Kazi Nazrul University

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের পথ আটকে হুমকি

অভিযোগ, এই পরিস্থিতিতে টোটোয় তুলে দিয়ে কার্যত তাড়া করে ফের আসানসোল স্টেশনে নিয়ে যাওয়া হয় সজল ও তরুণকে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

আসানসোল শেষ আপডেট: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৮:২২
Share:

কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ। শুক্রবার। —নিজস্ব চিত্র।

কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা বিভাগের ডিন তথা তৃণমূলের শিক্ষক নেতা সজল ভট্টাচার্য এবং এক শিক্ষাকর্মীকে ধাওয়া করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠল কয়েক জনের বিরুদ্ধে। অভিযোগ, প্রাণনাশেরও হুমকি দেওয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েক জনের দাবি, অভিযুক্তদের মধ্যে তিন জন এলাকার পরিচিত তৃণমূলকর্মী। তৃণমূল অভিযোগ মানেনি। শুক্রবার আসানসোলের ঘটনা।

Advertisement

তৃণমূলের কলেজ শিক্ষক সংগঠন ওয়েবকুপার বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক সজল আসানসোল উত্তর থানায় লিখিত অভিযোগে জানান, সকালে তিনি ও শিক্ষাকর্মী তরুণ দাস বর্ধমান থেকে ব্ল্যাক ডায়মন্ড এক্সপ্রেসে চেপে আসানসোলে আসছিলেন। আসানসোল স্টেশনে নেমে বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার জন্য টোটোয় চাপেন দু’জনে। সজল বলেন, “টোটোয় চাপতেই বুঝতে পারি, তিনটি মোটরবাইকে চড়ে ছ’জন আমাদের পিছু ধাওয়া করছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের একশো মিটার আগে ওই ছ’জন আমাদের পথ আটকায় ও জোর করে টোটো থেকে নামানো হয়। ওরা জানায়, বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়া যাবে না। বাড়ি ফিরে যেতে হবে। প্রতিবাদ করলে, প্রাণসংশয় হতে পারে, এমন হুমকিও দেওয়া হয়।” সজলের দাবি, তিনি অভিযুক্তদের জিজ্ঞাসা করেন, কেন বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকতে বাধা দেওয়া হচ্ছে। অভিযুক্তেরা জানায়, ‘পার্টির নির্দেশ’। কোন দল, তা অবশ্য ভাঙেনি অভিযুক্তেরা।

অভিযোগ, এই পরিস্থিতিতে টোটোয় তুলে দিয়ে কার্যত তাড়া করে ফের আসানসোল স্টেশনে নিয়ে যাওয়া হয় সজল ও তরুণকে। পথেই সজল ফোনে বিষয়টি উপাচার্য দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়কে জানান। দেবাশিস আসানসোল উত্তর থানা ও এসিপি দেবরাজ দাসকে বিষয়টি জানান। আসানসোল উত্তর থানার পুলিশ সজল ও তরুণকে উদ্ধার করে বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছে দেয়। পুলিশ দেখে সরে যায় অভিযুক্তেরা। সজলের দাবি, তাঁরা তিন অভিযুক্তকে চিনতে পেরেছেন। তারা, শুভম আচার্য, কিরণ সাধু ও অর্পণ কর্মকার। চেষ্টা করেও তিন জনের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। বিষয়টি জানাজানি হতেই, শিক্ষক ও পড়ুয়াদের একাংশ অভিযুক্তদের শাস্তির দাবিতে উপাচার্যের দফতরের সামনে ধর্নায় বসেন। পুলিশ জানায়, তদন্ত শুরু হয়েছে।

Advertisement

কেন এই ঘটনা, তা নিয়ে ধন্দ রয়েছে। উপাচার্য দেবাশিস বলেন, “খোঁজ নিলেই জানা যাবে, ওই তিন অভিযুক্ত কাদের দ্বারা পরিচালিত। সজলবাবু বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনা ও প্রশাসনিক কাজে সাহায্য করছেন। এটা একটি শ্রেণি মানতে পারছে না।” বিষয়টি আচার্য তথা রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর দফতরে লিখিত ভাবে জানিয়েছেন দেবাশিস। তবে, সজল ঘটনার নেপথ্যে প্রাক্তন উপাচার্য সাধন চক্রবর্তীর আমলে বিশ্ববিদ্যালয়ের দীর্ঘদিনের অচলাবস্থার প্রসঙ্গটি টেনে এনেছেন। সজলের কথায়, “প্রাক্তন উপাচার্যের অনিয়মের প্রতিবাদ করে দীর্ঘ আন্দোলন করেছিলাম। এ দিনের ঘটনা তারই প্রতিক্রিয়া বলে মনে হচ্ছে।” একই দাবি তরুণেরও। যদিও, সাধনের বক্তব্য, “আশ্চর্য! ওঁরা আমার বিরুদ্ধে অন্যায় ভাবে বিরুদ্ধাচরণ করলেন। আমি এখন কিছুতেই নেই। এখনও রাগ কমছে না?”

বিষয়টি নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজাও। শুভম-সহ ওই তিন অভিযুক্ত তৃণমূলকর্মী হিসেবে এলাকায় পরিচিত, দাবি বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি সূত্রে। বিজেপির জেলা সভাপতি বাপ্পাদিত্য চট্টোপাধ্যায়ের তোপ, “স্বার্থে আঘাত লাগলে, দলের শিক্ষক-নেতাকেও যে তৃণমূল ছাড়ে না, শিক্ষাঙ্গনে রাজনীতি টেনে আনে, এই ঘটনা তার প্রমাণ।” যদিও, ওই তিন জনকে দলীয় কর্মী হিসেবে স্বীকার করেননি তৃণমূলের জেলা সভাপতি নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী। তাঁর বক্তব্য, “এমন কোনও ঘটনা ঘটে থাকলে, তা কাম্য নয়। চক্রান্ত করে তৃণমূলের নাম হাওয়ায় ভাসানো হচ্ছে।” তাঁর সংযোজন: “সজল ভট্টাচার্য বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে বিজেপি করেন!” কিন্তু সজল বিজেপি করলে, কী ভাবে তৃণমূলের শিক্ষক-সংগঠনের পদাধিকারী হন, সে প্রশ্নও করছেন কেউ-কেউ। যদিও, এ নিয়ে সজল বা নরেন্দ্রনাথ, কেউই কোনও মন্তব্য করেননি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement