এখানে হবে আন্ডারব্রিজ। নিজস্ব চিত্র ।
দক্ষিণ-পূর্ব রেলের আদ্রা ডিভিশনের দামোদর স্টেশন সংলগ্ন লেভেল ক্রসিং তুলে দিয়ে যাতায়াতের জন্য সুড়ঙ্গপথ (রোড আন্ডারব্রিজ) বা টানেল তৈরি হবে বলে জানিয়েছে রেল। এই ঘোষণার পরেই ওই উদ্যোগের কৃতিত্ব দাবি করে ময়দানে ঝাঁপিয়েছে বিজেপি ও তৃণমূল। শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজাও। যদিও এ সব নিয়ে মাথা ঘামাতে নারাজ স্থানীয় বাসিন্দারা। দীর্ঘ দিনের সমস্যা থেকে মুক্তি মিলবে, এটাই তাঁদের কাছে শেষ কথা।
ওই এলাকায় সুড়ঙ্গের দাবি স্থানীয়দের বহু দিনের। সম্প্রতি দেশে ১১ হাজার লেভেল ক্রসিং তুলে দিয়ে তার পরিবর্তে উড়ালপুল, সুড়ঙ্গপথ ও স্বল্প উচ্চতার সুড়ঙ্গপথ তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেল মন্ত্রক। ইতিমধ্যেই সেগুলির আনুষ্ঠানিক শিলান্যাস করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ওই তালিকায় রয়েছে দামোদর স্টেশন লাগোয়া সুড়ঙ্গপথটিও।
আসানসোল দক্ষিণের বিধায়ক তথা বিজেপির রাজ্য সম্পাদক অগ্নিমিত্রা পাল বলেন, ‘‘আমি বিধায়ক হওয়ার পরেই স্থানীয়েরা লেভেল ক্রসিং তুলে দিয়ে সুড়ঙ্গ তৈরির আবেদন করেছিলেন। আমি রেলমন্ত্রীকে এ নিয়ে আবেদন করার পরে তিনি সেটি অনুমোদন করেছেন।’’ তৃণমূলের জেলা সভাপতি নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী জানান, ছ’বছর আগে তাঁরাই প্রথম এই দাবি তুলেছিলেন। লাগাতার আন্দোলন করায় রেল কর্তৃপক্ষ এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ২০১৮-এ স্থানীয় তৃণমূল পুর-প্রতিনিধি লক্ষ্মণ ঠাকুর এই দাবি তুলে রেল কর্তৃপক্ষের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছিলেন। তার পর থেকে লাগাতার আন্দোলন করেছেন তৃণমূল নেতৃত্ব।
প্রস্তাবিত লেভেল ক্রসিং-এর এক দিকে দামোদর, অন্য দিকে কুইলাপুর গ্রাম। দুই এলাকায় কম-বেশি ২০ হাজার মানুষের বাস। সেখানে রয়েছে একাধিক স্কুল, সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্র। প্রতিদিন লেভেল ক্রসিং পেরিয়ে বহু মানুষ যাতায়াত করেন। এই রেলপথ দিয়ে দক্ষিণ-পূর্ব রেলের একাধিক এক্সপ্রেস ও লোকাল ট্রেন যাতায়াত করে। বার্নপুর ইস্কোর পণ্যবাহী ট্রেনও এই লাইন দিয়ে যায়।
এলাকার বাসিন্দা পবিত্র গঙ্গোপাধ্যায় জানান, এক বার লেভেল ক্রসিং বন্ধ হলে প্রায় আধ ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। সুড়ঙ্গ তৈরি হলে মানুষের উপকার হবে। কুইলাপুর স্বাস্থ্যকেন্দ্রের আশা কর্মী উষাদেবী সাও এবং ওয়াহিদা খাতুন জানান, কাজে যাওয়ার পথে লেভেল ক্রসিং বন্ধ থাকলে গন্তব্যে পৌঁছতে দেরি হয়। বেশি সমস্যায় পড়ে স্কুলের পড়ুয়ারা। রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা ছাড়া আর কোনও উপায় থাকে না। এলাকাবাসী জানান, লেভেল ক্রসিং এড়িয়ে নাকড়াসোতা গ্রাম হয়ে ঘুরপথে যাতায়াত করতে হলে প্রায় সাত কিলোমিটার পথ বেশি যেতে হয়। লেভেল ক্রসিং-এর পরিবর্তে সুড়ঙ্গপথ হলে সমস্যা মিটবে।
রেল সূত্রে খবর, এই সুড়ঙ্গকে ‘রোড আন্ডারব্রিজ’ বলে উল্লেখ করা হচ্ছে। নির্মাণের নীল নকশা বানানো হয়েছে। প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়েছে
প্রায় ১৭ কোটি টাকা। সাত মাসের মধ্যে তা তৈরি হয়ে যাবে বলে রেল কর্তৃপক্ষের আশা।