বেনাচিতিতে জনতার ক্ষোভের মুখে পুলিশকর্মী। সোমবার। নিজস্ব চিত্র
পুলিশের বিরুদ্ধে তোলাবাজির অভিযোগকে কেন্দ্র করে ধুন্ধুমার বাধল বেনাচিতিতে। অভিযোগ, তোলা নিয়ে বিবাদের জেরে একটি গাড়ির চালককে মারধর করে পুলিশ। পুলিশকর্মী ও সিভিক ভলান্টিয়ারদের ঘেরাও করে পাল্টা মারধরের অভিযোগ উঠেছে ব্যবসায়ীদের একাংশের বিরুদ্ধে। পুলিশি জুলুমের অভিযোগ তুলে পথ অবরোধও করেন ব্যবসায়ীরা। পুলিশ কমিশনারেটের ডিসি (পূর্ব) অভিষেক মোদী জানান, গোটা ঘটনার তদন্ত হবে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, পূর্ব মেদিনীপুরের ময়না থেকে সোমবার ভোরে একটি মাছ বোঝাই গাড়ি বেনাচিতি বাজারে আসছিল। গাড়িটির চালক সুধাংশু রাউত অভিযোগ করেন, ২ নম্বর জাতীয় সড়কে দুর্গাপুরের বিধাননগরের কাছে গাড়ি আটকায় নিউ টাউনশিপ থানার একটি গাড়ি। তাঁর কাছে মোটা টাকা দাবি করেন পুলিশকর্মীরা। চাহিদামতো টাকা দিতে পারবেন না জানিয়ে তিনি গাড়ি নিয়ে এগিয়ে আসেন বলে সুধাংশুবাবুর দাবি।
ওই মাছের গাড়ির খালাসি ভীম মণ্ডলের দাবি, পুলিশের গাড়িটি তাঁদের ধাওয়া করে। বেনাচিতি বাজারের কাছে এসে তাঁদের ধরে ফেলে পুলিশ। তার পরে চালক সুধাংশুবাবুকে ও তাঁকে পুলিশকর্মী এবং সিভিক ভলান্টিয়ারেরা বেধড়ক মারধর করেন বলে ভীমের অভিযোগ। তাঁর আরও অভিযোগ, ‘‘প্রতিদিনই পুলিশ আমাদের গাড়িগুলির উপরে জুলুম করে। টাকা না দিলেই গাড়ি দাঁড় করিয়ে রেখে দেওয়া হয়। এ দিন আমাদের বেধড়ক মারধর করা হয়।’’
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মাছের গাড়ির চালককে মারধরের খবর পেয়েই বেনাচিতি বাজারের মাছ ব্যবসায়ীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে যান। পুলিশের গাড়িটি ঘিরে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন তাঁরা। তাঁদের প্রশ্ন, নিউ টাউনশিপ পুলিশের গাড়ি দুর্গাপুর থানা এলাকার অন্তর্গত বেনাচিতি বাজারে ধাওয়া করে আসবে কেন? পুলিশকর্মী ও সিভিক ভলান্টিয়ারদের আটকে রেখে বিক্ষোভ শুরু হয়। ক্ষুব্ধ জনতা তাঁদের কিল-চড়-ঘুষি মারতে থাকে। তাঁদের কাছে থাকা টাকাপয়সা কেড়ে ফেলে দেওয়া হয় রাস্তায়।
ওই ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, পুলিশের এমন টাকা আদায়ের ঘটনা নতুন নয়। অনেক দিন ধরেই রাস্তায় গাড়ি আটকে তোলা আদায়ের ঘটনা ঘটছে। এ দিন মোটা টাকা তোলা দিতে অস্বীকার করায় গাড়ি ধাওয়া করে চালককে মারধরের ঘটনায় আগুনে ঘি পড়েছে বলে ব্যবসায়ীদের দাবি। পাপ্পু যাদব নামের এক ব্যবসায়ীর অভিযোগ, ‘‘ভিড়িঙ্গি মোড়ে আনাজ, মাছের গাড়ি থেকে পুলিশ প্রতিদিন তোলা আদায় করে। গাড়ি চালকেরা দিতে অস্বীকার করলেই অত্যাচার চলে।’’
এ দিন গোলমালের পর উত্তেজিত ব্যবসায়ীরা নাচন রোড অবরোধ করেন। তাঁদের দাবি, পুলিশের জুলুম বন্ধ করতে হবে। সেই সঙ্গে গাড়ির চালককে মারধরে অভিযুক্তদের শাস্তির দাবিও তোলেন তাঁরা। ঘটনাস্থলে পৌঁছয় দুর্গাপুর থানার পুলিশ। ঘণ্টাখানেক পরে পুলিশের আশ্বাসে অবরোধ ওঠে। গাড়ির চালক সুধাংশুবাবু দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি। পুলিশের গাড়ির চালক প্রশান্ত মণ্ডলও দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এক সিভিক ভলান্টিয়ার আশিস মাহাতোকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে বলে জানায় পুলিশ।
আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের ডিসি (পূর্ব) অভিষেক মোদী বলেন, ‘‘নিউ টাউনশিপ থানার গাড়ি ওই এলাকায় কেন গেল এবং মাছের গাড়ির চালককে মারধরের অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সেই সঙ্গে পুলিশকর্মীদের মারধরের ঘটনারও তদন্ত হচ্ছে।’’