সিটুর ধর্নায় বিজেপি বিধায়ক। —নিজস্ব চিত্র।
সিটুর ধর্নায় হাজির হয়ে বন্ধ কারখানা খোলার দাবিতে সরব হলেন বিজেপি বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পাল। প্রায় এক মাস বন্ধ থাকা বল্লভপুর কাগজকলের সামনে সিটুর ধর্নায় রবিবার এসে বিক্ষোভে যোগ দেন আসানসোল দক্ষিণের বিধায়ক অগ্নিমিত্রা। সিটুর মঞ্চে বিজেপি বিধায়কের উপস্থিতিতে বাম-বিজেপি আঁতাঁতের অভিযোগে সরব হয়েছে তৃণমূল। অগ্নিমিত্রার যদিও দাবি, তিনি রাজনীতি করতে যাননি। এলাকার বিধায়ক হিসাবে কারখানা চালুর আন্দোলনে সমর্থন জানাতে গিয়েছিলেন।
অগ্নিমিত্রা জানান, কংগ্রেস, সিপিএম, বিজেপি বা তৃণমূল— এলাকায় যে কোনও দলের কর্মী-সমর্থকদেরই তিনি বিধায়ক। ৩০ জানুয়ারি তিনি জানতে পারেন, এই কারখানায় ‘সাসপেনশন অব ওয়ার্ক’ বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে। ২ ফেব্রুয়ারি শ্রম দফতরের কার্যালয়ে ত্রিপাক্ষিক বৈঠকে নিষ্পত্তি হবে বলে শুনেছিলেন। কিন্তু সে দিন মালিকপক্ষের অনুপস্থিতিতে বৈঠক না হওয়ায় সমাধান হয়নি। এর পরেই তিনি এ দিন শ্রমিক আন্দোলনে নৈতিক সমর্থন জানাতে এসেছেন। অগ্নিমিত্রা বলেন, ‘‘মলয় ঘটক
রাজ্যের শ্রমমন্ত্রী। তাঁর ভাই অভিজিৎ ঘটক আইএনটিটিইউসি-র পশ্চিম বর্ধমান জেলা সভাপতি। অথচ কাগজকলের শ্রমিকেরা দু’মাস বেতন পাননি। ৮ মাস পিএফ তহবিলে টাকা জমা দেননি কর্তৃপক্ষ। এ সব থেকেই পরিষ্কার, কর্তৃপক্ষের সঙ্গে শাসক দলের আঁতাঁত আছে।’’ খনি-শিল্পাঞ্চলে নতুন কোনও শিল্প আসেনি, অথচ অনেক কারখানা বন্ধ হয়েছে— এই অভিযোগ তুলে অগ্নিমিত্রা জানান, এই কারখানাটি যাতে বন্ধ না হয়, সেই দাবি জোরালো করতে চান। তাঁর দাবি, কারখানা চালু না হলেও বেতন বন্ধ করা যাবে না।
এ দিনের ঘটনার পরে সিটু অনুমোদিত বল্লভপুর কাগজকল মজদুর ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক হেমন্ত প্রভাকর জানান, তাঁদের নেতৃত্বে আন্দোলন চললেও, কারখানার কর্মীদের মধ্যে সব দলেরই সমর্থক আছেন। বিজেপি সমর্থক কোনও কর্মী বিধায়ককে ডেকে থাকতে পারেন। তাঁর বক্তব্য, ‘‘সিটুর পশ্চিম বর্ধমান জেলা সম্পাদক বংশগোপাল চৌধুরীর নেতৃত্বে কারখানা চালু করা-সহ নানা দাবিতে আন্দোলন হচ্ছে। রাজ্য সরকারের কোনও প্রতিনিধি আসেননি। এ দিন এলাকার বিধায়ক এলে সৌজন্য দেখিয়ে তাঁকে স্বাগত জানানো হয়েছে।’’ এ নিয়ে কোনও রাজনীতি চান না বলেও জানান হেমন্ত।
অগ্নিমিত্রার অভিযোগ নিয়ে অভিজিৎ ঘটকের পাল্টা দাবি, পানাগড় শিল্পতালুকে একের পর এক কারখানা হচ্ছে। এই কাগজকল চালু করতে ৬ ফেব্রুয়ারি শ্রম দফতরের আসানসোল মহকুমা কার্যালয়ে ত্রিপাক্ষিক বৈঠক হবে। অভিজিৎ বলেন, ‘‘ভোটের আগে প্রচারের আলোয় থাকার জন্য নাটক করছেন অগ্নিমিত্রা। তা না হলে তিনি কারখানা কর্তৃপক্ষের কাছে গিয়ে চালু করার চেষ্টা করতেন।’’
তৃণমূলের অন্যতম রাজ্য সম্পাদক ভি শিবদাসনের দাবি, আসানসোল কেন্দ্রে ২০১৪ ও ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে বামেরাই বিজেপিকে জিতিয়ে দিয়েছিল। ২০২২ সালের উপনির্বাচনে বামেরা নিজেদের ভোট ধরে রাখার চেষ্টা করতেই বিজেপি হেরে যায়। তাঁর অভিযোগ, ‘‘আসন্ন লোকসভা ভোটে বামেরা আবার বিজেপিকে জিতিয়ে দেওয়ার চেষ্টা শুরু করেছে।’’ সিপিএম নেতা বংশগোপাল চৌধুরীর পাল্টা দাবি, ‘‘২০১৪-র ভোটে তো দলের অন্তর্দ্বন্দ্বেই তৃণমূল হেরেছিল বলে ওদের নিজস্ব সমীক্ষাতেই উঠে এসেছিল। বিজেপির সঙ্গে সমঝোতার অভিযোগ ভিত্তিহীন।’’