গান, কম চিনির চায়ে কাছের মানুষ ‘দিদি’

দিদি চা খেতে চান শুনে আহ্লাদিত হয়ে পড়েন তিনি। বলে ওঠেন, “আমি চা করে দিচ্ছি।’’ সোমবার বিকেল সওয়া ৫টা থেকে প্রায় আধঘন্টা ওই গ্রামে ছিলেন তিনি। চলে যাওয়ার পরে মায়াদেবী বলেন, “অল্প মিষ্টি দিয়ে চা করে দিয়েছিলাম। মুখ্যমন্ত্রী আমার হাতে তৈরি চা খেয়েছেন। মনে হচ্ছিল কত কাছের মানুষ।’’

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বর্ধমান শেষ আপডেট: ২৭ অগস্ট ২০১৯ ০১:৪০
Share:

পড়ুয়াদের মাঝে। নিজস্ব চিত্র।

“বসতে জায়গা দেবে? মাটির বারান্দা আমার খুব পছন্দ।’’ বিকেল বেলায় এমন আবদার শুনে চমকে উঠেছিলেন কল্পনা খোড়ে। ততক্ষণে সবুজ পাড় সাদা শাড়ি, পায়ে হাওয়াই চটির চেনা চেহারায় তাঁর সামনে হাজির মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

Advertisement

তড়িঘড়ি ‘দিদি’কে গ্রামের ভিতর বড় বাড়িতে নিয়ে যেতে ব্যস্ত হন তিনি। মুখ্যমন্ত্রী কিন্তু দাঁড়িয়ে পড়েন শম্ভু মালিকের মাটির বাড়ির দাওয়াই। চেয়ার আসে। আরাম করে বসে বর্ধমান শহর লাগোয়া আলিশা গ্রামের রুইদাস পাড়ার বাসিন্দাদের সঙ্গে খোসগল্প জুড়ে দেন তিনি।

কিছুক্ষণের মধ্যেই তাঁর আবদার, ‘‘কার বাড়িতে চা, চিনি, দুধ আছে? আমাকে অল্প চিনি দিয়ে চা খাওয়াবে?” ভিড়ের মধ্যে ঢুকতে না পেরে একটু দূরেই দাঁড়িয়েছিলেন মায়া ঘোষ। দিদি চা খেতে চান শুনে আহ্লাদিত হয়ে পড়েন তিনি। বলে ওঠেন, “আমি চা করে দিচ্ছি।’’ সোমবার বিকেল সওয়া ৫টা থেকে প্রায় আধঘন্টা ওই গ্রামে ছিলেন তিনি। চলে যাওয়ার পরে মায়াদেবী বলেন, “অল্প মিষ্টি দিয়ে চা করে দিয়েছিলাম। মুখ্যমন্ত্রী আমার হাতে তৈরি চা খেয়েছেন। মনে হচ্ছিল কত কাছের মানুষ।’’

Advertisement

চা খাওয়ার ফাঁকেই গ্রামের সমস্যার কথা জানতে চান মুখ্যমন্ত্রী। বেশ কয়েকজন মহিলা গ্রামে কর্মসংস্থান, সরকারি প্রকল্পে বাড়ির দাবি করেন। উঠে আসে রাস্তা-জলের সমস্যার কথাও। সমস্যার কথা শোনার ফাঁকেই শিশুদের গায়ে জামা নেই কেন, জানতে চান তিনি। শিশুদের কপালে বড় টিপ না দিয়ে ছোট টিপ দিলে মিষ্টি দেখতে লাগে বলেও তিনি মন্তব্য করেন। ততক্ষণে আরও অনেক মহিলা মুখ্যমন্ত্রীর কাছে চলে এসেছেন। অনেকেই হাত মেলাচ্ছেন। মুখ্যমন্ত্রী জানতে চান, ছাগল-হাঁস-মুরগি পালন করে সংসার চালাতে পারবেন কি না। মহিলারা সমস্বরে বলে ওঠেন ‘হ্যাঁ’। ডাক পড়ে, ‘‘স্বপন কোথায়? ছাগল-গরুর মাস্টার এ দিকে এসো।’’ প্রাণিসম্পদ বিকাশ দফতরের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ এসেই বলেন, ‘‘আলিশা গ্রাম খুঁজতে গিয়ে দিদির কাছে বকুনি খেতে হল!” নির্দেশ আসে, সবাইকে ব্যক্তিগত ভাবে ৫টি করে ছাগল দিতে হবে। জেলাশাসক বিজয় ভারতীকেও ফোন করে আলিশায় ডেকে নেন তিনি। বাংলা আবাস যোজনার জেলার ‘কোটা’ থেকে ওই গ্রামে বাড়ি তৈরি করে দিতে বলেন।

সংস্কৃত লোকমঞ্চে প্রশাসনিক বৈঠকে মিঠে-কড়া মেজাজের পরেই কানাইনাটশাল রওনা দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। মাঝেমধ্যেই গাড়ির গতি কমিয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা মানুষজনকে প্রণাম করেন। পুলিশ লাইনের কাছে ইছালাবাদ বিবেকানন্দ বালিকা বিদ্যালয়ের ছাত্রীদে দেখতে পেয়ে গাড়ি দাঁড় করে ঢুকে পড়েন স্কুলে। শিক্ষিকা, ছাত্রীরা মুখ্যমন্ত্রীকে হাতের কাছে পেয়ে স্কুলের সমস্যার কথা তুলে ধরেন। সমবেত কন্ঠে গাওয়া হয় ‘ধনধান্যে পুষ্পে ভরা’। সেখান থেকে মিষ্টি হাব ঘুরে চলে যান ওই গ্রামে।

ফেরার পথে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “সবার কথা শুনেছি। স্বপন দেবনাথ ও ডিএমকে ডেকে পাঠিয়েছিলাম। কিছু গরিব মানুষের ঘরের প্রয়োজন রয়েছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement