বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ

রক্তরস বিক্রি করে ‘বাঁচবে’ ব্লাড ব্যাঙ্ক

সংগৃহীত অতিরিক্ত প্লাজমা বা রক্তরস বিক্রি করে ব্লাড ব্যাঙ্কের হাল ফেরাতে চলেছে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল। এ বছরের শুরুতেই একটি বহুজাতিক সংস্থাকে ব্লাড ব্যাঙ্কে জমে থাকা রক্তরস বিক্রি করেছিল বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল।

Advertisement

সৌমেন দত্ত

বর্ধমান শেষ আপডেট: ০৫ মে ২০১৬ ০২:৫৪
Share:

সংগৃহীত অতিরিক্ত প্লাজমা বা রক্তরস বিক্রি করে ব্লাড ব্যাঙ্কের হাল ফেরাতে চলেছে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল। এ বছরের শুরুতেই একটি বহুজাতিক সংস্থাকে ব্লাড ব্যাঙ্কে জমে থাকা রক্তরস বিক্রি করেছিল বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। সম্প্রতি রোগী কল্যাণ সমিতির অ্যাকাউন্টে রক্তরস বিক্রি বাবদ পাঁচ লক্ষেরও বেশি টাকা জমা হয়েছে। বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের সুপার উৎপল দাঁ বলেন, “ওই টাকা ব্লাড ব্যাঙ্কের পরিকাঠামোগত উন্নয়নে খরচ করা হবে।”

Advertisement

স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর দু’য়েক আগেই সরকারি ব্লাড ব্যাঙ্কে সংগৃহীত অতিরিক্ত প্লাজমা বিক্রির জন্য রাজ্য সরকার একটি বহুজাতিক সংস্থার সঙ্গে চুক্তি করেছিল। ঠিক হয়েছিল, প্রতি লিটার প্লাজমার জন্য ওই সংস্থা স্বাস্থ্য দফতরকে ১৪৫০ টাকা করে দেবে, যা ব্লাড ব্যাঙ্কের পরিকাঠামোগত উন্নয়নে খরচ হবে। কলকাতার বিভিন্ন ব্লাড ব্যাঙ্ক আট মাস আগে থেকেই ওই প্লাজমা বিক্রি করতে শুরু করে দিয়েছে। কলকাতার বাইরে এ বছরের শুরুতে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ রক্তের উপাদান পৃথক করে প্লাজমা বিক্রি করেছে। জানা গিয়েছে, সম্প্রতি বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজও প্লাজমা বিক্রির পথে হেঁটেছে।

বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, বছর চারেক আগে প্লাজমা বিক্রি বা প্লাজমার বিনিময়ে রক্তের ব্যাগ, ‘ইমিউনোগ্লোবিউলিন’ বা ‘অ্যালবুমিনে’র মতো উপাদান সংগ্রহ করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়। সেই সময় বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন ওঠে, স্বেচ্ছায় দান করা রক্তের উপাদান পৃথক করার পরে উদ্বৃত্ত রক্তরস বিক্রি করতে গিয়ে আইনি জটিলতা দেখা দেবে না তো? উত্তর খুঁজতে বছর দু’য়েক আগে দিল্লিতে জাতীয় রক্তসঞ্চালন পর্ষদ এবং কেন্দ্র সরকারের বিশেষজ্ঞ কমিটির সঙ্গে বৈঠক করেন রাজ্য এড্‌স নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ সংস্থা বা স্যাক্স। আলাচনায় দেখা যায়, বেশির ভাগ ব্লাড ব্যাঙ্কেই প্লাজমা বা রক্তরস উদ্বৃত্ত হয়। এক বছরের বেশি সময় পড়ে থেকে মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গেলে তার বেশির ভাগই ফেলা যায়। ঠিক হয়, ওই উদ্বৃত্ত প্লাজমা বিক্রি করে সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল বা ব্লাড ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ কিছু আয় করতে পারে।

Advertisement

বছর খানেক আগে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রক্তের উপাদান পৃথক করা শুরু হয়। প্রথম দিকে মোট সংগৃহীত রক্তের ১৮ শতাংশ পৃথকীকরণ করতে পারত মেডিক্যাল কলেজের ব্লাড ব্যাঙ্ক। এখন ৩৭ শতাংশ পর্যন্ত পৃথকীকরণ করা সম্ভব হচ্ছে। যদিও জাতীয় এড্‌স নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বা ন্যাকোর নির্দেশ হচ্ছে, সংগৃহীত রক্তের ৮০ শতাংশ রক্তের উপাদান পৃথকীকরণ করতে পারলে রক্তের জন্য হাহাকার করতে হবে না। কিন্তু পরিকাঠামোর অভাবে নির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রাতে পৌঁছাতে পারছে না ব্লাড ব্যাঙ্কগুলি।

বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, মানুষের শরীর থেকে নেওয়া এক ইউনিট রক্তে লোহিত রক্তকণিকা (আরবিসি), শ্বেত রক্তকণিকা (ডব্লুবিসি), রক্তরস (প্লাজামা), অনুচক্রিকার (প্লেটলেট) মতো অনেক উপাদান পাওয়া যায়। বিভিন্ন উপাদান বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় লাগে। যেমন, থ্যালাসেমিয়া, রক্তাল্পতা বা অ্যাপ্লাস্টিক অ্যানিমিয়ায় লোহিত কণিকা দরকার। আবার রক্ত জমাট বাধে না এমন রোগের ক্ষেত্রে অর্থাৎ আগুনে পোড়া, লিভারের রোগ, সর্পাঘাত বা কিডনি সমস্যার ক্ষেত্রে রক্তরস দেওয়া হয়। ডেঙ্গি, থাম্বোসাইটোপিমা, কেমোথেরাপি, রেডিও থেরাপির জন্য আবার অনুচক্রিকা দেওয়া হয়। চিকিৎসকদের মতে, কয়েকটি বিশেষ ক্ষেত্র ছাড়া একজন রোগীর কখনওই পুরো রক্তের প্রয়োজন হয় না। রোগীকে পুরো রক্ত দেওয়ার অর্থ, রক্তের অপচয়। তার চেয়েও বড় কথা, পুরো রক্ত দিলে অনেক সময় রোগীদের নানারকম পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে।

বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্কের কর্তা সুদীপ ধীবরের মতে, “লোহিত রক্তকণিকা, প্লেটলেট বা অনুচক্রিকার চাহিদা বিপুল। তা বেশি দিন রাখাও যায় না। কিন্তু প্লাজমা বা রক্তরস চাহিদা তুলনামূলক কম। এবং এক বছরের উপর তা রাখা যায়। উদ্বৃত্ত রক্তরস বা প্লাজমা ফেলে দেওয়ার থেকে বিক্রি করা সঠিক সিদ্ধান্ত।” জানা গিয়েছে, ওই বহুজাতিক সংস্থা প্লাজমা থেকে ইমিউনোগ্লোবিউলিন ও অ্যালবুমিন তৈরি করছে। অ্যালবুমিন থেকে যকৃৎ ও কিডনি রোগ, প্রোটিন ঘাটতির ওষুধ হয়। আর ইমিউনোগ্লোবিন দরকার হয় রক্ত ও স্নায়ুর জটিল রোগে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement