এ পথেই চলে যাতায়াত। বুধবার মঙ্গলকোটে অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়ের তোলা ছবি।
কোথাও খানা-খন্দ, কোথাও অনেকটা জায়গা জুড়ে রাস্তা ভাঙা। সংস্কারের অভাবে দীর্ঘদিন ধরেই বেহাল মঙ্গলকোটের মাঝিগ্রাম থেকে ফুলবাগান যাওয়ার রাস্তা। পথচারীরা প্রাণ হাতে যাতায়াত তো করেনই, নিত্যা ভোগান্তি বাসযাত্রীদেরও। তার সঙ্গে এবড়ো-খেবড়ো রাস্তায় নষ্ট হয় বাসের যন্ত্রাংশ। বাস মালিকদের দাবি, বারবার প্রশাসনের কাছে আর্জি জানিয়ে কাজ না হওয়ায় এ বার অনির্দিষ্ট কালের জন্য ওই রাস্তায় বাস চলাচল বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাঁরা।
স্থানীয় বাসিন্দাদের ক্ষোভ, অতিরিক্ত বালিবোঝাই ট্রাক, ম্যাটাডর চলাচলেই ভেঙে গিয়েছেছে রাস্তা। পাশেই কোঁয়ারপুর ও খেঁড়ুয়ার ঘাট থেকে রাতদিন মিলিয়ে শ’দেড়েক বালিবোঝাই ট্রাক চলাচল করে বলেও তাঁদের অভিযোগ। ফি দিন কাটোয়া থেকে শ্যামবাজার হয়ে নতুনহাটগামী চারটি ও বর্ধমানগামী চারটি বাস চলাচল করে। ওই বাসের উপরেই নির্ভরশীল মাঝিগ্রাম, চাকুলিয়া, বনপাড়া, ইছাপুর, কোঁয়ারপর, মালিয়াড়ার মতো প্রায় তিরিশটি গ্রামের হাজার চল্লিশেক বাসিন্দা। বাস মালিকদের দাবি, মাঝিগ্রাম থেকে ফুলবাগান পর্যন্ত ১৫ কিলোমিটার রাস্তার মধ্যে শ্যামবাজার থেকে ফুলবাগান পর্যন্ত সাত কিলোমিটার রাস্তায় বাস চালানো রীতিমতো ঝুঁকির।বালির গাড়ি চলাচলে রাস্তা এতটাই ভেঙে গিয়েছে যে প্রায়শই বাসের চাকা বসে গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটে বলেও জানান তাঁরা। নতুনহাট রুটের বাসচালক যাদব শেঠ ও বর্ধমানগামী বাসের চালক মুক্ত মাঝির কথায়, ‘‘বেশিরভাগ দিনই বাসের নীচের পাত ভেঙে যাচ্ছে, না হলে খন্দে চাকা ঢুকে যাচ্ছে। যে কোনও সময় বড় দুর্ঘটনার আশঙ্কায় বাস বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছি। আমরা।’’ বাস মালিক তাপস হাজরা, সুভাষ ঘোষ, আনোয়ার শেখরাো বলেন, ‘‘গত শুক্রবার মহকুমাশাসকের কাছে বাস বন্ধের হুঁশিয়ারি দিয়ে রাস্তা সংস্কারের আবেদন জানিয়েছিলাম। প্রশাসনের হেলদোল না থাকায় শেষমেশ বাস বন্ধ করতে হল।’’ তাঁদের প্রশ্ন, ‘‘প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে আর কতদিন চালাব!’’
দিনভর বন্ধ রইল বাস চলাচল। —নিজস্ব চিত্র।
ব্যবসায়ীদের দাবি, বাস চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় লোকজনের আসা-যাওয়া কমছে। তাতে মার খাচ্ছে ব্যবসা। শ্যামবাজার এলাকার মিষ্টি বিক্রেতা রাম রুজ, রাসবিহারী রক্ষিতের কথায়, ‘‘বাস না চললে খদ্দের হচ্ছে না। এভাবে কতদিন চলবে কে জানে।’’ বিপাকে পড়েছেন নিত্যযাত্রীরাও। স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক অমিত চৌধুরী, দিপালী মাঝিরা বলেন, ‘‘বাসে ইষ্টনাম জপতে জপতে যেতে হতো। এ বার অসুবিধা হবে ঠিকই, তবে রাস্তা না সারালে যে কোনও দিন প্রাণে মরবো।’’ বন্ধ হয়ে গিয়েছে ভ্যান চলাচলও। স্থানীয়দের দাবি, মাসখানেক আগেই চল্লিশটি অতিরিক্ত বালিবোঝাই লরি আটকে দিয়েছিলেন শ্যামবাজারবাসীরা। প্রশাসন থেকে প্রায় দিন বালির ঘাট পরিদর্শন করে ট্রাক থেকে জরিমানাও করা হয়। তাতেও বালি চুরি থামছেনা। মহকুমাশাসক খুরশিদ আলি কাদরি বিষয়টি ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরে জানিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।