দমকল থেকে পড়ুয়ার গাড়ি, থমকে সবই

আসানসোলের পাশাপাশি, ভিন্-জেলা এবং ঝাড়খণ্ডের বাসিন্দারাও যাতায়াত করেন এই রাস্তা দিয়ে। কিন্তু লেভেলক্রসিংয়ে আটকে পড়ে শহর। জট কাটাতে কুমারপুরে উড়ালপুল তৈরির পরিকল্পনা হলেও সেটির কাজ বন্ধই। কেন এই পরিস্থিতি, নাগরিক-দুর্ভোগের কী ছবি, কী বলছেন এলাকাবাসী, প্রশাসনের কর্তা থেকে মন্ত্রীরা, খোঁজ নিল আনন্দবাজার।আসানসোলের ‘লাইফ লাইন’ বলা যেতে পারে জিটি রোডকে।

Advertisement

সুশান্ত বণিক

আসানসোল শেষ আপডেট: ১৯ অগস্ট ২০১৯ ০৩:১৫
Share:

এই এলাকাতেই উড়ালপুল তৈরির কথা। এ ভাবেই লেভেলক্রসিংয়ে আটকে থাকতে হয় বাসিন্দাদের। কুমারপুরে। ছবি: পাপন চৌধুরী

রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের সংস্থার টানাপড়েন। তার জেরে এখনও থমকে আসানসোলের কুমারপুরে লেভেলক্রসিং লাগোয়া জিটি রোডে উড়ালপুলের নির্মাণ। এই পরিস্থিতিতে শহর তো বটেই, আশপাশের জেলার বাসিন্দাদেরও ক্ষোভ, পথের যন্ত্রণা শেষ হচ্ছে না কুমারপুরে।

Advertisement

আসানসোলের ‘লাইফ লাইন’ বলা যেতে পারে জিটি রোডকে। আসানসোল থেকে বরাকর পর্যন্ত এই রাস্তার সতেরো কিলোমিটার অংশ ব্যবহার করেন আসানসোল, কুলটি, বার্নপুর, বরাকর, নিয়ামতপুর-সহ মহকুমার বিভিন্ন এলাকার প্রায় ১৪ লক্ষ বাসিন্দা, হিসেব পরিবহণ দফতরের। এ ছাড়াও এই রাস্তা দিয়ে নিত্য যাতায়াত করেন বাঁকুড়া জেলা ও লাগোয়া রাজ্য ঝাড়খণ্ডের নানা এলাকার বাসিন্দারা। পুরুলিয়ার নিতুড়িয়া ও রঘুনাথপুরের বাসিন্দাদের যাতায়াতেরও অন্যতম বড় ভরসা এই রাস্তা।

পশ্চিম বর্ধমান পরিবহণ দফতরের হিসেব অনুযায়ী, ফি দিন এই রাস্তা দিয়ে ছোট-বড় মিলিয়ে ন্যূনতম ৫০ হাজার গাড়ি চলাচল করে। কিন্তু এমন গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা থমকে থাকছে কুমারপুরের লেভেলক্রসিংয়ে, অভিযোগ যাত্রীদের। বিভিন্ন নাগরিক ও বণিক সংগঠনের মতে, এর প্রভাব পড়ছে বেশ কয়েকটি দিক দিয়ে। প্রথমত, প্রভাব পড়ছে গণবণ্টনে। এই ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত কর্মী ও কর্তারা জানান, জেলা-সহ রাজ্যের নানা প্রান্তে গণবণ্টন ব্যবস্থা সচল রাখতে খাদ্যশস্য নিয়ে খাদ্য নিগমের ট্রাকগুলি এই রাস্তা ধরে চলাচল করে। বরাকর, নিয়ামতপুরের পাইকারি বাজার-সহ নানা সরকারি, বেসরকারি কারখানাতেও সেই পণ্য পৌঁছয়। তেমনই একটি ট্রাকের চালক বলেন, ‘‘এক বার লেভেলক্রসিংয়ে আটকে পড়লে কখন যে সেই জট ছাড়বে, সেই অপেক্ষায় বসে থাকতে হয়।’’

Advertisement

দ্বিতীয়ত, অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থায় প্রভাব পড়ছে। মাস কয়েক আগে কুলটির কেন্দুয়া বাজারে একটি ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। তা নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রায় দশ ঘণ্টা সময় লেগেছিল। দমকলের এক কর্তা বলেন, ‘‘কুমারপুর লেভেলক্রসিংয়ে আটকে পড়েছিল দমকলের ইঞ্জিন। এই সমস্যা প্রায়শই হয়।’’

তৃতীয়ত, নিত্যযাত্রীরা ভুক্তভোগী। জরুরি পরিষেবার ক্ষেত্রেও সমস্যা হয়। একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক দীপক মুখোপাধ্যায় জানান, আসানসোল জেলা হাসপাতাল, বিভিন্ন নার্সিংহোম, আসানসোলের বহু স্কুলে যাতায়াতের অন্যতম মাধ্যম এই রাস্তা। কিন্তু ব্যস্ত সময়ে যানজটের ফলে গন্তব্যে পৌঁছতে দেরি হয়। কুলটির বিধায়ক উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায়ও বলেন, ‘‘প্রায়ই দীর্ঘক্ষণ আটকে থাকে পড়ুয়াদের নিয়ে যাতায়াত করা পুলকারগুলি। দুর্ভোগ বাড়ে খুদে পড়ুয়াদের।’’ স্থানীয় বাসিন্দা সুপ্রিয় মণ্ডল, সুচরিতা চট্টোপাধ্যায়েরা জানান, যানজটে আটকে পড়ে ট্রেন ধরতে না পারার ঘটনাও আকছার ঘটছে।

সংশ্লিষ্ট সব পক্ষেরই প্রশ্ন, ভোগান্তির শেষ কবে? কোনও কর্তৃপক্ষই সে ব্যাপারে নির্দিষ্ট কোনও আশ্বাস দিতে পারছেন না। রবিবার অবশ্য এলাকা পরিদর্শন করেছেন আসানসোলের ডিআরএম সুমিত সরকার। যাবতীয় জট কাটিয়ে দ্রুত তৈরি হোক উড়ালপুল, এটাই এখন দাবি শহরবাসীর।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement