Confusion with Nyay Samhita

‘ন্যায় সংহিতা’র নানা নিয়মে বিভ্রান্তির নালিশ

নতুন আইন নিয়ে ইতিমধ্যে রাজ্য ও জেলাস্তরে প্রশিক্ষণ হয়েছে। পুলিশের শীর্ষ কর্তারা কলকাতায় দু’দিন ধরে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বর্ধমান শেষ আপডেট: ০২ জুলাই ২০২৪ ০৯:৩৮
Share:

কাটোয়া আদালতে ক্লার্কদের কর্মবিরতি। নিজস্ব চিত্র।

ব্রিটিশ শাসনের সময় থেকে চালু তিনটে আইন সোমবার থেকে বাতিল হয়ে গেল। ১৮৬০ সালে তৈরি হওয়া ‘ইন্ডিয়ান পেনাল কোড’ বা ভারতীয় দণ্ডবিধির পরিবর্তে চালু হল ‘ভারতীয় ন্যায় সংহিতা’। ১৮৯৮ সাল থেকে চালু হওয়া ‘ক্রিমিনাল প্রোসিডিওর অ্যাক্ট’ (ফৌজদারি বিধি)-র বদলে ‘ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতা’ এবং ১৮৭২ সালের ‘ইন্ডিয়ান এভিডেন্স অ্যাক্ট’ (ভারতীয় সাক্ষ্য আইন)-র বদলে ‘ভারতীয় সাক্ষ্য অধিনিয়ম’ কার্যকর হয়েছে। নতুন আইনের বিরুদ্ধে বর্ধমান জেলা ও কাটোয়া-কালনা আদালতে আইনজীবীরা এ দিন কর্মবিরতি পালন করেন। নতুন আইনে কী কী অপরাধ ও তার শাস্তি হিসাবে কী বলা হয়েছে, তা নিয়ে আইনজীবীদের একাংশের ধন্দ কাটেনি। নতুন আইনে সাক্ষ্য সংগ্রহে অডিয়ো-ভিডিয়োর উপরে জোর দেওয়া হয়েছে। যা নিয়ে পুলিশ মহলেও প্রশ্ন রয়েছে।

Advertisement

নতুন আইন নিয়ে ইতিমধ্যে রাজ্য ও জেলাস্তরে প্রশিক্ষণ হয়েছে। পুলিশের শীর্ষ কর্তারা কলকাতায় দু’দিন ধরে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। পূর্ব বর্ধমানে ৮ জন ‘মাস্টার ট্রেনার’ এক সপ্তাহ ধরে হাতেকলমে ও অনলাইনে জেলার সব এসআই ও এএসআইদের প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। পুলিশ মহলের দাবি, বেশ কিছু আইনের ধারায় পরিবর্তন আনা হয়েছে। আগে গণপিটুনি বা ছিনতাইয়ের জন্য আলাদা ধারা ছিল না। নতুন আইনে তা আনা হয়েছে। নাবালিকা ধর্ষণের আইন কঠোর হয়েছে। আগে সংঘঠিত অপরাধের জন্য বিশেষ ধারা ছিল না, এখন একাধিক দুষ্কৃতী অপরাধে জড়িত থাকলে ওই ধারা দেওয়ার সুযোগ থাকছে। তাতে জামিন সহজে মিলবে না। আবার আদালতের অনুমতি নিয়ে পুলিশ পলাতক অভিযুক্তের সম্পত্তির ‘দখল’ নিতে পারলেও বিক্রি করার সুযোগ ছিল না। নতুন আইনে ইডি-সিবিআইয়ের মতো, সেই সুযোগও পুলিশের থাকছে।

আইনজীবীদের একাংশ মনে করছেন, স্রেফ নাম পরিবর্তন করা হয়েছে। আদতে পুরনো আইনের ৯৫ শতাংশই এক রয়েছে। সোমবার থেকে নতুন আইন শুরু হলেও রবিবার পর্যন্ত যে মামলা হয়েছে, তার পুরনো আইনেই বিচার হবে। বর্ধমান আদালতের আইনজীবী মোল্লা মহতাবউদ্দিন বলেন, “একটা বিভ্রান্তিকর অবস্থা তৈরি হয়েছে। বিচারক, আইনজীবীরা ধন্দে। সাধারণ বিচারপ্রার্থীরা কী ভাবে বিচার পাবেন? নতুন ও পুরনো আইন একসঙ্গে চলবে, অথচ পরিকাঠামো নেই।” আইনজীবীদের দাবি, বর্ধমান জেলা আদালতেই ১৯টি এজলাস রয়েছে। এর বাইরে কাটোয়া-কালনা আদালত রয়েছে। পরিকাঠামোর অভাবে সব মিলিয়ে ৫০ হাজারের মতো মামলা জমে রয়েছে। এই সংখ্যা দিনদিন বাড়বে। কালনা আদালতের এক আইনজীবীর সরস মন্তব্য, “নতুন আইনের জেরে আর অভিজ্ঞ আইনজীবী রইল না। সবাই অনভিজ্ঞ হয়ে গেল। তিন দিনের প্রশিক্ষণে কী আর শেখা যায়!”

Advertisement

বর্ধমান আদালতের আইনজীবী কমল দত্ত, কাটোয়া আদালতের আইনজীবী ধীরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়রা বলেন, “নতুন আইনে আদালতও সরাসরি এফআইআরের নির্দেশ দিতে পারবেন না। পুলিশের রিপোর্টের উপর নির্ভর করতে হবে। তাহলে সাধারণ মানুষ যাবে কোথায়?” বর্ধমান আদালতের আর এক আইনজীবী উদয় কোনারের দাবি, “নতুন আইনে পুলিশকেই অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। এতে নাগরিকের সাংবিধানিক অধিকার খর্ব হবে।” কালনা আদালতের বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি প্রসেনজিৎ মণ্ডল বলেন, “কালা কানুনের বিরুদ্ধেই আইনজীবীদের কর্মবিরতি।”

নতুন আইনে ঘটনাস্থল থেকে কোনও কিছু বাজেয়াপ্ত করতে হলে পুরো প্রক্রিয়ার ভিডিয়ো করতে বলা হয়েছে। এই বিষয়টি নিয়েই ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে পুলিশ মহলে। পুলিশ সূত্রের খবর, নতুন ‘ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতা’ আইনে বলা হয়েছে, বাজেয়াপ্ত-পর্ব ক্যামেরার সাহায্যে রেকর্ড করতে হবে। ক্যামেরা না থাকলে কর্তব্যরত পুলিশ অফিসার নিজের মোবাইল ফোনে পুরো প্রক্রিয়া রেকর্ড করতে পারবেন। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সেই রেকর্ডিং স্থানীয় ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে জমা দিতে হবে। পুলিশের একাংশের মতে, ভিডিয়ো-রেকর্ড করার জন্য লোক দরকার, জমা দেওয়ার নির্দিষ্ট পদ্ধতি দরকার। কিন্তু এখানে কী পদ্ধতিতে তা করতে হবে বা কোনও কারণে সিডি বা পেনড্রাইভ না খুললে কী করণীয়, তা বলা নেই। খরচের প্রসঙ্গও জানানো হয়নি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement