রোগীর প্রয়োজন রক্তের কোনও নির্দিষ্ট উপাদান। রক্ত পৃথকীকরণের ব্যবস্থা থাকলে উপাদান আলাদা করে প্রয়োজন অনুযায়ী তা রোগীদের দেওয়া সম্ভব। কিন্তু দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালে সেই পদ্ধতি চালু না হওয়ায় রোগীকে দিতে হয় পুরো রক্তই। একে রক্তের আকাল, তার উপরে এই ব্যবস্থা না থাকায় সঙ্কট বেশি হচ্ছে বলে অভিযোগ। যত দ্রুত সম্ভব ব্লাড ব্যাঙ্কে রক্তের উপাদান পৃথকীকরণ যন্ত্র চালুর দাবি জানিয়েছে রক্তদাতা সংগঠন ‘দুর্গাপুর মহকুমা ভলান্টারি ব্লাড ডোনার্স ফোরাম’।
শিল্পাঞ্চলে রক্তদান শিবির আয়োজন করা নানা সংগঠনের তরফে জানানো হয়, রক্তদানের হার কমছে। গরমে রক্ত সংগ্রহের পরিমাণ ঠেকে আরও তলানিতে। ব্লাড ব্যাঙ্কে রক্ত পৃথকীকরণের ব্যবস্থা থাকলে খানিকটা নিস্তার মিলত বলে তাদের দাবি। চিকিৎসকেরা জানান, রক্তে লোহিতকণিকা, শ্বেতকণিকা, অনুচক্রিকা, রক্তরস-সহ নানা উপাদান থাকে। বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় বিভিন্ন উপাদান লাগে। যেমন, রক্তাল্পতা, থ্যালাসেমিয়ার মতো রোগের ক্ষেত্রে লোহিতকণিকা দরকার। আবার হিমোফিলিয়া, লিভার, কিডনির নানা সমস্যার ক্ষেত্রে রক্তরসের প্রয়োজন হয়। ডেঙ্গি, কেমোথেরাপি, রেডিওথেরাপির জন্য দরকার হয় অনুচক্রিকা।
ডাক্তারেরা জানান, অধিকাংশ রোগেই রোগীর সম্পূর্ণ রক্তের প্রয়োজন হয় না। রক্তের কোনও একটি উপাদান লাগে। অর্থাৎ, রক্তের অপচয় হয়। আবার দরকার না থাকা সত্ত্বেও পুরো রক্ত দিলে অনেক সময়ে রোগীদের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা থাকে। একমাত্র সমাধান, ব্লাড ব্যাঙ্কে রক্তের উপাদান পৃথকীকরণ ব্যবস্থা। সেক্ষেত্রে এক ইউনিট রক্ত তিন-চার জন রোগীকে দেওয়া যেতে পারে।
ওই রক্তদাতা সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক কবি ঘোষ জানান, প্রায় সাড়ে তিনশো শয্যার দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালে গড়ে প্রতিদিন ৩০ ইউনিট রক্ত লাগে। গড়ে ২০ ইউনিট ব্লাড ব্যাঙ্ক থেকে দেওয়া যায়। বাকিদের ক্ষেত্রে রক্তদাতা জোগাড় করে সমস্যা মেটাতে হয়। যা সময়সাপেক্ষ হওয়ায় অনেক রোগীর জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায়। রক্তের উপাদান পৃথকীকরণ ব্যবস্থা চালু করা গেলে এক ইউনিট রক্তে এক জনের জায়গায় অন্তত তিন জন রোগীর প্রয়োজন মেটে।
গরমে রক্ত সংগ্রহের পরিমাণ স্বাভাবিক রাখতে হাসপাতালে ৩ ও ৪ ফেব্রুয়ারি বিশেষ রক্তদান শিবিরের আয়োজন করা হয়েছে। পুরনো ও নিয়মিত রক্তদাতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করার পাশাপাশি নতুনদের বেশি করে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে বলে জানান কবিবাবু। তিনি বলেন, ‘‘রক্তের চাহিদা দিন-দিন বাড়ছে। তাই উপাদান পৃথকীকরণের ব্যবস্থা চালু না করা গেলে রক্তের চাহিদা মেটানো মুশকিল হয়ে যাবে। দ্রুত তা চালু করার জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত আবেদন করেছি।’’ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানান, এই যন্ত্র চালুর দাবি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।