ভাঙচুর করা হয়েছে বাড়িঘর, মোটরবাইক। নিজস্ব চিত্র।
এলাকা দখলকে কেন্দ্র করে দু’টি গোষ্ঠীর সংঘর্ষে অশান্ত হয়ে উঠল গলসির উচ্চগ্রাম পঞ্চায়েতের পুরন্দরগড় গ্রাম। বাড়ি ভাঙচুর, আগুন লাগানো থেকে বোমাবাজি— দফায়-দফায় তাণ্ডব চলল বৃহস্পতিবার সকাল থেকে। গলসি থানা থেকে বড় বাহিনী গিয়ে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। রাত পর্যন্ত দু’পক্ষের মোট ২০ জনকে আটক করা হয়েছে।
ঘটনাটি নিয়ে রাজনৈতিক চাপান-উতোর শুরু হয়েছে এলাকায়। সিপিএমের অভিযোগ, তৃণমূলের স্থানীয় দু’টি গোষ্ঠীর মধ্যে দীর্ঘদিন ধরেই বিবাদ চলছে। তার জেরেই এ দিন গোলমাল বেধেছে। তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর তরফে আবার ঘটনাটি নিয়ে দু’রকম ব্যাখ্যা মিলেছে। এক পক্ষ যখন সিপিএমের উপরে দোষ চাপিয়েছে, অন্য গোষ্ঠী গ্রামীণ বিবাদের জেরে ঝামেলা বলে দাবি করেছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বেশ কয়েক মাস আগে পুরন্দরপুরে একটি নর্দমা তৈরির সময়ে গ্রামের মণ্ডলপাড়া ও মোল্লাপাড়ার মধ্যে সংঘর্ষ হয়। তার মধ্যে পড়ে মৃত্যু হয় এক ব্যক্তির। তার পর থেকেই ওই দুই পাড়ার মধ্যে অশান্তি লেগে রয়েছে। এর মধ্যে মণ্ডলপাড়ার তৃণমূল কর্মীরা দলের গলসি ২ ব্লক সভাপতি জনার্দন চট্টোপাধ্যায় এবং মোল্লাপাড়ার তৃণমূল কর্মীরা প্রাক্তন ব্লক সভাপতি পরেশ পালের অনুগামী হিসেবে পরিচিত। অভিযোগ, কয়েক দিন আগে বেপরোয়া ভাবে মোটরবাইক চালানোর অভিযোগ তুলে মণ্ডলপাড়ার তিন জনকে মোল্লাপাড়ার কয়েক জন মারধর করে। গ্রামের বাইরে যেতে হলে মোল্লাপাড়ার বাসিন্দাদের মণ্ডলপাড়ার উপর দিয়ে যেতে হয়ে। ওই ঘটনার পর থেকে মণ্ডলপাড়ার তৃণমূল কর্মীরা মোল্লাপাড়ার সাধারণ বাসিন্দা, এমনকী স্কুল পড়ুয়াদেরও নানা ভাবে ভয় দেখাচ্ছিল বলে অভিযোগ।
বৃহস্পতিবারের ঘটনায় আহত হয়ে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হয়েছে বছর পঞ্চাশের হারুন মোল্লা। পরিবারের অভিযোগ, ট্রাক্টর চালক হারুনবাবু এ দিন সকালে সাইকেলে করে উচ্চগ্রাম যাচ্ছিলেন। মণ্ডলপাড়ায় পৌঁছনোর পরেই তৃণমূলের একটি গোষ্ঠীর লোকেরা তাঁকে লক্ষ করে বোমা ছোড়ে। তিনি পড়ে যাওয়ার পরে তাঁকে বেধড়ক মারধর করা হয়। এর পরেই দুই গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষ বেধে যায়। বোমাবাজির পরে বেশ কিছু বাড়ি ভাঙচুর করা হয়। শেষে দু’পক্ষই পরস্পরের খড়ের পালুই ও ধানের গোলায় আগুন ধরিয়ে দেয়। বর্ধমান থেকে দমকলের একটি ইঞ্জিন গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। দমকল সূত্রে জানা গিয়েছে, সাতটি খড়ের পালুই ও তিনটি ধানের মড়াইয়ে আগুন লেগেছিল।
তৃণমূলের গলসি ২ ব্লক সভাপতি জনার্দন চট্টোপাধ্যায়ের অভিযোগ, “বিধানসভা ভোটের আগে সিপিএম ফের গ্রাম দখলের চেষ্টা করছে।” সিপিএম নেতা কমল সরকারের পাল্টা দাবি, “তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এখানে আমাদের কোনও ভূমিকাই নেই।” তৃণমূলের প্রাক্তন ব্লক সভাপতি পরেশ পাল আবার গোলমালের ঘটনাটিকে পুরোপুরি অরাজনৈতিক বলে দাবি করেন।