Purbasthali

মনোবল বাড়ল, দাবি কর্মীদের

ছিলেন শুভেন্দুবাবুর সঙ্গেই মেদিনীপুরের সভায় বিজেপিতে যোগ দেওয়া কালনার বিধায়ক বিশ্বজিৎ কুণ্ডু।

Advertisement

কেদারনাথ ভট্টাচার্য

পূর্বস্থলী শেষ আপডেট: ২৩ ডিসেম্বর ২০২০ ০২:২৮
Share:

পূর্বস্থলীর ছাতনির সভায় নেতারা। নিজস্ব চিত্র।

কথা ছিল, দলের রাজ্য সভাপতি সভা করবেন। কিন্তু বেলা গড়াতেই শোনা যায়, সভায় আসবেন শুভেন্দু অধিকারী। দুপুর থেকে এসটিকেকে রোড ধরে বিজেপির পতাকা বেঁধে ছুটতে দেখা যায় ম্যাটাডর, মোটরভ্যান, মোটরবাইক। বিকেল ৩টে ২৫ মিনিট নাগাদ শুভেন্দু অধিকারী যখন এসে পৌঁছলেন, তখন ভরে গিয়েছে পূর্ব বর্ধমানের পূর্বস্থলীর ছাতনি ফুটবল মাঠ। দিন তিনেক আগে অমিত শাহের সভায় বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পরে, এ দিনই প্রথম কোনও জনসভায় হাজির হলেন তিনি। তাঁকে মঞ্চে দেখেই উল্লাসে ফেটে পড়লেন কর্মী-সমর্থকেরা।

Advertisement

সভা শুরুর কথা ছিল দুপুর ১টা নাগাদ। তবে ভিড় বাড়তে শুরু করে দুপুর ২টো থেকে। নানা বাদ্যযন্ত্র, পতাকা নিয়ে সভাস্থলে ঢুকতে থাকেন অনেক কর্মী। বক্তব্য শুভেন্দুবাবুরাখতে উঠেই বলেন, ‘‘রাজ্য সভাপতি সোমবার ফোন করে জানান, কেতুগ্রামে ও পূর্বস্থলীতে সভা রয়েছে। কেতুগ্রামে সকাল ১১টা ও পূর্বস্থলীতে বিকেল ৩টে নাগাদ। আমি বলি, প্রথমটায় আমাকে মাফ করবেন। দ্বিতীয়টায় যাচ্ছি।’’ সভামঞ্চে ছিলেন দলের নেতা কৃষ্ণ ঘোষ, সুবীর নাগ, রাজীব ভৌমিকেরা। ছিলেন শুভেন্দুবাবুর সঙ্গেই মেদিনীপুরের সভায় বিজেপিতে যোগ দেওয়া কালনার বিধায়ক বিশ্বজিৎ কুণ্ডু। দলের সাধারণ সদস্য হিসেবে নেতৃত্ব যেখানে যেতে বলবে, তিনি সেখানেই যাবেন জানিয়ে শুভেন্দুবাবু বলেন, ‘‘কৃষ্ণ ঘোষ আমাকে বলছেন, কাল রাতে জেনেছি, তাই পোস্টার-ব্যানারে আপনার নাম দিতে পারিনি। আমি বলেছি, কিচ্ছু লাগবে না।’’ রাজ্যে বেকারত্ব, কৃষকদের কেন্দ্রীয় অনুদান না পাওয়ার অভিযোগে সরব হন তিনি। তাঁর দাবি, ‘‘তৃণমূলকে বিসর্জন দিতে হবে, যা করার করব।’’

তৃণমূলের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তোলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষও। তাঁর কথায়, ‘‘দুর্নীতি যদি দেখতে চান, পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি, পুরসভায় গিয়ে দেখে আসুন, উন্নয়ন কেমন হয়েছে। যার বাড়িতে হাঁড়ি চড়ত না, সে বিরিয়ানি খাচ্ছে। আগে যে সাইকেল চড়ত, সে মোটরবাইক চালাচ্ছে। যে বিড়ি খেত, সে সিগারেট টানছে।’’ কৃষিপ্রধান এলাকায় আয়োজিত সভায় চাষিদের দুর্দশা নিয়েও সরব হন তিনি। তাঁর অভিযোগ, ‘‘এই সরকার চাষিদের কথা ভাবে না। এ বার যে আলু ৫০ টাকায় খেতে হয়েছে, তা চাষিকে বিক্রি করতে হয়েছিল পাঁচ টাকায়। আবার ৯০ টাকায় বীজ কিনে আলু চাষ করে তা পাঁচ টাকায় বিক্রি করতে হবে। পেঁয়াজ চাষিরাও দুর্দশায় পড়েছেন।’’

Advertisement

শুভেন্দুবাবুর বক্তৃতায় তাঁদের মনোবল বেড়েছে, দাবি সভা ফেরত বহু বিজেপি কর্মীর। শুভজিৎ ঘোষ, গোপাল পণ্ডিতদের কথায়, ‘‘যে ভাবে উনি দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ডাক দিয়েছেন, তাতে আমাদের সাহস বাড়ল।’’ দলের রাজ্য কমিটির সদস্য রাজীববাবুর দাবি, ‘‘প্রায় কুড়ি হাজার মানুষ এসেছিলেন সভায়। এই সভা জানিয়ে দিল, আগামী দিনে পূর্বস্থলীর মানুষ কী চাইছেন।’’ পুলিশের অবশ্য হিসেব, হাজার আটেকের সমাগম হয়েছিল।

তৃণমূলের দাবি, বিজেপির সভায় লোক হয়েছিল মাত্র চার হাজার। পূর্বস্থলী উত্তর কেন্দ্রের তৃণমূল নেতা তপন চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘এলাকার হাজার দু’য়েক, আর বাইরের দু’হাজার লোক নিয়ে সভা করেছে বিজেপি। এ নিয়ে আমাদের মাথাব্যথা নেই। বৃহস্পতিবার বিশ্বরম্ভা এলাকায় আমরা সভা করব। কুণাল ঘোষ, দেবাংশু ভট্টাচার্য ও সদ্য দলে যোগ দেওয়া সুজাতা মণ্ডল খাঁ থাকবেন। এলাকার লোকেই মাঠ উপচে যাবে সে দিন।’’ তৃণমূলের অন্যতম রাজ্য মুখপাত্র দেবু টুডুর কটাক্ষ, ‘‘মঞ্চে সিংহাসনে দিলীপ ঘোষ ও সাধারণ চেয়ারে শুভেন্দু অধিকারী বসে রয়েছেন দেখলাম। এই ছবিই বলে দিচ্ছে, তৃণমূল ছেড়ে যাওয়া লোকজন বিজেপিতে কী জায়গা পাচ্ছেন। বিজেপির এইধরনের সভা বা নেতাদের কথাবার্তায় এলাকায় কোনও প্রভাব পড়বে না।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement