কোথাও প্রশ্নপত্র কিনে আবার কোথাও স্কুলের বোর্ডে প্রশ্ন লিখে পড়ুয়াদের মূল্যায়ন করা হয়। এটাই ছিল প্রাথমিক ও জুনিয়র বেসিক স্কুলের প্রথা। এ বার এই প্রথা ভেঙে এগোতে চাইছে বর্ধমান দক্ষিণ মহকুমা। ঠিক হয়েছে, সামনের মাস থেকেই চক্র বা ব্লক ধরে প্রশ্নপত্র তৈরি করতে হবে। অর্থাৎ, কোনও একটি চক্র বা ব্লকের অধীনে থাকা স্কুলগুলির সমস্ত পড়ুয়া একই প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা দিতে পারে। যার ভিত্তিতে পড়ুয়ার মানের সঙ্গে স্কুলের ভূমিকাও উঠে আসবে।
মহকুমাশাসক (বর্ধমান দক্ষিণ) অনির্বাণ কোলে বলেন, ‘‘এই পদ্ধতিতে এগোলে পড়ুয়াদের মধ্যে প্রতিযোগিতা মূলক মনোভাব তৈরি হবে। স্কুলগুলির মধ্যেও পড়ার মান বাড়ানোর তাগিদ থাকবে।’’ ইতিমধ্যেই ওই মহকুমার ১২টি চক্রের শিক্ষকদের নিয়ে কী ভাবে প্রশ্ন করা উচিত, পড়ুয়াদের সামাজিক জ্ঞান বৃদ্ধি কী ভাবে বাড়াতে হবে, সে নিয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। জামালপুরের এক শিক্ষকের কথায়, “আমরা বোর্ডে প্রশ্ন লিখে পড়ুয়াদের মূল্যায়ন করে থাকি।” আবার মেমারি শহরের এক শিক্ষিকার দাবি, তাঁরা বাইরে থেকে প্রশ্ন কিনে নিয়ে এসে পড়ুয়াদের দেন। সেই প্রশ্নের উত্তরপত্র দেখে তাঁরা পড়ুয়াদের মূল্যায়ন করেন। সোমবার জেলাশাসক দফতরে মহকুমা পর্যায়ে একটি বৈঠক হয়। সেখানে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি অচিন্ত্য চক্রবর্তী জানিয়েছেন, পূর্ব বর্ধমান জেলা জুড়ে এই পদ্ধতি প্রয়োগ নিয়ে তাঁরাও চিন্তাভাবনা করবেন।
দক্ষিণ মহকুমা প্রশাসন মনে করছে, বাইরের প্রশ্ন বা বোর্ডে প্রশ্ন লিখে পরীক্ষায় পড়ুয়াদের তো বটেই, স্কুলের মানও বাড়ছে না। সঠিক মানের প্রশ্নও তৈরি করতে পারছে না শিক্ষকেরা। এই সমস্যা মেটাতেই মহকুমা প্রশাসন একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করেছে। কমিটি প্রতিটি চক্রের স্কুলের শিক্ষকদের কাছ থেকে প্রশ্ন নিয়ে প্রশ্নপত্র তৈরি করবে। প্রতি চক্রের জন্য আলাদা আলাদা প্রশ্নপত্রের সেট তৈরি করা হবে। প্রতিটি চক্রের বা ব্লকের প্রাথমিক ও জুনিয়র বেসিক স্কুলগুলির পড়ুয়ারা তাদের জন্য নির্ধারিত প্রশ্নের সেট দেখে পরীক্ষা দেবে। ওই বিশেষজ্ঞ কমিটির সদস্য বিপুল সন্ন্যাসী, সৈকত রাউতরা বলেন, “এর ফলে সব স্কুলে একই পর্যায়ে মূল্যায়ন করা সম্ভব হবে। শিক্ষকদের মধ্যেও কী ভাবে প্রশ্ন করা উচিত, সেই ধারণা চলে এসেছে।” মহকুমাশাসক বলেন, “অগস্ট থেকেই সব চক্র বা ব্লকে এই পদ্ধতিতে পরীক্ষা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। তাতে পড়ুয়াদের মূল্যায়ন হবে, পাশপাশি বিভিন্ন চক্র পরস্পরের প্রশ্ন নিয়েও আদানপ্রদান করার সুযোগ পাবে।”