হিমঘর পরিদর্শনে কৃষি বিপণন দফতরের আধিকারিকেরা। নিজস্ব চিত্র
অন্য বছর সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে হিমঘর থেকে ৪৯ শতাংশ আলু বার হয়। এ বছর জ্যোতি আলু বেরিয়েছে ৫২ শতাংশ। তার পরেও এক দল চাষি, ব্যবসায়ী আরও বেশি দাম বাড়ার আশঙ্কায় হিমঘুরে আলু মজুত করে রেখেছেন বলে মনে করছেন কৃষি বিপণন দফতরের কর্তারা। এর সঙ্গেই আলুতে রং মেশানোরও অভিযোগ উঠেছে জামালপুরের কয়েকটি হিমঘরের বিরুদ্ধে।
বুধবার মেমারি, জামালপুর, গলসি এলাকায় বেশ কিছু হিমঘর পরিদর্শন করেন জেলা কৃষি বিপণন দফতরের কর্তারা। বেলা সাড়ে ১০টা থেকে বিকেল পর্যন্ত ১৭টি হিমঘর পরিদর্শন করেন তাঁরা। সঙ্গে ছিলেন জেলা এনফোর্সমেন্ট শাখার (ডিইবি) কর্মীরাও। জেলা কৃষি বিপণন দফতরের আধিকারিক সুদীপ পাল জানান, পূর্ব বর্ধমানের ৮৮টি হিমঘরের মধ্যে ২৫টি হিমঘর পরিদর্শন করা হয়েছে। তাঁর দাবি, ‘‘বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলে বুঝতে পারছি এক দল চাষি ও ব্যবসাদার দাম বাড়ার আশায় জ্যোতি আলু হিমঘরে মজুত করে রেখে দিয়েছেন। প্রত্যেকটি হিমঘর মালিকদের বলে এসেছি, স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় আলু বাজারজাত করতে হবে। হিমঘরগুলিকেই উদ্যোগী হতে হবে। না হলে আমরা হিমঘরের রেজিস্টার খতিয়ে দেখে কার, কার আলু মজুত আছে দেখব। তার পরে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
কৃষি বিপণন দফতরের দাবি, এর ফলে, বাজারে ‘কৃত্রিম সঙ্কট’ তৈরি হচ্ছে। জোগানে ঘাটতি দেখা দিচ্ছে। চাহিদা থাকায় মঙ্গল ও বুধবার হিমঘর থেকেই বাছাই করা আলু ২৮ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। বাছাই হয়নি এমন আলুও প্রতি কেজিতে ২৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আর খুচরো বাজারে আলুর দাম কেজিতে ৩২-৩৬ টাকার মধ্যে ঘুরছে।
হিমঘর মালিক সমিতির নেতা কৌশিক কুণ্ডুর যদিও দাবি, ‘‘এর সঙ্গে হিমঘরের কোনও সম্পর্ক নেই। চাষি ও ব্যবসাদারদের ব্যাপার।’’ খুচরো বাজারে আলুর দাম নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য ‘টাস্ক ফোর্স’ ঘুরছে, দাবি প্রশাসনের। তার পরেও হিমঘরের দামের সঙ্গে খুচরো বাজারের দামে পাঁচ টাকা বা তারও বেশি তফাত কেন, উঠছে সেই প্রশ্ন।
হিমঘর মালিদের দাবি, রীতিমতো দরাদরি করে আলু বিক্রি হচ্ছে। এক জন কম দাম দিতে চাইলে অন্য জন বেশি দামে কিনে নিচ্ছেন। ভিন্ রাজ্যেও আলুর চাহিদা রয়েছে। প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, এ বছর পূর্ব বর্ধমানে ২ কোটি ৩১ লক্ষ ৮৮ হাজার প্যাকেট (৫০ কেজি) আলু হিমঘরে মজুত হয়েছিল। যা গত বারের চেয়ে প্রায় ২১ শতাংশ কম। প্রতি মাসে হিমঘরগুলি থেকে ৩১ লক্ষ প্যাকেট আলু বের হয়। অগস্ট মাস থেকে স্বাভাবিক নিয়ম অনুযায়ী, আলুর প্যাকেট বার হচ্ছে না বলে অভিযোগ। প্রগতিশীল আলু ব্যবসায়ী সমিতির রাজ্য কমিটির সদস্য সুনীল ঘোষ বলেন, ‘‘আলুর চাহিদা বেশি। সে জন্য গত ১০ বছরের তুলনায় এ বছর ৩ শতাংশ আলু বেশি বিক্রি হয়েছে। জোগান আর চাহিদার সামঞ্জস্য না এলে দাম কমবে না।’’
সুদীপবাবু বলেন, ‘‘জেলাশাসকের নির্দেশে হিমঘরগুলি পরিদর্শন করে কতটা আলু বার হচ্ছে, কত দামে আলু বিক্রি হচ্ছে তা পর্যবেক্ষণ করেছি। হিমঘর চত্বর থেকেই আলু বেশি দামে বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। এটা আটকাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছি। চাহিদা আর জোগানের দিকেও নজর রাখা হচ্ছে।’’
কৃষি বিপণন দফতর সূত্রে জানা যায়, পরিদর্শন করতে গিয়েই জামালপুরের একটা অংশে আলুতে রং মেশানো দেখা গিয়েছে। কয়েক মাস আগেও এই অভিযোগ উঠেছিল। চিঠিও পাঠানো হয়। সুদীপবাবুরা ওই সব হিমঘর কর্তৃপক্ষকে সতর্ক করেছেন।