বার্নপুরে দামোদরে চলছে আবর্জনা পরিষ্কার। ছবি: পাপন চৌধুরী
ডিসেম্বর এলেই ঝাঁকে-ঝাঁকে হাজির হত পরিযায়ী পাখি। কিন্তু বছর দুয়েক ধরে সেই সংখ্যাটা কমে গিয়েছে। কেন এমনটা হল, কয়েকজন তরুণ-তরুণী খোঁজ নিতে গিয়ে জানতে পারেন, এর অন্যতম কারণ দূষণ। এর পরেই পরিযায়ীদের জন্য দামোদরের জল ও চর পরিষ্কার রাখার কাজে নেমে পড়েছেন তাঁরা। বার্নপুরের ভূতাবাড়ি এলাকায় দামোদরে প্লাস্টিক-সহ নানা আবর্জন কুড়িয়ে সাফ করছেন আসানসোলের ওই তরুণ-তরুণীদের দলটি। তাঁদের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দা এবং পুরসভার কর্তারা।
ওই দলের সদস্যেরা জানান, বছর দুয়েক আগে প্রথমে একাই এই কাজ শুরু করেন আসানসোলের বাসিন্দা রামঋতিঙ্গর হাজরা। কলকাতার একটি কলেজের প্রাণিবিদ্যার ওই ছাত্র জানান, পড়ার বিষয়ের স্বার্থেই তিনি মাঝে-মধ্যে দামোদরের চরে এসে পাখিদের গতিবিধি বুঝতেন। কিন্তু কয়েক বছর ধরে লক্ষ্য করেন, আগের তুলনায় পরিযায়ীর সংখ্যা কমছে। কলেজের শিক্ষকদের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা করে জানতে পারেন, হয় পরিযায়ীরা এখানে বসবাসের উপযোগী পরিবেশ পাচ্ছে না, অথবা এই অঞ্চলটি নিরাপদ বলে মনে করছে না। রামঋতিঙ্গরের অভিযোগ, ‘‘মাসখানেক পর্যবেক্ষণ করে বুঝতে পারি, নদীর চরে লাগামছাড়া দূষণ ও এক দল পাখি শিকারির দৌরাত্ম্যই এর মূল কারণ।’’
ওই ছাত্র জানান, এর পরে একাই চর সাফ করার কাজ শুরু করেন তিনি। পাখি শিকারের চেষ্টা দেখতে পেলেই প্রতিবাদ করতেন। তাঁর দাবি, কিছু দিন চলার পরে বুঝতে পারেন, একার পক্ষে এই কাজ সামাল দেওয়া সম্ভব নয়। শেষে কয়েকজন বন্ধুকে সঙ্গে নিলেন। তাঁর সঙ্গে এই কাজে নেমে খুশি রাহুল দাস, মহাশ্বেতা দাশগুপ্ত, রাজ গুপ্তেরাও। চর থেকে বর্জ্য তুলে বস্তায় ভরে কিছুটা দূরে রাখা পুরসভার ভ্যাটে নিয়ে গিয়ে ফেলেন তাঁরা। এই কাজ করেন সপ্তাহান্তে। তাঁদের দাবি, দূষণের মাত্রা অনেকটা কমেছে। কিন্তু পাখি শিকারিদের উৎপাত বন্ধ করতে হিমসিম হতে হচ্ছে।
রামঋতিঙ্গর জানান, ডিসেরগড় সেতু লাগোয়া অঞ্চল থেকে দুর্গাপুর ব্যারাজের মাঝামাঝি নানা জায়গায় দামোদরের চরে বাসা বাঁধে এই পরিযায়ীরা। ডিসেম্বর থেকে সেগুলির আনাগোনা শুরু হয়। আবার এই সময়েই পিকনিকের আসর বসে দামোদরের পাড়ে। ফলে, ধোঁয়া ও আবর্জনার দূষণে জেরবার হয় পাখিরা। তাঁরা জানান, এলাকা সাফ করার সঙ্গে পিকনিকে আসা মানুষজনকে পরিযায়ীদের বিষয়ে সচেতনও করছেন। তাতে ফলও মিলেছে বলে মনে করছেন তাঁরা। শিকারিদের হাত থেকে পাখি রক্ষা করতে একটি ‘নেচার ক্লাব’ও গড়েছেন বলে তাঁরা জানান। আলাদা দল গড়ে ক্লাবের সদস্যেরা পরিযায়ীদের আসা-যাওয়ার সময়ে পাহারার ব্যবস্থা করবেন বলে তাঁদের দাবি।
স্থানীয় একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক মানস মণ্ডল বলেন, ‘‘এমনিতেই নানা ধরনের রাসায়নিক বিক্রিয়ায় শহরে পাখির সংখ্যা কমে গিয়েছে। পাখি বাঁচাতে এই উদ্যোগ অন্যদেরও উৎসাহ জোগাবে বলে মনে করছি।’’ আসানসোল পুরসভার সুপারিন্টেন্ডিং ইঞ্জিনিয়ার সুকোমল মণ্ডল বলেন, ‘‘দামোদরের পাড়ে পুরসভার ভ্যাট আছে। পিকনিকে আসা মানুষজনকে সেখানে আবর্জনা ফেলার অনুরোধ করা হয়েছে। তাঁদের অনেকে তাতে কান দিচ্ছেন না, তা দুর্ভাগ্যের। ওই তরুণ-তরুণীদের উদ্যোগ দেখে বাকিদের শিক্ষা নেওয়া উচিত।’’
দুর্গাপুর বিভাগের সহ-বনাধিকারিক শুভাশিস সরকার বলেন, ‘‘পাখি শিকারের কোনও অভিযোগ আমাদের কাছে আসেনি। খোঁজ নেওয়া হবে।’’