সুপারের অফিসের সামনে বিক্ষোভ রোগীর পরিবারের। নিজস্ব চিত্র
হাসপাতালের সিটি স্ক্যান যন্ত্র খারাপ। তাই রোগীকে পাঠাতে হয়েছিল হাসপাতালের সুপার স্পেশ্যালিটি বিভাগ অনাময়ে। কিন্তু সেখানে পরীক্ষা হওয়ার পরে জানানো হয়, রিপোর্ট পেতে সাত দিন সময় লাগবে। এর জেরে চিকিৎসা শুরু না হওয়ায় রোগীমৃত্যুর অভিযোগ উঠল বর্ধমানে।
মঙ্গলবার বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে বিক্ষোভ দেখান রোগীর পরিজনেরা। হাসপাতালের সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগও করেন। সুপার উৎপল দাঁ জানান, সিটি স্ক্যানের রিপোর্ট পেতে এক দিন সময় লাগে। কেন সাত দিন লাগল, তা দেখা হবে। অনাময় হাসপাতালের সিটি স্ক্যান পরিষেবা দেওয়া সংস্থাকে শো-কজ করা হবে বলে জানান তিনি।
বর্ধমানের ভিটার খরিড্যা গ্রামের কালাচাঁদ মালিককে (৩৮) এ দিন সকালে মাথায় যন্ত্রণা ও বমির উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ভর্তি করানো হয়। ঘণ্টা তিনেক পরে তাঁর মৃত্যু হয়। এর পরেই বিক্ষোভে ফেটে পড়েন পরিজনেরা। তাঁদের অভিযোগ, একই উপসর্গ নিয়ে সপ্তাহ দুয়েক আগে কালাচাঁদবাবুকে জরুরি বিভাগে আনা হলে চিকিৎসকেরা তাঁকে বহির্বিভাগে যেতে বলেন। বহির্বিভাগের ডাক্তার ওষুধ দেন এবং সিটি স্ক্যান করাতে বলেন। এই হাসপাতালের সিটি স্ক্যান যন্ত্র খারাপ থাকায় তাঁদের অনাময়ে পাঠানো হয়। সেখানে ১৬ অগস্ট সময় দেওয়া হয়। সিটি স্ক্যানের পরে জানানো হয়, রিপোর্ট মিলবে সাত দিন পরে।
পরিজনেরা জানান, ১৭ অগস্ট ফের মাথায় যন্ত্রণা শুরু হলে রোগীকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বহিবির্ভাগে আনা হয়। সেখান থেকে চক্ষু বিশেষজ্ঞের কাছে পাঠানো হয়। পরে ফের বহির্বিভাগে গেলে কিছু ওষুধ দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। মঙ্গলবার ভোরে ফের কালাচাঁদবাবুর যন্ত্রণা শুরু হলে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ভর্তি করানো হয়। পরিজনদের দাবি, তাঁরা অনাময়ে সিটি স্ক্যানের রিপোর্ট আনতে ছুটে যান। কিন্তু রিপোর্ট নিয়ে ফেরার আগেই মারা যান কালাচাঁদবাবু।
মৃতের পরিবারের লোকজন সুপারের অফিসের সামনে বিক্ষোভ শুরু করেন। হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্প ও বর্ধমান থানার পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। মৃতের ভাই শ্যামল মালিক, অমিত মালিকদের অভিযোগ, ‘‘শুধু জ্বরের ওষুধ দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছিল। চিকিৎসকেরা ভাল ভাবে দেখলে হয়তো দাদাকে বাঁচানো যেত। সিটি স্ক্যান রিপোর্ট আগে পেলে হয়তো রোগ ধরা পড়ত।’’
হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, সিটি স্ক্যান রিপোর্টে মাথায় টিউমার জাতীয় কিছু রয়েছে বলে ধরা পড়েছে। কেন রিপোর্ট পেতে এত সময় লাগল, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানান।