হিরা বাউরি। ফাইল চিত্র
দলের ভাবমূর্তি ঠিক রাখতে বিতর্কে জড়ানো কাউন্সিলরদের এ বার পুরভোটে আর প্রার্থী করেনি তৃণমূল। কিন্তু কাউন্সিলর থাকুন বা না থাকুন, হিরা বাউরির নাম বিতর্কে জড়াচ্ছেই। শনিবার সন্ধ্যায় ফরিদপুরে ব্যবসায়ীর বাড়িতে ঢুকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে তাঁরই কিছু অনুগামীর বিরুদ্ধে।
২০১২ সালে তৃণমূলের কাউন্সিলর হওয়ার পর থেকে বারবার বিতর্কে জড়িয়েছেন হিরা। ২০১৩ সালে জাতীয় সড়কের ধারে একটি মাল্টিপ্লেক্সে জোর করে একটি সিনেমার প্রদর্শন বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। সে বছরই পারিবারিক বিবাদ মেটানোর নামে বশে দলের কার্যালয়ে এক মহিলাকে চড় মারা, সিটি সেন্টারের এক পানশালায় হামলা, তথ্যপ্রযুক্তি পার্কে গোলমাল পাকানোর অভিযোগ ওঠে তাঁর বিরুদ্ধে। ২০১৪ সালে হিরা ও তাঁর অনুগামীদের বিরুদ্ধে ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগ করেন এক মহিলা। গাঁধী মোড়ের তথ্যপ্রযুক্তি পার্কে ঢুকে একটি সংস্থার কর্মী ও ডিরেক্টরকে মারধর ও গাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগও ওঠে তাঁর বিরুদ্ধে। এই ঘটনায় জামিন পেয়ে গেলেও ধর্ষণের চেষ্টার মামলায় হিরা ও তাঁর তিন অনুগামীকে ১৪ দিন জেল-হাজতে কাটাতে হয়।
তথ্যপ্রযুক্তি পার্কে হামলায় দলীয় স্তরে রিপোর্ট চেয়েছিলেন তৎকালীন দলের জেলা (শিল্পাঞ্চল) সভাপতি অপূর্ব মুখোপাধ্যায়। রিপোর্ট পেয়ে হিরাকে সতর্কও করেন তিনি। কিন্তু কিছু দিন পরেই ২০১৫ সালে হিরার বিরুদ্ধে হ্যানিম্যান সরণির রাস্তা তৈরির দায়িত্বে থাকা এক ঠিকাদারকে টাকা চেয়ে মারধরের অভিযোগ ওঠে। দল তাঁকে ‘শো-কজ’ করে। এর পরে পুরভোটে আগে, গত ৫ জুন ফরিদপুরে দোকানের সামনে গাড়ি রাখা নিয়ে বিবাদের জেরে হিরা ও তাঁর অনুগামীদের হাতে আক্রান্ত হওয়ার অভিযোগ করেন ওষুধ ব্যবসায়ী সুমন্ত মণ্ডল। শনিবার রাতে সুমন্তবাবু ও তাঁর বাবা সত্যেন্দ্রবাবুকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে হিরার অনুগামীদের বিরুদ্ধে।
দুর্গাপুরের প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক বিপ্রেন্দু চক্রবর্তীর অভিযোগ, ‘‘তৃণমূলে নাম লেখালেই যেন যা খুশি করার ছাড়পত্র মেলে। ওদের দলের নেতা-কর্মীদের আচরণে শহরের মানুষ সন্ত্রস্ত!’’ তৃণমূলের দুর্গাপুর জেলা সভাপতি উত্তম মুখোপাধ্যায় অবশ্য জানান, হিরা এখন দলের কোনও পদে নেই। সাধারণ সমর্থক ছাড়া আর কিছুই নন তিনি। উত্তমবাবুর কথায়, ‘‘দলের নাম করে কারও গুন্ডামি মানা হবে না। অভিযোগের তদন্ত করে পুলিশ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিক।’’
হিরা যদিও অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তাঁর দাবি, শনিবার দুপুর থেকে তিনি শহরেই নেই। তবু চক্রান্ত করে তাঁর নাম জড়ানো হয়েছে। তাঁর বক্তব্য, ‘‘ওই পরিবারের সঙ্গে গ্রামের কিছু বাসিন্দার পুরনো বিবাদ রয়েছে। তা থেকে এমনটা হয়ে থাকতে পারে।’’ ব্যবসায়ী সুমন্তবাবু যদিও তা মানতে চাননি। হিরার সঙ্গে পুরনো একটি গোলমালের জেরেই এই হামলা বলে পাল্টা দাবি করেন তিনি।