লুঠপাটের পরে লন্ডভন্ড ঘর। নিজস্ব চিত্র।
বাবার চিৎকারে ঘুম ভেঙে গিয়েছিল ব্যবসায়ীর। কিন্তু ঘর থেকে বেরোতে গিয়ে দেখেন দরজা বাইরে থেকে আটকানো। খানিক বাদেই টের পান ডাকাত পড়েছে।
সোমবার গভীর রাতে এমন ভাবেই মারধর, লুঠপাট চলল সালানপুর থানার রূপনারায়ণপুরের গ্রিন পার্ক এলাকার এক বাড়িতে।
এই নিয়ে সালানপুর থানা এলাকায় গত ছ’মাসে প্রায় ১৪ বার দুষ্কৃতী তাণ্ডবের ঘটনা ঘটল। বাসিন্দাদের অভিযোগ, লাগোয়া ঝাড়খণ্ড সীমান্ত পেরিয়ে দুষ্কৃতীরা এসে বারবার তাণ্ডব চালাচ্ছে এলাকায়। অভিযোগ উঠেছে পুলিশি নিষ্ক্রিয়তারও।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবার রাত ১২টা নাগাদ কাজ সেরে বাড়ি ফেরেন গ্রিন পার্কের ব্যবসায়ী বিজন নাথ নামে এক ব্যক্তি। পাশের ঘরেই ঘুমিয়ে ছিলেন তাঁর বৃদ্ধ বাবা। ভোর চারটে নাগাদ বাবার আচমকা চিৎকারে ঘুম ভেঙে যায় বিজনবাবুর। তবে ঘর থেকে বেরোতে গিয়েই টের পান, দরজা আটকানো। বিজনবাবুর বাবার ঘরেও বাইরে থেকে ছিটকিনি আটকে দেওয়া হয় বলে দাবি। ঘটনার ধাক্কা খানিক সামলে বিজনবাবু ফোন করেন থানায়। পুলিশ এসে বিজনবাবু ও তাঁর বাবাকে উদ্ধার করে। ততক্ষণে অবশ্য বাড়ির এক ও দোতলার বেশ কয়েকটি ঘরে লুঠপাট চালিয়ে চম্পট দিয়েছে দুষ্কৃতীরা। বিজনবাবুর দাবি, ‘‘তিনটি আলমারি ভেঙে যা কিছু ছিল সব নিয়ে গিয়েছে দুষ্কৃতীরা।’’ এলাকায় যুব তৃণমূল নেতা হিসেবে পরিচিত বিজনবাবুর অনুমান, বাড়ির পিছনের দিকে এক তলার গ্রিল কেটে দুষ্কৃতীরা ঘরে ঢোকে। ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। আসানসোল-দর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের এডিসিপি (পশ্চিম) বিশ্বজিৎ মাহাতা বলেন, ‘‘প্রাথমিক তদন্তে মনে হচ্ছে ওই ঘটনায় কোনও পরিচিতের যোগ থাকতে পারে।’’
পুলিশ সূত্রে খবর, গত ছ’মাসে সালানপুর-চিত্তরঞ্জন এলাকায় প্রায় ১৪টি চুরি, ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। যেমন, চলতি বছরের গত ৯ জানুয়ারি রাতে দেন্দুয়ার একটি বন্ধ ইস্পাত কারখানায় ব্যাপক লুঠপাটের ঘটনা ঘটে। ১৬ জানুয়ারি চিত্তরঞ্জন রেল আবাসন এলাকায় একই রাতে পরপর সাতটি তালাবন্ধ আবাসনে লুঠ, ১ ফেব্রুয়ারি লোয়ার কেশিয়ায় মোটরবাইক চুরি, ৪ ফেব্রুয়ারি সামডি রোডের একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক থেকে কয়েক লাখ টাকা লুঠ হয়। এ ছাড়াও সোনার হার, টাকা ছিনতাই, হাসপাতালে এসি মেশিন-সহ বহু মূল্যবান জিনিসপত্র লুঠের মতো ঘটনা ঘটে। এমনকী চলতি মাসের ৭ তারিখ সন্ধ্যা আটটা নাগাদ কেবলস রোডে ফের এক চালের আড়তে বন্দুক দেখিয়ে টাকা লুঠ করা হয়। বাসিন্দাদের অভিযোগ, এই সব কোও ঘটনারই কিনারা করতে পারেনি পুলিশ। যদিও বিশ্বজিৎবাবুর দাবি, আড়তে টাকা লুঠের ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত করা গিয়েছে। দ্রুত তাদের পাকড়াও করা হবে। পুলিশের একটি সূত্রের মতে, এই এলাকায় অধিকাংশ দুষ্কর্মের সঙ্গে যোগ রয়েছে পড়শি রাজ্য ঝাড়খণ্ডের। পুলিশের এক কর্তার মতে, রূপনারায়ণপুর সীমান্ত লাগোয়া ঝাড়খণ্ডের জামতাড়া, মিহিযাম এলাকা থেকে দুস্কৃতীরা অবাধে এলাকায় ঢুকছে। তারপরে দুষ্কর্ম ঘটিয়ে ফের ফিরে যাচ্ছে ঝাড়খণ্ডে। বাসিন্দাদের অভিযোগ, পুলিশি নজরদারির অভাবেই এমনটা ঘটছে।
এলাকার নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে বাসিন্দাদের পাশাপাশি সরব হয়েছে রাজনৈতিক দলগুলিও। তৃণমূলের সালানপুর ব্লক সভাপতি মহম্মদ আরমান বলেন, ‘‘পরপর চুরি ছিনতাইর ঘটনায় বাসিন্দারা ক্ষুব্ধ ও আতঙ্কিত। পুলিশের কাছে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছি।’’ সিপিএমর সালানপুর লোকাল কমিটির সম্পাদক নুরুল ইসলাম বলেন, ‘‘পরপর দুষ্কর্ম আসলে এলাকার বেহাল আইন শৃঙ্খলারই প্রমাণ।’’ বিধানসভা এলাকার যুব নেতা পাপ্পু উপাধ্যায়েরও দাবি, ‘‘আশা করি পুলিশ অবিলম্বে দুস্কৃতীদের ধরবে। তা না হলে আন্দোলনে নামছি।’’