরু হতেই বর্ধমান ইউনিভার্সিটি কর্মচারী সমিতি ও সারা বাংলা শিক্ষাবন্ধু সমিতির কর্তা থেকে সদস্যেরা উপাচার্যের ঘরে ঢুকে পড়েন। নিয়োগ, পদোন্নতি, দুর্নীতি নিয়ে চিৎকার শুরু করেন তাঁরা। চুপচাপ বসে থাকেন উপাচার্য, রেজিস্ট্রার থেকে বীরভূম, হুগলি, বাঁকুড়া থেকে কর্মসমিতিতে যোগ দিতে আসা সদস্যেরা। এরই মধ্যে উপাচার্যের ঘরের সামনে ছাত্রদের সঙ্গে হাতাহাতি বেধে যায় সারা বাংলা শিক্ষা বন্ধু সমিতির কয়েক জন কর্মচারীরা। আহত কর্মচারীরা উপাচার্যের কাছে গিয়ে অভিযোগ করতে থাকেন। সেই সময় রেজিস্ট্রার দেবকুমার পাঁজা সমস্ত দাবিগুলি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দেন এবং কর্মসমিতি সুষ্ঠু ভাবে চালানোর জন্য কর্মচারীদের সাহায্য চান। এরপরে ইউনিভার্সিটি কর্মচারী সমিতির সদস্যরা চলে গেলেও শিক্ষাবন্ধু সমিতির সদস্যরা থেকে গিয়ে একের পর এক অভিযোগ করতে থাকেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন (বিজ্ঞান)কে লক্ষ্য করেই সমিতির সম্পাদক নীলেন্দুকুমার ঘোষের অভিযোগ, “কর্মসমিতির গুরুত্বপূর্ণ সদস্যের মেয়েকে বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ করা হয়। আবার তাঁর জন্যেই নাকের সদস্যের কাছে বিশ্ববিদ্যালয়ের মাথা হেঁট হয়। ফিনান্স অফিসারের ভাইকে নিয়োগ করা হয়, অথচ বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারীদের নিয়োগ বা পদোন্নতি হয় না।’’ এক বছর আগে পরীক্ষা হলেও চতুর্থ শ্রেণির কর্মীদের পদন্নোতি আটকে রয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি। তাঁদের আরও দাবি, একটি ক্যাটারিং সংস্থার প্রস্তাব মতো বছরে মাত্র আড়াই লক্ষ টাকার বিনিময়ে রেস্তোঁরা করার অনুমোদন দিয়েছেন কর্তৃপক্ষ, অথচ অন্য একটি সাত লক্ষ টাকা দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিল। কর্মসমিতির বৈঠক চান না বলেও দাবি করেন তাঁরা।
গোলমালের খবর পেয়ে এসডিপিও (বর্ধমান সদর), বর্ধমানের আইসি বাহিনি নিয়ে ক্যাম্পাসে আসেন। উপাচার্যও ঘোষণা করেন, ‘‘বেলা ১২টায় বৈঠক শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু অনেকটা সময় পেরিয়ে গিয়েছে। তাই কর্মসমিতির বৈঠক বাতিল করা হল।’’আর অভিযোগ নিয়ে তাঁর বক্তব্য, ‘‘অনেকেই হাওয়ায় অভিযোগ করেন, এ নিয়ে আর কী বলব!’’