চিত্তরঞ্জন লোকোমোটিভ ওয়ার্কস (সিএলডব্লিউ)। —নিজস্ব চিত্র।
পরীক্ষামূলক ভাবে হাই স্পিড ইঞ্জিন তৈরির পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে চিত্তরঞ্জন লোকোমোটিভ ওয়ার্কস (সিএলডব্লিউ)। কারখানা সূত্রে জানা গিয়েছে, পরীক্ষার লক্ষ্য, ‘বন্দে ভারতের’ মতো দ্রুত গতির ট্রেনের ইঞ্জিন তৈরি। কিন্তু, বন্দে ভারত ট্রেনের সঙ্গেই ইঞ্জিন থাকে। অন্য প্রচলিত ট্রেনের মতো, আলাদা করে ইঞ্জিন থাকে না। ফলে, কারখানার এই পরিকল্পনা কতটা সফল হবে, তা নিয়ে সন্দিহান শ্রমিক সংগঠনগুলির একাংশ।
কারখানা সূত্রে জানা গিয়েছে, রেল বোর্ডের তরফে হাই স্পিড চারটি ইঞ্জিন তৈরির বরাত দেওয়া হয়েছে। এই ইঞ্জিনের নাম ‘পুশ-পুল এরোডায়ানামিক ইঞ্জিন’। ছ’হাজার অশ্বশক্তির এই ইঞ্জিন সাধারণত হাই স্পিড বা উচ্চ গতির ট্রেন ছোটানোর কাজে ব্যবহৃত হয়। কারখানার ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার অমিত আগরওয়াল বলেন, “আপাতত পরীক্ষামূলক ভাবে চারটি ইঞ্জিন তৈরি করা হবে। সেপ্টেম্বরের মধ্যে সে কাজ শেষ হবে। আমাদের লক্ষ্য, এই ইঞ্জিনের মাধ্যমে বন্দে ভারত ট্রেন ছোটানো।” সূত্রের খবর, চারটি ইঞ্জিন তৈরি করার পরে সেগুলি তামিলনাডুর ইন্টিগ্রাল কোচ ফ্যাক্ট্রিতে পাঠানো হবে। সেখানে বিশেষ ভাবে কোচ তৈরি করে ওই ইঞ্জিনগুলি দিয়ে পরীক্ষামূলক ভাবে ট্রেন চালানো হবে। যদি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয় তবে ভবিষ্যতে আরও ইঞ্জিনের বরাত পাওয়া যেতে পারে বলে দাবি অমিতের।
যদিও, এ বিষয়ে অন্য মত উঠে আসছে কারখানার ভিতর থেকেই। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কর্তৃপক্ষের একাংশের দাবি, বন্দে ভারত ট্রেনটি আসলে একটি উন্নত মানের ও উচ্চগতির ইলেকট্রিক্যাল মাল্টিপল ইউনিট। এই ট্রেনের সঙ্গেই ইঞ্জিন তৈরি হয়। আলাদা করে ইঞ্জিন জুড়ে এই ট্রেন চালানো হয় না। ফলে, চিত্তরঞ্জনে তৈরি এই ইঞ্জিনগুলি বন্দে ভারত টানার ক্ষেত্রে আদৌ সহায়ক হবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। তাঁরাই জানাচ্ছেন, প্রায় বছর দশেক আগে রাজধানী টানার জন্য ডব্লউএপি ৪ পর্যায়ের কয়েকটি ইঞ্জিন তৈরির বরাত পেয়েছিল সিএলডব্লিউ। সে জন্য বেশ কিছু সামগ্রী আমদানি করা হয়। কিন্তু পরে রেল বোর্ড ওই ইঞ্জিন বানানো বন্ধ করে দেয়। ফলে, অব্যবহৃত সেই সামগ্রীগুলি দিয়েই এই পুশ-পুল এরোডায়ানামিক ইঞ্জিন তৈরি
করা হচ্ছে।
কারখানার উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েও সন্দিহান শ্রমিক সংগঠনগুলির একাংশ। আইএনটিইউসি-র কারখানা ইউনিটের সম্পাদক ইন্দ্রজিৎ সিংহের বক্তব্য, “আমদেরও দাবি ছিল বন্দে ভারতের ইঞ্জিন তৈরির বরাত দেওয়া হোক সিএলডব্লিউ-কে। এই ইঞ্জিনগুলি যদি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়, তা হলে ভালই।” যদিও, উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েও কারখানার লেবার ইউনিয়নের সম্পাদক রাজীব গুপ্ত বলেন, “রাশিয়ার একটি সংস্থার সঙ্গে ভারত সরকার কয়েক হাজার কোটি টাকায় বন্দে ভারত তৈরির চুক্তি করেছে। সেই চুক্তি কার্যকর হলে চিত্তরঞ্জন কারখানায় তৈরি এই ইঞ্জিনের ভবিষ্যৎ কী হবে সেটাই প্রশ্ন।”