নিয়ম-ভেঙে: ২বি জাতীয় সড়ক ধরে যাত্রী নিয়ে ছুটছে মোটরভ্যান। আউশগ্রামের কেশবপুরে। ছবি: প্রদীপ মুখোপাধ্যায়
প্রয়োজন পাঁচ হাজার গাড়ি রাখার জায়গা। সেখানে নিয়ম মেনে গাড়ি রাখা যায় ২২৫টি! ফল, বাকি গাড়ি রাস্তার পাশে মোরামে দাঁড়িয়ে থাকে। মাঝেমাঝে দুর্ঘটনাও ঘটে। সবমি লিয়ে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়েতে গাড়ি রাখা নিয়ে চিন্তা যাচ্ছে না জেলা পুলিশের।
পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় রাজ্য পুলিশের ট্র্যাফিক বিভাগে এ নিয়ে বারবার চিঠি পাঠিয়েছেন। কয়েকদিন আগে এডিজি (ট্র্যাফিক) বিবেক সহায়, আইজি (ট্র্যাফিক) তন্ময় রায়চৌধুরীর নেতৃত্বে উচ্চ পর্যায়ের একটি দল পূর্ব বর্ধমান এলাকার মধ্যে থাকা দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে ঘুরে দেখেন। কথা বলেন ওই রাস্তার দায়িত্বে থাকা আধিকারিকদের সঙ্গেও। যত দিন যাবে, গাড়ির সংখ্যা যে বাড়তে থাকবে, তা নিয়ে একমত হয়েছেন সব পক্ষ। কিন্তু এই সমস্যার চটজলদি কোনও সমাধানের পথ বাতলাতে পারেননি জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ। শুধু গাড়ি রাখার সমস্যা নয়, পথ নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিভিন্ন নির্দেশিকা ঠিকমতো লাগানো নেই। এমনকি, যে সব জায়গায় নির্দেশিকা লাগানো আছে, অনেক ক্ষেত্রেই সেগুলি অবৈজ্ঞানিক ভাবে লাগানো আছে বলে বিপদ বাড়ছে বলে পুলিশকর্তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
জেলা পুলিশ সুপার বলেন, “ওই সব বিষয় ছাড়া, দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের সঙ্গে যে সব রাস্তার যোগ রয়েছে, সেই সব রাস্তার মুখে গাড়ি গতি কমানো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে।’’
নিয়ম অনুযায়ী, দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়েতে ৩০ কিলোমিটার অন্তর ‘লে-বাই’ (যেখানে গাড়ি দাঁড়ায়) থাকার কথা। অথ,চ পূর্ব বর্ধমানের ফাগুপুর থেকে গলসির সিমনোড় পর্যন্ত ৩৫ কিলোমিটার রাস্তায় ‘লে-বাই’ নেই। পুলিশ সূত্রে জানা যায়, পালশিট টোল প্লাজ়া দিয়ে প্রতিদিন গড়ে ১৮ হাজার গাড়ি যাতায়াত করে। এর বাইরে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের উপরে পূর্ব বর্ধমানের ৭০ কিলোমিটার এলাকা রাস্তা জুড়ে অন্তত পাঁচ হাজার গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকে। তার মধ্যে ফাগুপুর, শক্তিগড় ও জামালপুরের নবগ্রামে ২৫০ মিটার লম্বা ‘লে-বাই’ রয়েছে। যেখানে নিয়ম মেনে ২২৫টি গাড়ি দাঁড়াতে পারে। বাকি গাড়ি রাস্তার উপরেই ‘অবৈধ’ ভাবে দাঁড়িয়ে থাকে। ফলে, অনেক সময় দুর্ঘটনা ঘটে। আইনশৃঙ্খলারও সমস্যা দেখা দেয়। জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের কাছে এই প্রশ্নও রাখেন পুলিশকর্তারা।
দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের কর্তারা জানান, পানাগড় থেকে ডানকুনি পর্যন্ত ছ’লেন রাস্তা তৈরির কাজ শুরু হতে চলেছে। তখন প্রতি ১৫ কিলোমিটার অন্তর এক কিলোমিটার লম্বা ‘লে-বাই’ রাখা হবে। তাতে বড়জোর দেড় হাজার গাড়ি রাখার ব্যবস্থা হবে। তাতেও যে সমস্যা মিটবে না, তা পুলিশকর্তারা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন। তাঁদের দাবি, ছ’লেন তৈরি হতে হতে কয়েক বছর কেটে যাবে। তখন গাড়ির চাপ আরও বাড়বে। তখন শুধু ‘লে-বাই’তে গাড়ি রেখে সমস্যা কাটবে না। প্রয়োজন হবে ট্রাক-টার্মিনাসের। সেই কারণে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের উপরে পূর্ব বর্ধমানে অন্তত দু’টি ট্রাক-টার্মিনাস তৈরির প্রস্তাবও দিয়েছে পুলিশ।