চলছে উদ্ধারকাজ। রবিবার মাইথনে। নিজস্ব চিত্র।
নদে তলিয়ে গিয়ে মৃত্যু হল এক মাঝির। পশ্চিম বর্ধমানের সালানপুর থানার মাইথনের বরাকর নদের ঘটনা। প্রায় ১৭ ঘণ্টা খোঁজ চালানোর পরে রবিবার সকালে সুলেমান আনসারি (৬০) নামে ওই মাঝির দেহ উদ্ধার করা হয়। পুলিশ জানায়, সুলেমান শনিবার বিকেলে বরাকরে তলিয়ে যান। পুলিশ স্থানীয় সূত্রে জেনেছে, সম্ভবত সুলেমান মাঝ-নদে ভেসে যাওয়া তাঁর নৌকাটিকে পাড়ে টেনে আনার জন্য জলে ঝাঁপ দেন। পুলিশ দেহটি আসানসোল জেলা হাসপাতালে ময়না-তদন্তের জন্য পাঠায়।
ডিভিসি-র মাইথন জলাধার লাগোয়া বরাকর নদে পর্যটকদের নৌকা-ভ্রমণ করাতেন স্থানীয় বাথানবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা সুলেমান। শনিবারও তিনি একটি দলকে নৌকা-ভ্রমণ করিয়ে আনন্দ দ্বীপে নিয়ে যান। সেখানে ওই দলটি ‘শ্যুটিং’ করতে গিয়েছিল। নৌকাটি পাড়ে রেখে গাছের তলায় বসে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। তাঁর এক সহকর্মী লোকমান আনসারি জানান, সম্ভবত নৌকাটি নোঙর করতে ভুলে যান। আচমকা দমকা হাওয়ায় নৌকটি অনেক দূরে ভেসে যায়। তা দেখে নৌকা আনার জন্য জলে ঝাঁপ দেন সুলেমান। লোকমান বলেন, “নৌকার কাছেও পৌঁছেও গিয়েছিলেন উনি। তার পরে হঠাৎ দেখি জলে হাবুডুবু খাচ্ছেন। আমি চিৎকার করে বাকিদের ডেকে তাঁকে উদ্ধারের জন্য জলে ঝাঁপাই। কিন্তু কাছে যাওয়ার আগেই উনি তলিয়ে যান।” শনিবার বিকেল সাড়ে ৪টে নাগাদ ঘটনাটি ঘটে।
ঘটনার পরে, মাঝিরা এক জোট হয়ে, সুলেমানের খোঁজ চালাতে শুরু করেন। খবর পেয়ে পুলিশও ঘটনাস্থলে আসে। কিন্তু প্রবল বৃষ্টি শুরু হওয়ায় উদ্ধারকাজ ব্যাহত হয়। রবিবার ভোরের আলো ফোটার পরে ফের উদ্ধারকাজ শুরু হয়। আসানসোল থেকে বিপর্যয় ব্যবস্থাপন দফতরের দল ঘটনাস্থলে আসে। সকাল ১০টা নাগাদ দেহটি উদ্ধার করা হয়।
স্থানীয়রা জানান, পেশায় মাঝি হলেও, সুলেমানের নেশা ছিল বৃক্ষরোপণ। মাইথনের থার্ড ডাইক এলাকার আশপাশে দেন্দুয়া পঞ্চায়েতের পতিত জমিতে তিনি নিয়মিত বৃক্ষরোপণ করে একটি কৃত্রিম বনাঞ্চল গড়ে তোলন। ‘মাইথন বোটম্যান কো-অপারেটিভ সোসাইটির’ তরফে বসির আনসারি বলেন, “সুলেমান আমাদের সংগঠনের সদস্য ছিলেন। তাঁর তৈরি করা ওই বনাঞ্চলে বহু শ্যুটিং হয়েছে। সেটি দেখার জন্যও বছরভর বহু পর্যটক ভিড় করেন।”
প্রায় তিন দশক ধরে নৌকা-ভ্রমণ করাতেন সুলেমান। তাঁর মৃত্যুর ঘটনায় শোকপ্রকাশ করেন এলাকার জেলা পরিষদ সদস্য তথা কর্মাধ্যক্ষ (কুটির শিল্প) মহম্মদ আরমান। তিনি বলেন, “সিদাবাড়ি, বাথানবাড়ি, সবুজদ্বীপ, আনন্দদ্বীপ লাগোয়া অঞ্চলে যে কোনও উন্নয়নমূলক কাজে এগিয়ে আসতেন সুলেমান।” নৌকা চালকদের জন্য সরকারি সুযোগ-সুবিধা বা অনুদান আদায়ের নানা কর্মসূচিতেও তিনি সামনের সারিতে থাকতেন বলে জানান কো-অপারেটিভেরসদস্যদের একাংশ।