‘গোছা গোছা লটারির টিকিট কাটত লোকটা’

বছর পঁয়ত্রিশের যুবক ধোপধুরস্ত জামাকাপড় পড়ে মোটরবাইক নিয়ে রোজ বেরিয়ে যেত। ফিরে দিব্যি সংসার করত স্ত্রীর সঙ্গে। সময় কাটাত তিন ছেলে-মেয়েকে নিয়ে। পরপর খুন করে এসেও এত নির্বিকার কী ভাবে, তাজ্জব পড়শিরা।

Advertisement

কেদারনাথ ভট্টাচার্য

চরগোয়ালপাড়া শেষ আপডেট: ০৪ জুন ২০১৯ ০০:০২
Share:

কালনার সিঙেরকোণে নিরাপত্তা ও নির্যাতিতার সুচিকিৎসার দাবিতে বিক্ষোভ, অবরোধ স্থানীয় বাসিন্দাদের। নিজস্ব চিত্র

লম্বা এক ফালি জমির উপরে বাঁশ আর টিন দিয়ে তৈরি ছোট্ট একটা ঘর। ঘুটঘুটে অন্ধকার ঘরে ঢুকতেই ধাক্কা লাগে চৌকিতে। বই-খাতা-স্কুলের ব্যাগ-জামা ছড়ানো চৌকির পাশেই রাখা দুটো লোহার ট্রাঙ্ক। পূর্বস্থলীর নসরৎপুরের চরগোয়ালপাড়ায় রেললাইনের ধারে এ ঘরেই থাকত ‘চেন কিলার’ কামরুজ্জামান সরকার।

Advertisement

বছর পঁয়ত্রিশের যুবক ধোপধুরস্ত জামাকাপড় পড়ে মোটরবাইক নিয়ে রোজ বেরিয়ে যেত। ফিরে দিব্যি সংসার করত স্ত্রীর সঙ্গে। সময় কাটাত তিন ছেলে-মেয়েকে নিয়ে। পরপর খুন করে এসেও এত নির্বিকার কী ভাবে, তাজ্জব পড়শিরা।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, অভিযুক্তের স্ত্রী ওই এলাকারই মেয়ে। বছর পনেরো আগে বিয়ের হয় তাদের। বছর দেড়েক আগে স্ত্রী, সন্তানদের নিয়ে শ্বশুরবাড়ির কাছাকাছি দেড় কাঠা জমি কিনে এই বাড়ি করে সে। রবিবার কামরুজ্জামান ধরা পড়ার পর থেকে অবশ্য জটলা লেগে রয়েছে বাড়ির সামনে। সোমবার বাড়িতে গিয়ে দেখা দুই মেয়ে রয়েছে। ধৃতের স্ত্রী এবং শাশুড়িকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে নিয়ে
গিয়েছে পুলিশ। সঙ্গে গিয়েছে ছোট ছেলে। ঘরে আসবাব বলতে রয়েছে একটি ছোট টিভি। বড় মেয়ে জানায়, মুর্শিদাবাদ থেকে আসার সময় টিভি সঙ্গে এনেছিল বাবা। ওই কিশোরী জানায়, সকালে তিন ভাই-বোনকে স্কুলে পৌঁছে দিয়ে কাজে বেরত বাবা। তবে কি কাজ, তা জানেনা সে। জানা যায়, ওই এলাকায় ঘর বাঁধার পরে বাড়ির সামনে একটি মুদিখানার দোকান খুলেছিল কামরুজ্জামান। কিন্তু বিক্রি ভাল না হওয়ায় মাস পাঁচেক ধরে তা বন্ধ। কি করে সংসার চলত, জানেন না প্রতিবেশীরাও।

Advertisement

জয়নাল শেখ, ফুলচাঁদ শেখরা জানান, বরাবরই ইস্ত্রি করা জামা, বেল্ট, ঘড়ি, পালিশ করা জুতো, সানগ্লাস পড়ত কামরুজ্জামান। মাস সাতেক আগে এলাকারই এক জনের কাছ থেকে লাল রঙের ওই বাইক কেনার পর থেকে তাতেই ঘুরত সে। দুপুরে এক বার খাওয়া-দাওয়া করতে বাড়ি ফিরলেও তারপরে আবার বাইকে নাইলনের ব্যাগ ঝুলিয়ে বেরিয়ে পড়ত সে। ওই বাড়ি থেকে কিলোমিটার খানেক দূরে সমুদ্রগড় স্টেশন। এলাকার বাসিন্দাদের দাবি, সেখানে মাঝেমধ্যে পরিচিত ঠেকে আড্ডা দিতে যেত সে। ক্যারাম খেলত। স্টেশন এলাকার এক টোটো চালক বলেন, ‘‘গোছা গোছা লটারির টিকিট কাটত লোকটা। এমন করে সিগারেট খেত, মনে হত বড়লোক বাড়ির ছেলে। ভেতরে যে এমন কে জানত!’’

মাস দুয়েক আগে এই এলাকাতেও ‘চেন কিলারে’র আতঙ্ক ছড়িয়েছিল। পুলিশের তরফে প্রচার হয়। সফিক শেখ নামে এলাকার এক যুবক বলেন, ‘‘পুলিশের প্রচারের কামরুজ্জামানও শুনেছে। মানসিক ভাবে অসুস্থ না বলে পরপর খুন, যৌন নির্যাতন করা যায় না।’’ আর এক বাসিন্দা মাদ্দিন মণ্ডল বলেন, ‘‘আগে কামরুজ্জামান বাইক চুরির সঙ্গে যুক্ত ছিল বলে শুনেছিলাম। তবে অপরাধ এত বড় আন্দাজ করতে পারিনি।’’ এক মহিলা বলেন, ‘‘কপাল ভাল, বাড়ির আশপাশের মহিলাদের রেহাই দিয়েছে।’’ তাঁদের একটাই দাবি, ‘খুনি’র যেন দৃষ্টান্তমূলক সাজা হয়।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement