বাংলার আবাস যোজনা লেখা মুছে দাঁইহাটে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার বোর্ড লেখা। নিজস্ব চিত্র।
কেন্দ্রীয় প্রকল্পের নাম বদল নিয়ে বিতর্ক কম হয়নি এ রাজ্যে। গ্রামীণ এলাকায় সরকারি প্রকল্পে নির্মিত বাড়িতে ‘বাংলা আবাস যোজনা’ লেখা হয়েছিল। নাম বদলে বাড়িতে ‘প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা (গ্রামীণ) লিখতে বাধ্য হয়েছে প্রশাসন। এ বার, শহরাঞ্চলে সরকারি আবাস প্রকল্পে নির্মিত বাড়ির ফলকে ‘হাউস ফর অল’-এর (সবার জন্য বাড়ি) পরিবর্তে ‘প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা (শহর)’ লেখার নির্দেশ দিল রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর।
প্রশাসন সূত্রে খবর, গ্রামীণ এলাকার মতো শহরাঞ্চলেও কেন্দ্রীয় আবাস প্রকল্প পরিদর্শনে আসতে পারে কেন্দ্রীয় দল। সেই অনুমানের ভিত্তিতে বিতর্ক এড়ানোর জন্যই এই নির্দেশ বলে মনে করা হচ্ছে। পাশাপাশি, প্রকল্পের টাকা পেয়েও যে উপভোক্তারা বাড়ি করেননি, তাঁদেরকে নোটিস দেওয়ারও সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, গত ডিসেম্বরে রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের ‘স্টেট আরবান ডেভেলপমেন্ট এজেন্সি’র (সুডার) অধিকর্তা পুরসভাগুলিকে চিঠি দিয়ে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা (শহর) প্রকল্পে নির্মিত বাড়ির দেওয়ালে ‘লোগো’ লাগানোর নির্দেশ দিয়েছেন। নির্দেশ মেনে বর্ধমান, কাটোয়া, কালনা, মেমারি, গুসকরা ও দাঁইহাট পুরসভা এলাকায় ওই প্রকল্পে নির্মিত বাড়ির দেওয়ালে ‘প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা (শহর)’ লেখা শুরু হয়েছে। সুডার নির্দেশ, বাড়ি তৈরির খরচ লিখতে হবে। একই সঙ্গে বাড়ি নির্মাণে কেন্দ্র, রাজ্য সরকার ও উপভোক্তার দেওয়া টাকার অঙ্ক লিখতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি, কোন বছরে বাড়ি তৈরির অনুমোদন মিলেছে, তা-ও লেখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রশাসনের কর্তাদের একাংশের আশঙ্কা, নির্দেশ মোতাবেক ব্যবস্থা না নিলে, গ্রামীণ আবাস যোজনার মতো শহরের বাড়ি তৈরির প্রকল্পের টাকাও আটকে দিতে পারে কেন্দ্র।
নগরোন্নয়ন দফতরের এক আধিকারিক বলেন, “২০১৫-১৬ সাল থেকে প্রতি বছর বাড়ি তৈরির অনুমোদন দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। সাত বছর ধরে বাড়ি তৈরির অনুমোদন বাড়লেও টাকা পৌঁছয়নি উপভোক্তাদের ঘরে। ২০২০-২১ অর্থবর্ষে অনুমোদিত বাড়িগুলির ক্ষেত্রে ওই নির্দেশ পালন করা বাধ্যতামূলক।”
প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, গ্রামীণ এলাকায় বাড়ি নির্মাণের কেন্দ্রীয় প্রকল্পে বরাদ্দ হয় ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা। শহরাঞ্চলে পাকা ঘরের জন্য কেন্দ্রীয় প্রকল্পের খরচ ৩ লক্ষ ৬৮ হাজার টাকা ধরা হয়েছে। তার মধ্যে উপভোক্তা, কেন্দ্র ও রাজ্যের অনুদান যথাক্রমে ২৫ হাজার, দেড় লক্ষ এবং ১ লক্ষ ৯৩ হাজার টাকা। ‘সুডা’র রিপোর্ট, বর্ধমান শহরে ওই প্রকল্পে ৯৩৫টি বাড়ি অনুমোদিত হয়েছে। সেগুলির মধ্যে ২৪০টিতে ফলক বদলাতে বলা হয়েছে। দাঁইহাটে ৬৪৫টির মধ্যে ২৩০টি, গুসকরায় ১৪৯৩টির মধ্যে ৩৮০টি, কালনাতে ৭৬৯টির মধ্যে ২০০টি, কাটোয়ায় ১৬৯৫টির মধ্যে ৪৩০টি, মেমারিতে ৩৮৮টির মধ্যে ১০০টিতে ফলক বদলানোর নির্দেশ মানতে বলা হয়েছে।
বিরোধীদের অভিযোগ, পুরসভায় ক্ষমতাসীন শাসক দল নিজেদের পছন্দের লোকজনকে বাড়ি পাইয়ে দিয়েছে। বিরোধীরা ছাড়াও, শাসক দলের পুরপ্রতিনিধিদের একাংশেরও অভিযোগ, বহুতল বাড়ি রয়েছে, এমন অনেকেও পুরসভার সৌজন্যে বাড়ি পেয়েছেন। কেউ নিয়ম ভেঙে দোকান, কেউ গুদাম বা দ্বিতল ভবন গড়েছেন। নতুন করে ফলক দেওয়া বাধ্যতামূলক হওয়ায় তাঁরা ধরা পড়ার ভয় পাচ্ছেন বলে দাবি বিরোধীদের। দাঁইহাটের পুরপ্রধান প্রদীপ রায়, মেমারির উপ-পুরপ্রধান সুপ্রিয় সামন্তরা বলেন, “আগের দেওয়াল মুছে বর্তমান নির্দেশ মেনে লেখার কাজ শুরু হয়েছে।” একই দাবি বর্ধমান, কাটোয়া, কালনা ও গুসকরার পুরকর্তাদের।